‘ঈদ’ সঠিক, যে কারণে ‘ইদ’ নয়

ঈদ, ইদ, ইদুল ফিতর, ঈদুল ফিতর

বানান শুধু প্রচলন অপ্রচলনের বিষয় নয়। বানানের ক্ষেত্রে প্রধানত উচ্চারণের বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ, পাশাপাশি শব্দার্থ (বিশেষ করে ভাবার্থ) এবং ভিন্ন শব্দের বানানে পার্থক্য সৃষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

যেমন,

ILL = ইল্; EEL = ঈল এবং EID = ঈদ -শব্দ তিনটি খেয়াল করা যাক।
ILL = ইল্ এবং EEL = ঈল এক নয়। কিন্তু বলার সময় উচ্চারণ অনেক সময় আমরা একই করি।
ILL কে EEL লিখলে উচ্চারণ পুরোপুরি বদলে যায়। ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কথা বলি বলে উচ্চারণের এই ব্যবধান সহজে ধরা পড়ে না বা সমস্যা হয় না।

কিন্তু যদি বলতে হয়- “বাইন মাছটি অসুস্থ” তাহলে ইংরেজিতে তা বুঝাতে গেলে উচ্চারণ সঠিক করতে হবে। আমি যদি বলি- “দ্যা ঈল ইজ ইল্” তাহলে এটি সঠিক উচ্চারণ হবে এবং বোঝা যাবে যে “বাইন মাছটি অসুস্থ।” কিন্তু যদি বলি- “দ্যা ইল ইজ ইল।” তাহলে বাইন মাছটি দেখিয়ে বললেও শ্রোতা বুঝবে- “বাইনটি হয় বাইন।” আবার এটি শুধু বোঝা না-বোঝার বিষয় নয়, শুদ্ধ-অশুদ্ধেরও বিষয়। সবকিছু বাদ দিলাম, প্রায় সমোচ্চারিত শব্দের বানানে পার্থক্য তো সৃষ্টি করতে হবে, সেটি কীসের ভিত্তিতে হবে?

প্রথম শব্দে (ILL) জোর পড়েছে ‘ল’ এর ওপর, এজন্য ডাবল ‘L’ হয়েছে। তৃতীয় শব্দে (EID) জোর পড়েছে ‘ই’ এর ওপর, এজন্য ‘ID (ইদ)’ না হয়ে ‘EID = ঈদ’ হয়েছে।
আবার বাইন মাছের ‘ঈল’ লেখা হয়েছে ‘ই’ এর উপর জোর দিয়ে, তাতে ILL এবং EEL এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।

ঈদ লিখতে ‘ই’ দিতে হলে ‘দ’ এর নিচে হস (্) চিহ্ন দিতে হবে, একটা শ্বাসাঘাত তো লাগবে সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে, হয় সেটি শুরুতে লাগবে, না হয় শেষে লাগবে। না হলে উচ্চারণটা হয়ে যায় ‘ইদঅ’।

স্বরবর্ণ দিয়ে কোনো শব্দ শুরু হয়ে পরে আর মাত্র একটি বর্ণে শব্দটি শেষ হলে শব্দের শুরুতে বা শেষে জোর দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। যেমন, ‘অজ’ -এই শব্দটিকে আমরা ‘অজঅ’ উচ্চারণ করি, ‘অজ’ উচ্চারণ করি না। একইভাবে ‘অত’ শব্দটিকে ‘অতও’ উচ্চারণ করি, ‘অত’ উচ্চারণ করি না।

‘ইশ’ শব্দটি খেয়াল করুণ, ব্যবহারিক গুরুত্বে এটি খুব দ্রুত উচ্চারণ করতে হয়, তাই ‘ই’ তে জোর পড়ে না। শব্দটি যাতে আমরা ‘ইশঅ’ না পড়ি এজন্য ‘ইশ্’ লেখার নিয়ম রয়েছে, তবে ঝামেলা এড়ানোর জন্য এখন আর ‘হস’ চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না, বা খুব কমই হয়। কিন্তু ‘্’ চিহ্নটি ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে।

দ্রুত যে শব্দগুলো উচ্চারণ করা হয়, সেসব শব্দের ক্ষেত্রে প্রথম স্বরবর্ণ হালকা উচ্চারিত হয়। কিন্তু ‘ঈদ’ সেরকম নয়, এটি একটি নামবাচক শব্দ হওয়ায় উভয় বর্ণের সমান গুরুত্ব রয়েছে।

‘জিদ’ শব্দটির কথা ভাবুন, এখানে জোর পড়েছে শুধু ‘দ’ এর ওপর, মাঝখানের ‘ই’ বর্ণটি সামান্য উচ্চারিত হয়েছে। ‘ঈ’ দিয়ে ‘ঈদ’ লিখলে দুটি ‘ই’ কারই উচ্চারিত হয়, প্রথম ‘ই’ কারটি ‘জিদ’ শব্দের ‘জ’ এর মত উচ্চারিত হয় এবং পরের ‘ই’ কারটি খুব সামান্য উচ্চারিত হয়। পরে ‘দ’ এর উপর জোর পড়ে। কিন্তু ‘ইদ’ লিখলে ঐ সামান্য উচ্চারিত ‘ই’ কারটি বাদ পড়ে যায়, ফলে শব্দটি তার ভাবার্থ এবং গাম্ভির্য হারায়।


লেখক: দিব্যেন্দু দ্বীপ