ছোটো বাচ্চা অনেকগুলো বরই খেয়েছে, আঁটি সহ। সেগুলো পেটের মধ্যে আটকে গিয়ে বমি করছে, আর পেট ব্যাথা। পেটের নাড়ি এত ফুলে গেছে যে চামড়ার নিচে সেগুলোর আকৃতি বোঝা যাচ্ছে। এমন অবস্থা যে অপারেশনও লাগতে পারে।
মা টা কে অসুস্থ বাচ্চার পাশে চিন্তিত মুখে বসিয়ে রেখে কমবয়সী বাবা টা হাসপাতালের এমার্জেন্সি রুমের বাইরে চলে গেল, জানালার পাশে দাঁড়ালো। কি ব্যাপার?
দেখি বাবাটা কাঁদছে!!
বাচ্চাকে হারানোর ভয়ে বাবা টার চোখের নিচে অশ্রু জমে যাচ্ছিল, আর সে মুছছিল বারবার। এটা তো ভালোবাসাই, তাইনা, দূর্বল মূহুর্তে যেটা কষ্ট হয়ে বের হয়ে আসে, চোখ দিয়ে?
কিন্তু উপজেলাতে অপারেশনের সুবিধা নেই তাই শহরের সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে জেনে সেই বাবা যখন বাচ্চাকে নিয়ে এই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল, তখন তার চোখে ক্ষোভ, কণ্ঠে আক্রোশ।
চিন্তা করে দেখলাম, এটাও সেই ভালোবাসারই আরেকটা প্রকাশ।
আচ্ছা, পৃথিবীতে কি ভালোবাসা ছাড়া আর কোনো আবেগ আছে? বাকি সব আবেগ কি ভালোবাসার একেক ধরনের প্রকাশ না?
ভালোবাসার জন্য মানুষ অন্য মানুষকে হিংসা করে, ভালোবাসার পাত্রের কেউ ক্ষতি করছে মনে করলে তাকে ঘৃণা করে, এমনকি ভালোবাসার কারনে মানুষ মানুষকে খুনও করতে পারে। অদ্ভুত, তাই না!!
তাহলে কি সমস্যা ভালোবাসাতেই?
তা হবে কেন, জীবনের সৃষ্টি তো ভালোবাসাতেই। জড় পদার্থ দিয়ে তৈরি মহাবিশ্ব নিজেকে ভালোবেসেছিল বলেই প্রাণ সৃষ্টি করেছিল, তারপর সেখান থেকে মানুষ। যদি পদার্থবিদ্যা বা ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যৎ বানী অনুযায়ী একদিন সত্যি এই মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সময় হয়, তাহলে এই মানুষই যেন পারে তাকে টিকিয়ে রাখতে।
কিন্তু মানুষ এখনো নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, গোত্র বা জাতের জন্য, দেশের জন্য, অদৃশ্য স্রষ্টার জন্য ভালোবাসা গুলোকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগছে আর নিজেদের মধ্যে কলহ করে মরছে!!
কবে এই সবগুলো ভালোবাসা এক হবে?
একজন একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, প্রকৃত ভালোবাসা কি ।
হয়ত সবার আর সবকিছুর জন্য একত্রিত ভালোবাসাই প্রকৃত ভালোবাসা, যা আমাদেরকে বাঁচাবে, সৃষ্টিকে বাঁচাবে, মহাবিশ্বকে বাঁচাবে।