বাগেরহাটের ফকিরহাটে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিটিভি’র কর্মকর্তার প্রভাব খাটিয়ে তার পিতা ও ভাইয়েরা উপজেলার উত্তরপাড়া দোলখোলা পূজা মন্দিরের জায়গায় দখল করে নিয়েছে। এতে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে মন্দিরের পূজার্চনা। প্রতিকার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির কমিটির অভিযোগ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের পাগলা শ্যামনগর গ্রামের উত্তরপাড়া দোলখোলা পুজা মন্দিরে যুগ যুগ ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ উৎসব দূর্গা পুজাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান উৎযাপিত হয়ে আসছে। সার্বজনীন এ মন্দিরে পুজার্চনা স্বার্থে শচিন্দ্রনাথ হুই-এর ওয়ারেশ সূত্রে সুধীর মজুমদারের তিন ছেলে ২০০৭ সালে নিজেদের সম্পত্তি থেকে চৌহদ্দি উল্লেখ পূর্বক উত্তরপাড়া মৌজার ৪৬৩ দাগের ৪শতাংশ জমি মন্দিরের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেয়। শচীন্দ্রনাথ হুই জীবদ্দশায় ১৯৭৪ সালে তার শরিকানা জমি থেকে হোচলা মৌজার ১৪৮৩ ও ১৪৮৫ দাগ থেকে ১৯শতক এবং উত্তরপাড়া মৌজার ৪৬৩ দাগের ৭শতকসহ মোট ৩৬শতক জমি একই এলাকার মৃতঃ হাতেম আলী খা’র পুত্র সিদ্দিক খা, আক্কাস আলী খা ও মুনসুর আলী খার কাছে বিক্রি করেন। সিদ্দিক খা গং দীর্ঘদিন ধরে তাদের ক্রয়কৃত জমি হোচলা মৌজার ১৪৮৩ ও ১৪৮৫ দাগ থেকেই ৩৬শতক জমি ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি সিদ্দিক খা তার ছেলে বিটিভি’র কর্মকর্তা নাসির খানের প্রভাবে অপর ছেলে আব্দুলাহ খাসহ সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মন্দিরের জমিতে প্রচীর নির্মাণ করতে আসলে স্থানীয়দের বাধার মুখে তা পন্ড হয়ে যায়। পরে এ বিষয়ে মন্দিরের জমি দাতা নিখিল মজুমদার বিটিভি’র কর্মকর্তা নাসির খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। কিন্ত তার পরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে মন্দির কমিটি বাহিরদিয়া ও ফকিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে এবং ৮ ফেব্রুয়ারী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ দিল্ওে পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অন্যন্যপায় হয়ে এ বিষয়ে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারী বাগেরহাটের বিজ্ঞ অতিরিক্ত নির্বাহী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে আদালত জমির উপর নির্মান কাজ বন্দের নির্দেশ দেয়। একই সাথে স্থানীয় তহশীল অফিসকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে পুনরায় প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ১২ফেব্রয়ারী থেকে পর্যায়ক্রমে মন্দিরের জমির উপর দিয়ে প্রচীন নির্মাণ করে দখল করে নেয় বিটিভি’র কর্মকর্তা নাসির খানের পিতা সিদ্দিক খা ও তার ছেলে আবদুল্লাহ খা। এ ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই মন্দিরে পূজাার্চনা বন্ধ হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই মন্দিও কমিটির সভাপতি সুশীল আচার্য্য বিভিন্ন দপ্তওে অভিযোগ করে মন্দিরের জমি দখলমুক্ত করা ও দোষীদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে, আদালতের নির্দেশে গত সোমবার ফকিরহাট উপ-সহকারী ভূমি কর্মকতা মোঃ মনিরুজ্জামান ও উপজেলা সার্ভেয়ার আহসানুর রহমান সরেজমিনে বিষয়টির তদন্ত করেছেন। এ সময় তারা সাংবাদিকদের জানান, মন্দিরের প্রায় দেড় শতাংশ জমির উপর প্রাচীর দিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। এ বিষয়ে তারা প্রতিবেদন দাখিল করবেন। পরে ফকিরহাট উপজেলা পুজা উৎযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অনতিবিলম্বে দখলবাজদের মন্দিরের জমি থেকে উচ্ছেদের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তিনি মন্দির কমিটির অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ফকিরহাট থানার ওসিকে বলেছিলেন। কিন্তু কেন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি তা বোধগম্য নয়। এ বিষয়ে বিটিভি’র কর্মকর্তা নাসির খানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।