Headlines

অস্থির এক দৌড় সবাইকে পাগল করে তুলেছে । সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

untitled-23_88442

সবাই দৌড়াচ্ছে। এক অস্থির প্রতিযোগিতায় শামিল হয়ে ছুটছে সবাই। এই অস্থিরতা কেবল আমাদের বাংলাদেশে নয়, এ অস্থিরতা সারা বিশ্বে। এই প্রতিযোগিতায় কেউই পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়। জীবনের সব ক্ষেত্রে নিদারুণ অস্থির এক দৌড় সবাইকে পাগল করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন তিনি। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এই দৌড়ের দুটো কারণ আছে। একটা কারণ হচ্ছে, প্রয়োজন বা বৈষয়িক-বস্তুগত চাহিদা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, সেই অসংযত প্রতিযোগিতা। নানামাত্রিক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতাগুলোকে উসকে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সবার মধ্যেই কেবল ভোগবাদিতার সর্বগ্রাসী মানসিকতাই তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ একটা হচ্ছে প্রয়োজনের দিক জীবিকা বা জীবন ধারণের। আরেকটা হচ্ছে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। সেই প্রতিযোগিতাটাকে উত্তেজিত করা হচ্ছে পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আসলে আমরা একটা বিজ্ঞাপনের যুগে বাস করছি। এ যুগটাকে গণমাধ্যমের উৎকর্ষের যুগ বলা হলেও এ গণমাধ্যমের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে বিজ্ঞাপন। প্রতিযোগিতার হাতিয়ার। এ বিজ্ঞাপনে মানুষকে উত্তপ্ত করা হচ্ছে যে, তুমি পিছিয়ে পড়ছ। আর বস্তুতই কেউ পিছিয়ে পড়তে রাজি নয়। সবাই তাই ছুটছে। সে জন্য দেখা যাচ্ছে, আমরা কোনো ক্ষেত্রেই এগুতে পারছি না। যেহেতু সবাই ছুটছে, তাই অগ্রগতি তেমন একটা হচ্ছে না। ঠেলা-ধাক্কা হচ্ছে, পরস্পরের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। হিংসা-বিদ্বেষই মূলত মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে প্রত্যেকের মনের ভিতরে। কারণ প্রত্যেকেই প্রত্যেকের প্রতিযোগী। তাই সমষ্টিগত যে অগ্রগতি, সেটাই হচ্ছে না। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, অস্থির গতিশীলতার মূল বা কেন্দ্রীয় বিষয়টা হচ্ছে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা। যে ব্যবস্থার মূল ধারণাই হচ্ছে প্রত্যেকটা মানুষ কেবল তার নিজের কথাই ভাববে। আর প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যেই একটা ভোগবাদিতা তৈরি হবে। এ পুঁজিবাদ দুটো কাজ করে। ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে; বিচ্ছিন্ন করে তাকে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে ব্যক্তিকে করে ভোগবাদী। পুঁজিবাদের এ আসল তত্ত্ব অদৃশ্যভাবে আমাদের এই ছোটাছুটির মধ্যে ব্যস্ত রাখছে। আমাদের ক্ষণিকের জন্যও দাঁড়াতে দিচ্ছে না। বিশ্বব্যাপীই ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে এ পুঁজিবাদের কারণে। কোথাও মানুষ স্থিরভাবে নেই।