সহজ-সত্য-সরল মেনে নিতেই হবে। কারণ, তা সুন্দর, কারণ, তা সুখের অনুভূতিতে কোমল পরশ বুলায়। শুধু কাউকে না কাউকে সাহস করে সেই পরশটা বুলিয়ে দিতে হয়। সেই সাহসীদেরও অভাব নেই। সময় এসেছে, মনস্তত্ত্ব নতুন করে গড়বার, নতুন করে ভাববার।
আমি একটা বিল্ডিং এর দেয়ালে হেলান দিয়ে মোবাইল টিপছিলাম। একটা বাইকে একজোড়া যুবক যুবতি আমার সামনে থামল। বাইক থামিয়ে তারা কথোপকথন করছে। আমি একটু খেয়াল করলাম। কথোপকথন খুবই রোমান্টিক। যার প্রণয় অনুভূতি একদম তলানিতে, সেও এই আলাপ শুনে একটু চোখ উঁচু করে তাকাবে।
এজন্যই মনে হয় আমার তাকানো। যিনি বাইকের ড্রাইভার সিটে আছে সে অন্যকে বলছে, এতক্ষণ তো আমার মাথায় হেলমেটটা ছিল। এখন এটা তুমি পর। তাছাড়া সামনে অনেক বিজি রোড। পিছনে বসা জন আপত্তি জানিয়ে বলল, তাইলে তোমার মাথা খালি হয়ে যাবে না? দরকার নাই, তুমিই পর।
যারা এই পর্যন্ত লেখাটা পড়েছেন, তাদের অনুভূতি গুলো যা হতে পারে-
১. ভাইয়াটা কি অসাধারণ, নিজে না পড়ে হেলমেটটা আপুকে দিয়ে দিয়েছেন। কি স্যাক্রিফাইস, একদম সিনেম্যাটিক!
২. আপুটা কি দারুণ, কোনোভাবেই নিজের কথা চিন্তা করছে না। বারবার ভাইয়াটাকে হেলমেট ফেরত দিচ্ছে। মেয়েরা আজীবন এমনই বিসর্জন দিয়ে আসছে।
৩. এতো ঢং করার কি আছে? ড্রাইভারের মাথাতেই হেলমেট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এতো বাড়াবাড়ির কি আছে!
যারা ১ ও ২ নম্বর অনুভূতিতে বুদ হয়ে, মুখে একটা দীর্ঘ রোমান্টিক হাসি টেনে বসে আছেন, তাদের জন্য হাসি বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত একটা দুঃসংবাদ আছে।
বাইকের ড্রাইভার ভাইয়াটা না, আপুটা। সে-ই ড্রাইভ করে ভাইয়াকে ঢাকার রাস্তা ঘুরাচ্ছে, আর ভাইয়াটা হাসি মুখে তা উপভোগও করছে।
কেউ ধাক্কা খেয়ে থাকলে একটা ঘটনা বলি,
বছর তিনেক আগে একদিন টিএসসি বসে আছি। দেখি একটা ছেলে তার পেছনে একটা মেয়েকে নিয়ে বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার বসার ভঙ্গি দেখে চোখ গোল আলুর মত হয়ে গেল। সে বাইকের পেছনে সুবোধ মেয়ের মত একপাশে দু-পা দিয়ে বসেনি। বসেছে ছেলেদের মত, দু পাশে দু-পা দিয়ে। আমি এটা দেখে সার্কাস দেখার অনুভূতিতে হা করে তাকিয়ে আছি। সার্কাস!
অথচ মেয়েটা যেভাবে বসেছে, সেটাই আরামদায়ক, দুর্ঘটনা এড়াতে সেটাই সুবিধাজনক। সে সেই সুবিধাজনক অবস্থানটাই বেছে নিয়েছে। তারপরও তা আমার কাছে সার্কাস! সেদিন ধাক্কা খেয়েছিলাম।
আজ তিন বছর পর এসে, একটা কেন, দুটা মেয়েও বাইকের পেছনে ছেলেদের মত দুদিক দু-পা দিয়ে বসলেও ফিরে তাকাই না। কারন কিছু মেয়ে সাহস করে এরকম দৃশ্য স্বাভাবিক দৃশ্যে পরিনত করতে পেরেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
মেয়ে বাইক ড্রাইভ করছে আর ছেলে পিছনে বসে আছে- এই দৃশ্যে যারা ধাক্কা খাচ্ছেন, চোখ আলু বড় করে তাকিয়ে আছেন, ভয় নেই, তারা কালকে ঠিক হয়ে যাবেন।
পরশুদিন এরকম দৃশ্যে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। তার পরেরদিন ভাববেন, নিজের গার্লফ্রেন্ডটাও বাইক চালাতে পারলে মন্দ হতো না। আরেকটু আগ বাড়িয়ে কেউ কেউ হয়ত স্বপ্নও দেখবেন, একদিন তার বাইকের পিছে সারা ঢাকার শহর ঘুরবো।
সবই অভ্যস্ততা। থ্রী-ইডিওট মুভিতে কারিনাকে নিয়ে আমির খান স্বপ্ন দেখে, নববধূ ঘোটমা না তুলে, হেলমেট তুলবে। আপনিও একদিন এ স্বপ্ন দেখবেন, অপেক্ষা করুণ।
সহজ-সত্য-সরল মেনে নিতেই হবে। কারণ, তা সুন্দর, কারণ, তা সুখের অনুভূতিতে কোমল পরশ বুলায়। শুধু কাউকে না কাউকে সাহস করে সেই পরশটা বুলিয়ে দিতে হয়। সেই সাহসীদেরও অভাব নেই। সময় এসেছে, মনস্তত্ত্ব নতুন করে গড়বার, নতুন করে ভাববার।