ভয়ংকর এক সংস্কৃতি চলছে দেশে এখন। কেউ কাউকে ভাল বলতে, কেউ কারো কাজের প্রশংসা করতে একেবারে নারাজ। এই সমস্যাটা বেশি পরিলক্ষিত হয় শিক্ষিত এবং কথিত প্রগতিশীলদের মধ্যে। আওয়ামী লীগ খারাপ, বিএনপি খারাপ, বামরা খারাপ; তাহলে ভাল কে?
হতে পারে—
১. যা নেই তাই শুধু ভাল;
২. ‘আমি’ শুধু ভাল।
‘নেই’-এর প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবজাত, তাই বিষয়টি এ আলোচনার বাইরে রাখা যেতে পারে। আলোচনা করা যেতে পারে ‘শুধু আমি ভালো’ কালচার নিয়ে। রাম, শ্যাম, যদু, মধু— রাম শ্যামের সম্পর্কে কুৎস্যা রটাচ্ছে, শ্যাম রামের সম্পর্কে, যদু মধু সম্পর্কে, মধু যদু সম্পর্কে –এভাবেই চলছে। গণমানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে– এরা সবাই খারাপ। তারা কোথাও আর আস্থা রাখতে পারছে না। ফলে খারাপ হওয়ার সংস্কৃতির পালে হাওয়া পাচ্ছে। আসল দুর্বৃত্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে, সব খারাপের মধ্যে তারা লুকানোর জায়গা পাচ্ছে? আসলে কি সব খারাপ? জাফর ইকবারও খারাপ, জয়ও খারাপ? নাকি জাফর ইকবালও ভাল, জয়ও ভাল? দেখুন জিতে যাচ্ছে আসলেই খারাপ যারা, তারাই, তারা জাফর ইকবালকে দিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে বলাচ্ছে এবং জয়কে দিয়ে জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে বলাচ্ছে!
দেখা যাচ্ছে, যেসব ‘ভাল মানুষেরা’ লেখক জাফর ইকবালও প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছেন, তাদের যুক্তিগুলো বড় অদ্ভূত। তারা বলতে চাচ্ছেন, জনাব জাফর ইকবাল কেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আরো বেশি বলেননি, কেন তিনি জনপ্রিয় হতে চেয়েছেন, ইত্যাদি। প্রত্যেকটি মানুষের একটি রাজনৈতিক অবস্থান থাকে, তো তিনি তো তার রাজনৈতিক আদর্শ রক্ষা করেই লিখবেন এবং কথা বলবেন –এটাই তো স্বাভাবিক। আর জনপ্রিয় হতে কে চায় না? ‘কুখ্যাত’ এবং ‘বিখ্যাত’ পরস্পর বিপরীত শব্দ দুটি বিপরীত এই কারণে যে, যে মারাত্মক খারাপ কাজ করে প্রচার পায় তাকে বলা হয়ে কুখ্যাত, আর যে ভাল কাজ করে প্রচার পায় তাকে বলা হয় বিখ্যাত। প্রশ্ন হচ্ছে— জাফর ইকবাল স্যার কুখ্যাত না বিখ্যাত?
জাফর ইকবাল স্যার চেনা মানুষ, জনপ্রিয় মানুষ, বইমেলায় এখন তার বই-ই সবচে’ বেশি চলে, কারণ, তিনি শিশু কিশোর এবং তরণদের মন জয় করতে পেরেছেন, তিনি তাদের মধ্যে জ্ঞান বিতরণ করছেন। তার জনপ্রিয়তা দেখে কারো হিংসা হতেই পারে, আমারও তো হয়; মাঝে মাঝে ভাবি— আমারও যদি অমন জনপ্রিয়তা থাকত! আমার লেখাও যদি এত্ত এত্ত মানুষে পড়ত! ঈর্ষায় কোনো অসুবিধা নেই, একটা সীমা পর্যন্ত ঈর্ষাটুকুও মানবিক, কিন্তু তাই বলে তো কাউকে ‘ভালো’ বা ‘মন্দ’ বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া যায় না। আমাদের উচিৎ একজন মানুষকে সামগ্রিকভাবে ভালো বা মন্দ না বলে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করা। সাংসদ কায়েস জাফর ইকবাল স্যারকে যা বলেছেন, সেটি সমীচীন হয়েছে কিনা, এবং কতটা অবান্তর কথা তিনি বলেছেন, তা-ই হওয়া উচিৎ এক্ষেত্রে আলোচনার বিষয়বস্তু। জয়ের বক্তেব্যের যে সমালোচনাটুকু জাফর ইকবাল স্যার করেছেন সেটুকু করেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি সমর্থন বজায় রাখা যায়, যাওয়ার কথা। সে সুযোগটুকু না থাকলে সরকারই বিপদে পড়বে, জাফর ইকবালরা না। পিছন থেকে কাউকে কুপিয়ে চলে গেলে ভিন্ন কথা, সেটি নিয়ে কিছু বলার নেই।
একজন জাফর ইকবাল সব ভাল কাজ একা করতে পারবেন না, কিন্তু অনেকের মাঝে অনেক ভালো কাজ করার প্রবণতা তিনি তৈরি করেছেন, করছেন, তিনি যুক্তিবাদী মানুষ হতে বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোর-তরুণদের উদ্ভুদ্ধ করে চলেছেন। বিষয়টা এমন হয়েছে, এতটা প্রভাবশালী একজন মানুষকে দলাকানা বানাতে না পেরে আওয়ামী লীগ নাখোশ হয়েছে, জামাত খেপেছে প্রজন্মের পিছনে তাদের চেয়ে জাফর ইকবাল স্যারের প্রভাব বেশি বলে। সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে আপনিও কেন নাখোশ হচ্ছেন?