বর্তমান সময়ে মানসিক রোগ একটি ভয়াবহ ব্যাধি। মাদনদ্রব্য ধ্বংস করছে জীবনীশক্তি, প্রতক্ষ্য এবং পরোক্ষভাবে জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাস। এ থেকে পরিত্রাণ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর সেবার প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। আঠারো-বিশ বয়সের ছেলে-মেয়েরা অনেক কিছু বুঝতে অক্ষম। এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা সহজেই নেশায় জড়িয়ে যায়। কারণ, সঙ্গদোষ এবং কৌতুহল।
পারিবারিক সমস্য, প্রেমগঠিত ব্যাপার এবং অতীত স্মৃতি মানুষকে দুর্বল করে রাখে। কিছু ঘটনা থাকে যা মানুষ কাউকে বলতে পারে না, তাই মানসিক অশান্তিতে ভোগে। জীবনের খারাপ দিকটা ভুলতে অনেকেই নেশার সাথে জড়িয়ে যায়। একবার জড়িয়ে গেলে নেশা থেকে সহজে কেউ ফিরে আসতে পারে না। কোনো পরিবারে একজন যদি নেশাগ্রস্থ হয়, তাহলে পুরো পরিবারে নেমে আসে অশান্তি।
অনেক পরিবার মনে করে তাদের চিকিৎসার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের ধারণা ইচ্ছে করলেই নেশা ছেড়ে দেওয়া যায়। অনেক পরিবার মান-সম্মানের কথা ভেবে মানকাসক্তকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় না। পরিবারের অবহেলা এবং মাদকাসক্তকে রোগ হিসেবে বিবেচনা না করার কারণে সমস্যা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ রূপ নেয়।
জীবনযাপনের ব্যবস্ততার কারণে অনেক সময় পরিবারের তরুণদের প্রতি নজর রাখা সম্ভব হয় না। কম বয়সী তরুণ-তরুণীরা আজকের দিনে অনেক সময় বাড়ির বাইরে কাটায়। অভিভাবকেরা নিশ্চিত থাকেনে এই ভেবে যে, তারা তাদের লেখাপড়া, খেলাধুলা, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ব্যস্ত আছে। পরিবার সজাগ থাকলে মাদকাসক্তি টের পাওয়া যায়। চালচলন, ব্যবহার, বাচনভঙ্গির পরিবর্তন নিকটাত্মীয়দের পক্ষে ধরা সম্ভব।
কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান মাদকাতক্ত
- ক্ষুধা হ্রাস বা বৃদ্ধি;
- হঠাৎ ব্যস্ততা বৃদ্ধি;
- বিনা কারণে ব্যস্ততা দেখানো;
- বেশি কথা বলা;
- খাদ্যাভাসের পরিবর্তন;
- ক্রমান্বয়ে আগ্রহের বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে আসা;
- লেখাপড়া এবং অন্যান্য কাজের মানে অবনতি;
- স্মরণশক্তি কমে যাওয়া এবং মনেসংযোগের অভাব;
- সবকিছুতে ‘কী হবে’ টাইপের প্রশ্ন;
- আত্মপ্রত্যয় ও আত্মসম্মানবোধের অভাব;
- অল্পতেই মেজাজ গরম করার প্রবণতা;
- অকারণ উত্তেজনা, হাতাশা রাগ এবং উদ্বিগ্নতা;
- বেপরোয় ভাব;
- অস্বাভাবিক ব্যবহার;
- বোকা বোকা এবং অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা;
- গোপন করার চেষ্টা বা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া;
- হঠাৎ বেশি টাকার প্রয়োজন হওয়া;
- বাড়ি ফেরা, খাওয়া, ঘুম ইত্যাদির রুটিনে পরিবর্তন।
যেভাবে আপনার সন্তানকে মাদকমুক্ত করবেন
মাদকাসক্তদের সহায়তার জন্য প্রথমে তাকে নীরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা প্রয়োজন, যেখানে সে উচ্ছে করলেই নেশা করতে পারবে না। নেশা সা করার কারণে তার শারীরিক যে প্রতিক্রিয়া হবে তা মোকাবেলা করার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।
মাদক ছাড়ার সময় যেসব শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায় ঃ
- শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গে ব্যথার সৃষ্টি হয় বা খিঁচুনির মত হতে পারে;
- মুখ দিয়ে লালা নিঃসরণ হওয়া;
- অস্থির লাগা;
- অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগা;
- চোখ-মুখ লালা হয়ে যাওয়া;
- অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়া;
- বিরক্ত হওয়া;
- ঘুমের সমস্যা;
- মনোসংযোগে অসুবিধা;
- আতঙ্কিত বোধ করা;
- বিষন্নতা।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলো মোকাবেলা করার জন্য বিশষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। এমন একটি জায়গায় মাদকাসক্তকে রাখা দরকার যেখানে থাকবে বিশেষজ্ঞ সাইক্রিয়াট্রিস্ট ডাক্তার, দক্ষ সাইকোলজিস্ট, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, অভিজ্ঞ নার্স এবং মানসম্মত একটি পরিবেশ। দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করে। তখন ওষুধের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত থাকে কাউন্সেলিং সাইকোথেরাপি, কগনেটিভ বিহেভিয়র থেরাপি, রিলাকজেশন ট্রেনিং গ্রুপ থেরাপি প্রর্ভতি। হাসপাতালে একটি বিশেষ সময় অবস্থানের পর মাদকাসক্তি নিরাসক্তিতে পরিণত হতে শুরু করে।তবে চিকিৎসা পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন এবং ফলোআপের জন্য বেশ কিছুদিন উক্ত প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসার সাথে যোগাযোগ রেখে একটি নির্দিষ্ট পরিক্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এভাবে একজন মাদকাসক্ত রোগী সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।