Headlines

দেশে এখন গণ দুবৃত্তায়ন চলছে

মাওলানা সিরাজউদ্দৌলা

নুসরাত হত্যা

মানুষ বুঝে গেছে যে জামায়াত, বিএনপি বা আওয়ামীলীগ নয়, তাদের দরকার অর্থ বিত্ত ক্ষমতা, সুখ সমৃদ্ধি, শ্রেষ্ঠত্ব। এই বুঝে যাওয়াতে কোনো সমস্যা ছিল না, কারণ, কথিত উন্নত দেশগুলো এই বুঝ নিয়েই উন্নতফেনি হয়েছে, এবং এই বুঝ নিয়েই চলছে।

তবে তারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের, অর্থবিত্ত অর্জনের কিছু কৌশল বা মানদণ্ড ঠিক করে নিয়েছে, যাচ্ছেতাই তারা করে না। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ উন্নত দেশের মতো লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করতে শিখে গেছে, কিন্তু শেখেনি সেইসব কৌশল এবং আইন যেগুলো মানুষকে শ্রেষ্ঠ হওয়ার পথে যাচ্ছেতাই করা থেকে বিরত রাখে, যাচ্ছেতাইভাবে অর্থবিত্ত এবং ক্ষমতা অর্জন করতে বাধা দেয়।

নারীর কথা পুরুষ হিসেবে বলা কঠিন; তবে পুরুষের কথা বলতে পারি—যৌনতা পুরুষের একটি লক্ষ্য। পশ্চিমারা সে লক্ষ্য অর্জন করেছে ব্যক্তি স্বাধিনতা দ্বারা, আর আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাচ্ছি জোর জবরদস্তি দ্বারা। পশ্চিমারা দুবৃত্তের লাগাম টেনে রেখেছে কঠোর আইনের শাসন দ্বারা, আইন প্রয়োগে নিরপেক্ষতা দ্বারা। আর আমাদের দেশে দুবৃত্তরা আশকারাা পাচ্ছে আইনের শিথিলতা এবং আইন প্রয়োগে অবৈধ পক্ষপাতিত্ব দ্বারা। 

মন্দ কাজও যে একসাথে করা যায় -এটা মধ্যযুগীয় ডাকাতদলীয় ধারণা। সে ধারণা থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে একসময় ঈশ্বর নামক এক কাল্পনিক সত্তার নামে আইন (সামাজিক আচার) তৈরি করে। ঈশ্বরের নামে করায় তাতে বেশ কাজও হয়েছিল তখন। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে ধর্মীয় সে ধারণা বুমেরাং হয়েছে।

সামাজিক সে কৌশলের দখলও নিয়ে ফেলেছে দুবৃত্তরা। অঞ্চল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য সর্বশেষে সভ্য জগতের দেখা পেয়েছে, তাই ধর্মটাও সেখানে নতুন। ফলে একথা সত্য যে যত বেশি সুস্পষ্ট নির্দেশ মধ্যপ্রাচ্যের সামাজিক আইনের মধ্যে আছে অন্য ধর্মে তা নেই। ফলে দুবৃত্তরা এটাকে ব্যবহার করছে এখন সবচে বেশি। ধর্মগুলো দেখবেন পুরুষকে সবসময় একধরনের দায়মুক্তি দিয়েছে। সমাজপতিরা যেহেতু পুরুষ ছিল, তাই ভালো চেয়ে বানালেও ধর্মগুলো হয়ে রয়েছে পুরুষমুখী। পৃথিবীতে এখনও বেশিরভাগ দুবৃত্ত পুরুষ, যেহেতু সামাজিক ক্ষমতা তাদের কাছে তাই দুবৃত্তায়ন তাদের দ্বারাই বেশি হয়। 

দুবৃত্তায়ন ভোগ এবং কতৃত্ব নির্ভর। যেহেতু পুরুষের কাছে নারী প্রথমত একটা ভোগ্যবস্তু, ফলে দুবৃত্তরা নারীকে গ্রাস করার জন্য সামাজিক আইনগুলো (ধর্মীয় আইন) সাজিয়ে নিয়েছে ঈশ্বরের নামে নিজেদের মতো করে। এজন্য একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে ধর্ম সবচে’ বেশি ঠকিয়েছে নারীদের। আবার নারীরাই সে ধর্ম মন থেকে মানছে বেশি!

অবশ্য নারীরা মূলত আধ্যাত্মিক ঈশ্বরের পূজারি, তবে শিক্ষাহীন এইসব নারীকূল এটা সুস্পষ্ট করে বুঝতে সমর্থ নয় যে এসব ধর্মের মধ্যে রয়েছে মূলত পুরুষ শাষিত সামাজিক ঈশ্বর, যে ঈশ্বর দুবৃত্তদের ক্রীড়নক মাত্র।

গণদুবৃত্তায়নের কথা বলছি এ কারণে যে সমাজের মন্দ কাজগুলো যখন দলবেধে হয় এবং ভয়াবহ খারপ কাজেরও যখন সমর্থন জুটে তখন সমাজটা গণদুবৃত্তায়নের কবলে পড়েছে বলা চলে। এর পিছনে প্রধান মদদটা হচ্ছে দুর্নীতি। ‌‌’দুর্নীতি’ শব্দটি নানান অভিধা তৈরি করে। শুধু আর্থিক দুর্নীতি নয়, সর্বক্ষেত্রে সর্বদিক থেকে দুর্নীতি। এই দুর্নীতি যখন পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়, ঠিক তখনই গণদুবৃত্তায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

আজকে ধর্ষক, খুনি ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে যে, মিছিল সেটি এই গণদুবৃত্তায়ন এবং দুবৃত্তদের ক্রীড়নক সামাজিক ঈশ্বরের এক অতিকায় বহিঃপ্রকাশ। এখনই সতর্ক না হলে এই ঈশ্বরের আকার প্রকার বাড়তে বাড়তে গ্রাস করে নেবে সকল সত্য-সৌন্দর্য এবং আধ্যাত্মিকতা— এক পরম সত্তা, যেখানে মানুষ আশ্রয় খোঁজে, অন্ধভাবে হলেও খুঁজতে চায়।  


শেকস্ রাসেল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

নুসরাত হত্যা