লাগাতার এমন চর্চায় সমাজটা বিষিয়ে উঠেছে

দৃশ্যত আমরা মনে করি সবাই টাকা শুধু টাকা পয়শা চায়, বিষয়টা আসলে কি তাই? টাকা পয়শা মানুষের প্রয়োজন, এবং সেই প্রয়োজনের হয়ত কোনো সীমাও নেই। কিন্তু বাধ্যবাধকতার বিষয়টি ভিন্ন, ঘরে সন্তান অভুক্ত থাকলে সে শুধু টাকা ছাড়া তখন আর কি চাইবে?

আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের এখনও এই অবস্থা বলেই মনে হয় সবাই খুব বস্তুবাদী। কিন্তু অন্তরালের চাহিদা কিন্তু ভিন্ন, এবং মানুষ মাত্রেই তা একই রকম। একটু চিন্তা করে দেখেছেন কখনো, আসলে আপনি কী চান? কলম খাতা পেন্সিল বার্গার চকলেট বাদাম গাড়ি বাড়ি —এসব বাদে আপনি কী চান?

আপনি মত প্রকাশ করতে চান, আপনার ইচ্ছের কথা অকপটে বলতে চান, আপনি চান স্বীকৃতি। ভাণ ধরে থাকতে মানুষের কষ্ট হয়, মানুষ একটি প্রাণখোলা পরিবেশ চায়, যেখানে সে হৃদয় খুলতে পারে। মানুষ এমন একটি পরিবেশ চায়, যেখানে চারপাশের মানুষ তাকে এবং তার কর্মকে স্বীকার করে, মানুষ এমন একটি পরিবেশ চায়, যেখানে মানুষকে প্রথমত এবং শেষত মানুষই ভাবা হয়।

পাশের মানুষটার জন্য এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে কিন্তু পয়শা লাগে না। বাসার কাজের বুয়ার কাজের শুধু ভুল না ধরে তার প্রশংসা করতে কিন্তু পয়শা লাগে না। কোনোদিন বলেছেন কি— “আপা/খালা, এটা খান, আপনার জন্য রেখেছি।” এটা না বলতে পারলেও সুযোগে তার আচল ধরে টানতে আমরা খুবই ওস্তাদ। ভ্রমণ শেষে রিক্সালাকে কখনো বলেছেন, “ধন্যবাদ”। না, আমরা তা বলি না, অন্যদিকে তাকিয়ে ভাড়াটা দিয়ে চলে যাই। বাজারে গিয়ে কখনো বলেছেন, ভাই, গতদিনের মাছটা খুব সুন্দর হয়েছিল। আমরা তা বলি না। অফিশে অধঃস্তনের কাজের প্রশংসা করেছেন কখনো? নাকি শুধু ধমক দিয়ে বসগিরিই ফলাই আমরা?

দেখবেন, সবখানে একটা নেতিবাচক পরিবেশ। কেন? ধন্যবাদ বলতে পয়শা লাগে না, কারো প্রশংসা করতে পয়শা লাগে না, কারো কাজের স্বীকৃতি দিতে পয়শা লাগে না, লাগে কি? আমরা হয়ত ভাবি— প্রশংসিত হয়ে তার দাম বেড়ে যাবে, এজন্য উল্টোটা করি— ন্যায্য প্রাপ্য দিতে চাইনে বলে সবসময় ধমকের উপর রাখতে চাই। লাগাতার এই চর্চায় সমাজটা এখন বিষিয়ে উঠেছে।