ধরুণ, কারো মাসিক উপার্জন পাঁচ লক্ষ টাকা, আরেকজনের মাসিক উপার্জন পাঁচ কোটি টাকা। এটা দ্বারা কি এই উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে যার মাসিক উপার্জন পাঁচ কোটি টাকা সে বেশি কনজিউম করে নিজের জন্য? যায় না।
ইনকাম একটা সার্টেন লেভেল অতিক্রম করার পর জীবনমানের আর তেমন হেরফের হয় না। এরপর ব্যক্তির জ্ঞান গরিমা এবং ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে সে কোন দিকে মুভ করবে?
একজন মানুষ কত খাবে, কত ভালো বাড়িতে থাকবে, দিনে কতবার ‘থাইল্যান্ডে’ যাবে? এর একটা সীমা আছে? অর্থাৎ ব্যক্তির ব্যয় করার (নিজের জন্য) সামার্থেরও একটা সীমা আছে।
পার্থক্যটা হয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। একজন মানুষ অনেক টাকার মালিক মানে সে অনেক বেশি ‘সিদ্ধান্তের মালিক’। টাকাগুলো কোথায় খরচ হবে, কাকে দিবে, নতুন কী এন্টারপ্রাইজ খুলবে —সিদ্ধান্তগুলো সে নেয়।
তো ব্যক্তি যত উন্নত এবং উৎকর্ষিত হবে, সে তত ভালো সিদ্ধান্ত নেবে এবং সমাজটা সুন্দর হবে। ঠিক এই কারণে কার কাছে (মালিকানায়) টাকাটা আছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আমার সব সময় সাধারণ মানুষকে দোষ দিই, বলি মানুষ ভালো না বলে সবকিছু খারাপ। বলা হয়— মন্দ সমাজে ভালো পুলিশ আসবে কোত্থেকে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বলতে শুনেছি— ছাত্ররা ভালো না হলে শিক্ষক ভালো হবে কীভাবে?
এগুলো খুবই দায়সারা কথা। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে থাকা মানুষেরা টাকাওয়ালা মানুষের মতো পদাধিকারের কারণে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সুযোগ পায়। ফলে এই পদগুলোতে কেমন মানের লোক আছে সেটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
একজন পুলিশের এসপি তার পদাধিকারবলে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মালিক, ছোট থেকে বড় প্রতিটি পদ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, এলাকার মেম্বার প্রতিদিন অনেকগুলো ছোট ছোট সিদ্ধান্ত নেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত শিক্ষক নেয়, শিক্ষার্থী নয়, তাই দায় অবশ্যই শিক্ষকের।
মোদ্দা কথা হচ্ছে— সমাজটা কেমন তার দায় কোনোভাবেই গণমানুষের ওপর বর্তায় না, দায় নিতে হবে সম্পদশালী এবং পদাধিকারপ্রাপ্ত মানুষদের।
সম্পদশালী এবং পদাধিকারপ্রাপ্ত না হয়েও সিদ্ধান্ত নেয় লেখকরা, এবং লেখকরা সিদ্ধান্ত নেয় নিরবে, ফলে তার প্রভাব হয় সুদূরপ্রসারী এবং সুন্দর। মুক্ত সমাজে লেখকরাই সমাজ গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে।
কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সেরকম নয়। এখানে ব্যবসায়ী, আমলা, রাজনীতিকরাই একটি ভাড়াটে (পরোক্ষভাবে) প্রকাশক-লেখক শ্রেণি তৈরি করেছে, যাদের লেখায় মূলত ঐসব ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিকদের চিন্তার প্রতিফলনই থাকে।
যারা ভাড়া খাটে না কৌশলে তাদের কর্নারড করে রাখতে এরা কুৎসিতভাবে সফল হয়েছে, শেষ পর্যন্ত চাপাতির আশ্রয়ও তারা নিয়েছে। এর থেকে বেরিয়ে আসা খুব সহজ নয়।