জীবনে আর্থিক বিপদে পড়তে না চাইলে …

জীবনের কথা কেউ বলতে পারে না, কখন কোন বিপদ কোনদিক দিয়ে আসবে আমরা কেউই অগ্রিম জানতে পারি না। আর আজকালকার যুগে সবচাইতে বড় বিপদ হচ্ছে আর্থিক বিপদ। অর্থ এমন একটা জিনিস যা আপনার কাছে নেই তো কোনো মূল্যই নেই আপনার। মানুষ সব দেবে, কিন্তু টাকাটা আপনাকে কেউই দেবে না। একটা বড় অসুখে হোক বা রিটায়ার করার পর, সন্তানের প্রয়োজনে হোক বা অন্য কোনো বিপদে, টাকা দরকার কিন্তু সেটা নেই আপনার কাছে, তখন কী করবেন? এমন বিপদে পড়তে না চাইলে এই ৬ টি কাজ অবশ্যই করে রাখুন আর নিশ্চিত করুন আপনার ভবিষ্যৎ।

কিছু মানুষ থাকে যারা সবসময়ই কমতিতে থাকে। টাকা কম উপার্জন হলেও তারা হাত শূন্য করে ফেলে, বেশি উপার্জন হলেও হাত শূন্য করে ফেলে। এরা জমায় না, খরচটাও হিসেব করে করে না। নিজের জন্য যেমন, অন্যের জন্যও তেমন দিলদরিয়া থাকে এই মানুষগুলো। আবার এমন কিছু মানুষও আছে যারা শুধু নিজের জন্যে আজেবাজে খরচ করে হাত শূন্য করে ফেলে। পাশাপাশি অল্প কিছু সংখ্যক এরকম মানুষও পাওয়া যাবে, যারা নিজের জন্য যথেষ্ট হিসেবী হলেও অন্যের জন্য খরচ না করে পারে না, অন্যের দু:খ-কষ্টে এগিয়ে যায় বলে তাদের কাছে টাকা থাকে না। এ ধরনের মানুষ যারা তারা একটি কাজ করতে পারেন— যখন কাউকে টাকা দিচ্ছেন তখন অনুদান বা দান হিসেবে না দিয়ে ধার হিসেবে দিতে পারেন। সবাই ফেরত দিতে না পারলেও কেউ কেউ ফেরত দেবে, অন্তত আপনার বিপদের সময় চাওয়ার সুযোগটা থাকবে। নিজের পিছনে দেদারচ্ছে খরচ করে সব শেষ করে ফেলার চেয়ে অন্যকে ধার দেওয়া বা দান করা ভালো, তাতে আত্মতৃপ্তি যেমন মেলে, একইসাথে বিশাল একটা সামাজিক পুঁজিও তৈরি হয়। ধরুণ, জীবনে মাত্র দুই লক্ষ টাকা আপনি পঞ্চাশ জন মানুষকে বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন, এটা কিন্তু বিশাল একটা পুঁজি। এর মধ্য থেকে কমপক্ষে বিশজন মানুষ কিন্তু আপনার প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবে, এই কতৃজ্ঞতাটুকুর মূল্য অনেক।

একটা ইমারজেন্সি ফান্ড

প্রতিমাসে যা উপার্জন করবেন সেখান থেকে কিছু টাকা একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে রাখুন। কিংবা প্রতিমাসে সংসার খরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়েও রাখতে পারেন। যত কমই হোক, রাখুন। এই টাকায় বড় ধরনের বিপদে না পড়লে কখনো হাত দেবেন না। বিন্দু বিন্দু করেই সিন্ধু হয়। এটা উন্নয়ন ফান্ড না, কোনো ধরনের শখে বা উন্নয়নে এই টাকাটা খরচ করবেন না। এটা এমার্জান্সি ফান্ড। বিপদে পড়লে টাকাটা কাজে লাগবে।

ডিপিএস

নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি ভালো ব্যাংকে ডিপিএস (যেকোনো নামে একটি মাসিক জমা হিসাব) খুলে রাখুন। ৫০০ থেকে শুরু করে পছন্দের যে কোনো পরিমাণ টাকা রাখতে পারবেন। প্রতিমাসে জমা দেওয়া ঝামেলা মনে হলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউনট থেকে সরাসরি পরিশোধের ব্যবস্থা করুন।

জীবনবীমা

আমাদের দেশে এখনো ভালোভাবে এর প্রয়োজনীয়তা সকলে বোঝেন না। আবার বীমা কোম্পানিগুলোও সততার সাথে ব্যবসা করে না। তাই বলে দুএকটি যে ভালো নেই, তা তো নয়। একটি জীবনবীমা আপনার মৃত্যুর পর যেমন পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তেমনই আপনার জীবিত অবস্থায় মেয়াদ পূর্তি হলে অনেকগুলো টাকার নিশ্চয়তা দেয়। তবে বীমা করতে হবে বুঝেশুনে, কোনো ঠগবাজের পাল্লায় পড়া যাবে না। 

স্বাস্থ্যবীমা

ভালো কোম্পানিতে একটি মোটামুটি মানের স্বাস্থ্য বীমা হলেও করে রাখুন। কোনো বড় অসুখে অনেকটা সাহায্য পাবেন। যদিও আমাদের দেশে বীমা কোম্পানিগুলোর সুনাম নেই। খোঁজখবর নিয়ে বুঝেশুনে স্বাস্থ্যবীমা করতে হবে।

রিটায়ার প্ল্যান

নিজের রিটায়ার প্ল্যান এখনই গুছিয়ে রাখুন। অনেক অফিসেই প্রভিডেনট ফান্ড থাকে। কিন্তু যাদের এই সুবিধা নেই, তারা কোনো বীমা কোম্পানির রিটায়ার প্ল্যানের সাহায্য নিতে পারেন। অনেক ব্যাংকেরও এমন স্কিম আছে। পছন্দমত বেছে নিন। মানে চাকরিঅন্তে কোম্পানির পলিসি না থাকলেও যেন আপনি নিজ উদ্যোগে একটা ফান্ড তৈরি করতে পারেন।

নিজের বাড়ি বা জমি

কথায় বলে, জমি কখনো ধোঁকা দেয় না। আসলেই তাই। মাথা গোঁজার জন্য নিজের একটি ঠাই থাকলে জীবনে আর কিছু নিয়ে ভাবতে হয় না। তাই চেষ্টা চালিয়ে যান নিজের একটি বাড়ি বা জমি করার। বাড়িটি যে শহরেই করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। গ্রামেও এখন সকল সুযোগ সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে, তাই গ্রামে ছোট্ট একটি খামার বাড়ি করে ফেলতে পারেন।

স্বর্ণ

স্বর্ণের মূল্য টাকার মূল্যমান যে অনুপাতে কমে সে অনুপাতে বাড়ে। ফলে কিছু স্বর্ণ কিনে রাখতে পারেন। স্ত্রীকে গয়না দিয়ে প্রিয়ভাজনও হইলেন, আবার টাকাটাও আটকানো হলো। বাইশ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম বিক্রীর সময় খুব বেশি কমবে না, প্রায় একই দাম পাবেন। দাম বাড়লে বাড়তি দামই পাবেন। বিপদে পড়লে স্বর্ণ একটা বিশ্বাসযোগ্য সম্পদ।