একটি অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশে বেড়াতে আসার আমন্ত্রণ // পার্থ প্রতিম হালদার

Bangladesh
আজ একটা ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই । গত ৩০ নভেম্বর (২০২২) আমার এক নিকট আত্মীয় একাই বাংলাদেশ ভ্রমন করতে যান। দর্শনা বর্ডার পার হয়ে প্রথমে বাংলাদেশের নাটোরে যান পৈতৃক ভিটার দর্শনে। নাটোরে নানান জায়গা পরিভ্রমণ করে উনি ২ ডিসেম্বরে রাজশাহী চলে আসেন। ওখানে উনি একটি হোটেলে রুম বুক করেন। সেদিন রাজশাহীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভা  ছিলো। এ কারণে ওনাকে হোটেল থেকে বেশী দূরে ঘোরাঘুরি করতে নিষেধ করা হয়েছিলো। উনি তাই বিকেলে কাছাকাছি পদ্মা নদীর তীরে বেড়াতে যান। কৌতূহলবশত ওখানে ঘুরতে আশা এক অল্প বয়সী দম্পতির সাথে আলাপ হয়। ঐ দম্পতি ওনাদের কাছে দূরে রাজশাহীর অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থান সম্পর্কে জানতে চান। উনি কোলকাতা থেকে ঘুরতে গিয়েছেন শুনে ওনারাও কোলকাতার বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা সম্পর্কে জানতে চান।
আমার এই আত্মীয় ওনার মোবাইল নম্বর ওনাদের দেন, যাতে কোলকাতায় এলে ওনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং ওনাদের কোনো অসুবিধা না হয়। ওনারা আমার এই আত্মীয়কে কল দিলে ওনারা বাংলাদেশী এই দম্পতির নম্বর সেভ করে রাখেন। এরপর আমার এই আত্মীয় হোটেলের উদ্যেশ্যে রওয়না হন।
আসার পথে উনি মারাত্মক এক দুর্ঘটনার কবলে পরেন। রাস্তায় একটি অটো রিকশা ওনাকে ধাক্কা মারে। আঘাতে ওনার মাথায় ও সারা শরীরে মারাত্মক চোট লাগে এবং উনি ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান। ওনার সাথে একটি ছোট হাতব্যাগ ছিল। এরপর ঘণ্টা তিনেক পরে ওনার যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন উনি অনুভব করেন যে, উনি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন এবং পাশে স্বল্প পরিচিত ঐ দম্পতি ওনার দেখভাল করছেন।
পরে উনি জেনেছিলেন যে, দুর্ঘটনার পরে অটো রিকশাটি পালিয়ে যায় ও উনি রাস্তায় পড়ে ছিলেন। ওখানে রাজশাহী থানার কর্মরত পুলিশ অফিসার মানিক মামুদ সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে আসেন। প্রথমে ওনাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ অফিসার ওখানে পড়ে থাকা হাতব্যাগটা নিজের কাছে রাখেন। ব্যাগে পাসপোর্ট সহ অন্যান্য দরকারী কাগজপত্র ও টাকা পয়সা ছিল। পুলিশ অফিসার ওনার মোবাইল ফোনটিও ঘটনাস্থলে কুড়িয়ে পান। ফোনের সর্বশেষ কল অনুসারে উনি প্রথমে ঐ দাদাকে ফোন করেন এবং তাড়াতাড়ি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলে আসতে বলেন। এরপর অন্য নাম্বার খুঁজে ওনার কোলকাতার বাড়ীতে সংবাদ দেন। ওই দম্পতি দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন এবং ওনার দেখভাল শুরু করেন।
ওনার মাথায় অত্যাধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে দুই বোতল রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় ওই দাদা নিজে এক বোতল রক্ত দান করেন এবং আরো এক বোতল রক্ত জোগাড় করেন। এরপর কলকাতায় আমাদের সাথে কথা বলেন ও আশ্বস্ত্য করেন। রাতে একজনকে বেডের পাশে রাখারও ব্যবস্থা করেন। ওই পুলিশ অফিসার মামুদ সাহেবের সাথে আমাদের ও কথা হয়, উনি বলেন ওনার কাছে পাসপোর্ট সহ ব্যাগ টি সুরক্ষিত আছে এবং উনি সুস্থ হওয়ার পর ওনার ভারতে আসার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেবেন। দুইদিন পর একটু সুস্থ হলে ওই দাদা ও বৌদি হাসপাতালের ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলে ও বন্ডে সই করে আমার ওই আত্মীয়কে ওনাদের বাড়িতে নিয়ে যান এবং ওনার সেবা শুশ্রূষা করে ওনাকে সময় মতো ঔষধ পথ্য দিয়ে সুস্থ করে তোলেন।
এর পর ৬ ডিসেম্বর ওনার ভারতে আসার দিন ঠিক করা হয়। ওই দাদা ও বৌদি পুলিশ অফিসার মাহমুদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে দর্শনা বর্ডার পর্যন্ত আসার সমস্ত ব্যবস্থা করে দেন। আমি ৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের গেদে বর্ডারে ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে ওনাকে কলকাতায় নিয়ে আসি।
আমরা অনেকেই বাংলাদেশ ভ্রমনে উৎসাহ প্রকাশ করি না কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউজ মিডিয়ার দৌলতে অনেক খবর আমাদের ভাবিয়ে তোলে বা নিরুৎসাহিত করে । কিন্তু এই ঘটনার পরে আমি সকলকে বলতে চাই যে, এর সাথে বাস্তবের অনেক ফারাক আছে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ আছেন যারা খুবই সহৃদয় এবং আন্তরিক। এছাড়া বাংলাদেশ প্রশাসন ভারতীয় নাগরিকদের ব্যাপারে খুবই সতর্ক। ওই দাদা ও বৌদি সম্পূর্ণ অপরিচিত হওয়া সত্ত্বেও আমার ওই আত্মীয়কে হাসপাতালে রক্ত দিয়ে ও বন্ডে সই করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যেভাবে সেবা শুশ্রষা করে সুস্থ করে তোলেন এবং পুলিশ অফিসার মাহমুদ সাহেব যেভাবে ওনাকে সময় মতো হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করাতে সাহায্য করেন এবং ওনার পাসপোর্ট ও অন্যান্য দরকারি কাগজপত্র ওনার কাস্টডিতে রেখে সময় মতো এদেশে আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তাতে আমাদের পরিবার ওনাদের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আরো অনেক বেড়ে গেল। ওখানে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা খুব আন্তরিকভাবে আপনার প্রয়োজনে সাহায্য করতে প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ প্রশাসন এ ব্যাপারে ভারতীয় ট্যুরিস্টদের প্রতি খুবই সতর্ক। পরিশেষে আমি বলতে চাই যে, আপনারাও ট্যুর প্লান তৈরি করে নির্ভাবনায় বাংলাদেশ ঘুরে আসতে পারেন।