“না আমরা পরিবারে থাকি, না স্কুলে।” আমরা পড়ি কোচিং সেন্টারে। বিদ্যালয় ও শিক্ষক কোনটাই আর আমাদের সন্তানদের মাঝে শুভবোধ তৈরী করার স্থান নয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীর ভূমিকায় ( কতিপয় বাদে) থাকা ভিকারুননেছার মতো তথাকথিত ভাল স্কুল আমার সন্তানকে আর যাই দিক জীবনবোধের সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ “ভালবাসা” শেখায় না।
তারা কি আদৌ কিছু শেখায়। মেধাবী বাচ্চাগুলোকে পড়ার চাপে পিষ্ট করে রাখে। সে পড়াটা করিয়ে দেবার দায়িত্ব আবার অভিভাবকের অথবা তাদেরই প্রতিষ্ঠিত কোন কোচিং এর। ভাল ফলাফল না হলে দায়িত্ব ছাত্রীটির বা তার পিতামাতার। স্কুলের কোন দায়বদ্ধতা নেই। একাডেমিক বইয়ের বাইরে কোন ভাল বই তাদের পড়ানো হয় না, খেলাধুলা জীবন থেকে উঠেই গেছে, বিতর্ক, বক্তৃতা, গান, আবৃত্তি এসবের চর্চা নাই। তারা কেমন করে শিখবে কীভাবে হার মেনে নিয়ে উঠে দাঁড়াতে হয়।
আর আমরা অভিভাবকরাও কম যাই না। দিনের পর দিন এসব নির্বিকার চিত্তে মেনে নিতে নিতে অন্যায়গুলোকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে ফেলেছি। ক্রেজি অভিভাবক বিশেষত মায়েরা বাচ্চাদের পাছে একটা নম্বর ছুটে যায় সে ভয়ে কথা বলবে না। তারা কেবল নম্বর চায়। পড়ো আর পড়ো। বড় হয়ে ভাল মানুষ হতে হবে এটা না শিখিয়ে আমরা শেখাচ্ছি বড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অনেক বেশি টাকা বানানো যায় এমন কিছু হতে। কেবল অর্থ উপার্জনই যখন শিক্ষার লক্ষ্য হয় তখন আসলে বলার কিছু থাকে না।
এসব তথাকথিত ভাল স্কুলে লক্ষ্য টাকার বিনিময়েও আমরা সন্তান ভর্তি করতে পিছপা হই না। প্রচণ্ড আশাবাদী একজন মানুষ হয়েও আমি শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছি। একজন প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা প্রসংগে জানতে পারলাম তার কলেজের বিভাগীয় প্রধানগণ মাঝে মাঝে আসেন। এ সত্য তিনি এমন নির্বিকারভাবে বললেন যেন সেটাই নিয়ম। তিনি কেন তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না বলাতে জানালেন, সারাদেশেই এমন হচ্ছে।
ফরিদপুরে এমন অনেক স্কুল আছে যারা এমন ব্যবসা করছে। অভিভাবকদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা কেননা সেসব স্কুলে না পড়লে তাদের সামাজিক মর্যাদা থাকে না। বাচ্চারা দিনের পর দিন মুখস্ত করে করে তোতাপাখি হচ্ছে তাতেই তারা খুশি।
জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ফরিদপুরের বাচ্চাদের কল্যাণে আমরা এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো। প্রাথমিক চিঠি তাদের দেওয়া হয়েছে। তারা উল্টো প্রশ্ন তুলছে, সারা দেশেই তো চলছে, ফরিদপুরে নয় কেন।
আমরা ফরিদপুরকে বদলে দিয়ে দেখাতে চাই সকল শুভবোধসম্পন্ন মানুষ এক হয়ে যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে সেটা দূর হবেই। পাশে থাকুন সবাই।
জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর