শহীদুল আলম একজন কিংবদন্তী ফটোগ্রাফার। আমার এই ‘কিংবদন্তী’ বিষয়টাতে ঘোরতর আপত্তি আছে। এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তিনি ভারসাম্যপূর্ণ একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থার জন্য কী কী করেছেন বা আদৌ কিছু করেছেন কিনা।
বর্তমান পৃথিবীতে সবকিছু সিন্ডিকেট, কার জন্য কে বিবৃতি দেবে, কেন দেবে বা আদৌ দেবে কিনা এগুলো সিন্ডিকেট অনুযায়ী চলে। শত্রুর শত্রু বন্ধু হিসেবেও চলে, না হলে বাংলাদেশের বাম ঘরানোর মানুষের শহীদুল আলমের জন্য বিবৃতি দেয়ার কথা নয়। আবার “আমাকে ভালোবাসে তাই সে ভালো” এই থিওরিতে পড়েও অনেকে বিবৃতি দেয়, যেমন, তসলিমা নাসরিন দিয়েছেন।
কারও মুক্তির জন্য বিবৃতি দান ভালো, তবে এটিও খেয়াল রাখা দরকার যে ব্যক্তির মুক্তি চাওয়া সমষ্টির মুক্তির আকাঙক্ষাকে রোধ করছে কিনা। হ্যাঁ, সবকিছুর পরেও, যেহেতু মি. শহীদুল অালম ফৌজদারী কোনো অপরাধ করেননি, তাই তাকে মুক্তি দেয়া উচিৎ। তিনি সরকারের অপছন্দের ব্যক্তি হতে পারেন, কিন্তু সরকার তাকে পাকড়াও করতে পারে না, যদি না আইনের কোনো ধারায় তিনি কোনো অপরাধ করে থাকেন।
বিষয় হচ্ছে, শহীদুল আলমকে গ্রেফতারের চেয়েও গুরুতর অনেক মানাবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেশে প্রতিদিন ঘটে চলেছে। সেগুলোতে বিশিষ্টজনদের বক্তব্য কোথায়? সেক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতি কোথায়? সেসব ক্ষেত্রে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের বিবৃতি কোথায়? মানবাধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাওয়ার বিষয়ে একজন শহীদুল আলম এবং জরিনা সখিনার বিষয় একই হওয়া উচিৎ, এটাই তো আধুনিক সভ্যতা।
একে একে জেলেদের মাথা ন্যাড়া, আলোচনা ফেসবুকে
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় মাছ চুরির অভিযোগে সাত জেলেকে ধরে জোর করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের বদিউদ্দিনপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
ছাতকে কৃষককে হাত পা বেঁধে নির্যাতন
ছাতকের পল্লীতে পূর্ব বিরোধের জেরে হাত-পা বেঁধে সুনু মিয়া নামে এক কৃষককে অমানুষিক নির্যাতন করেছে প্রতিপক্ষ।
এই যে উপরের খবরটি এটি একটি গুরুতর বিষয়। ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, দেশের খেটে খাওয়া মানুষ, পরিচয়হীন মানুষ এভাবেই নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিদিন; এবং শহীদুল আলমদের ব্যাপারে বেশি আগ্রহ এই মানুষগুলোকে আরও বেশি করে আড়াল করে, অথচ একজন ফটোগ্রাফারের চেয়ে একজন কৃষক বা একজন জেলের জীবনমূল্য সমাজের প্রয়োজনীয়তা বিচারে বেশি বৈ কম নয়।
বিগত কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা সভ্যতা অলঙ্কারিক বিষয়গুলোকে সামনে এনে মৌলিক বিষয়গুলোকে আড়াল করেছে, যেহেত তাঁরা নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সমর্থ হয়েছে। কিন্তু এটা কি সত্য নয় যে তাঁরা তৃতীয় বিশ্বের শ্রমের ওপর নির্ভর করে তাঁদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করেছে?
ধরুণ, বাংলাদেশ থেকে চিংড়ী মাছ কিনে নিচ্ছে তাঁরা, আচ্ছা কিনে নিলেই কি সেটি ন্যায্য হয়ে যায়। হয় না। পোশাকও তাঁরা কিনে নিচ্ছে, কিন্তু ন্যায্যতা সেখানেও নেই। কারণ, ন্যায্য হলে পোশাক শ্রমিকদের জীবনমান এমন ভয়াবহ হতে পারে না। অতএব, এটি কৌশলে দাসপ্রথা ছাড়া কিছু নয়।
তাই শহীদুল আলমকে নিয়ে পশ্চিমা এবং তাঁদের দোসরদের যে মাতামাতি তার মধ্যে মানবিকতা যেমন আছে একপেশে চেতনাও আছে। কোনটা কার চোখে পড়ছে সেটিই মূল বিষয়।
আমার চোখে পড়ছে রাজনীতি, মানবিকতা নয়। এটি দরদ হলে বাংলাদেশে যাদের প্রতি দরদ প্রতিদিন দেখানোর কথা পশ্চিমারা বা পশ্চিমাদের পাপেটরা তাঁদের প্রতি দরদ দেখাচ্ছে না, দেখাচ্ছে কি? মানব মুক্তির জন্য এঁদের আদৌ কোনো মেনিফেস্টো এবং কর্মতৎপরতা অাছে কি?
শেকস্ রাসেল
লন্ডন, যুক্তরাজ্য