জীবনকথা : লাস্যময়ী সঙ্গীত শিল্পী গীতা দত্ত

geeta_datta2
কিংবদন্তী সঙ্গীত শিল্পী গীতা দত্ত।

গীতা দত্ত একজন বাঙালি সঙ্গীতলিল্পী। ২৩ নভেম্বর ১৯৩০ তৎকালীন পূর্ব বাঙলার [বর্তমান বাংলাদেশ] ফরিদপুরে এক রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।পারিবারিক নাম ছিল- গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। তিনি মূলত ছবিতে নেপথ্য সঙ্গীত গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। ১৯৪২ সালে গীতা দেত্তর বাবা মা বোম্বে তাঁর দাদার কাছে গিয়ে থাকতে শুরু করে। তখনকার দিনের বিখ্যাত সুরকার হনুমান প্রসাদ বারো বছর বয়সের গীতার গান শুনে মুগ্ধ হন। তিনি ১৯৪৬ সালে গীতা দত্তকে একটি ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। ভক্ত প্রহলাদ নামক ঐ ছবিটিতে তিনি কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাতেই তাঁর কৃতিত্ব ফুটে উঠেছিল। এরপর তিনি নেপথ্যগায়িকা হিসেব বিভিন্ন হিন্দি ছবিতে কাজ করেন।প্রথম দিকে তিনি ভজন এবং দুঃখের গান গাওয়ার জন্য বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯৫১ সালে শচীন দেববর্মনের সুরে বাজি চলচ্চিত্রে গান করে বিশেষভাবে খ্যাতি লাভ করেন। দেবদাস, পেয়াসা, ডাকহরকরা ইত্যাদি বাঙলা চলচ্চিত্রেও তিনি অসাধারণ কিছু গান করেন। ১৯৫০ এর দশকে তিনি লাস্যময়ী এবং যৌন আবেদনময় কণ্ঠের সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গীতা দত্তের বেশিরভাগ গানের সুরকার ছিলেন তখনকার সময়ের আরেক গুণীশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, এছাড়াও তিনি নচিকেতা ঘোষ এবং সুধীন দাশগুপ্তের সুরেও গান করেছেন।
সিনেমার গান রেকর্ড করতে গিয়ে নায়ক ও পরিচালক গুরু দত্তের সান্নিধ্যে এসে হৃদয়গঠিত সম্পর্কে জড়ার এবং ১৯৫৩ সালের ২৩ মে বিয়ে করেন। তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। দীর্ঘও হয় নি। ১৯৫৭ সালে গুরু দত্ত ওয়াহিদা রেহমানের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়ান এবং একইসাথে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর গীতা দত্ত মদ্যপানে আসক্ত হন।১৯৬৪ সালে গুরু দত্ত অতিরিক্ত মদ্যপানে এবং ঘুমের ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। [অনেকের ধারণা তিনি অত্মহত্যা করেছিলেন]।এরপর গীতা দত্ত আরো মুষড়ে পড়েন, সুরাপানও বেড়ে যায়।শিল্পী এসময় মারাত্মক আর্থিক সমস্যায়ও পড়েছিলেন। ক্যারিয়ারে মনোযোগী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। এসময় বধূ বরণ নামে একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আস্থার সাথে ক্যারিয়ারে আর ফিরতে পারেন। লাস্যময়ী কণ্ঠের গুণী এ শিল্পী ১৯৭২ সালের ২০জুলাই মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে লিভার সিরোসিসে মৃত্যুবরণ করেন।
গীতা দত্তের রাখা মনে রাখার মত কিছু গান
হিন্দী
• মেরা সুন্দর সপনা বীত গয়া (দো ভাই – ১৯৪৭)
• ও সপনেবালি রাত (পেয়ার – ১৯৫০)
• তদবির সে বিগড়ি হুয়ি তকদির (বাজি – ১৯৫১)
• আন মিলো আন মিলো (দেবদাস – ১৯৫৫) মান্না দের সাথে
• আজ সাজন মুঝে অঙ্গ লাগালো (পেয়াসা – ১৯৫৭)
• হাওয়া ধীরে আনা (সুজাতা – ১৯৫৯)
• বক্ত নে কিয়া কেয়া হাসিন সিতম ( কাগজ কে ফুল – ১৯৫৯)
• জরা সামনে আ (বাজ – ১৯৫৩)
• বাবুজি ধীরে চলনা (আর পার – ১৯৫৪)
• থান্ডি হাওয়া কালি ঘটা (মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফিফটি ফাইভ – ১৯৫৫)
• জব বাদল লেহরায়া (ছুমন্তর – ১৯৫৬)
• মেরে জিন্দেগী কে হামসফর (শ্রীমতি চারশোবিশ – ১৯৫৬)
• চোর লুটেরে ডাকু (উস্তাদ – ১৯৫৭)
• মেরা নাম চিন চিন চু (হাওড়া ব্রিজ – ১৯৫৮)
• ক্যায়সা জাদু বালাম তুনে দারা (টুয়েলভ ও ক্লক – ১৯৫৮)
বাঙলা গান
• তুমি যে আমার ( হারানো সুর ১৯৫৮ সঙ্গীত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)
• এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায় (হসপিটাল ১৯৬০ সঙ্গীত অমল মুখার্জী)
• নিশি রাত বাঁকা চাঁদ আকাশে (পৃথিবী আমারে চায় ১৯৫৭)
• ওগো সুন্দর জানো নাকি (ইণ্দ্রাণী ১৯৫৮)
• এই মায়াবী তিথি (সোনার হরিণ ১৯৫৯)
• আমি শুনেছি তোমারি গান (স্বরলিপি ১৯৬১)