খুলনায় সংখ্যালঘু নির্যাতন শীর্ষক আলোচনা সভা

১

সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আজকের বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শনিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাত্বরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনা শাখার আয়োজনে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। ডা. শেখ বাহারুল আলমের সভাপতিত্বে ও মহেন্দ্রনাথ সেনের সঞ্চালনায় খুলনা বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড.অনির্বাণ মোস্তফা ও মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আলী ইনুসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।

ওলামা লীগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার দাবি জানিয়েছেন লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওলামা লীগ দাবি করেছে পাঠ্যপুস্তক থেকে হিন্দু সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে। এই দাবি এর আগে জামায়াত নেতা মুজাহিদ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে ওলামা লীগ কীভাবে এই দাবি করে।’

শাহরিয়ার কবির প্রশ্ন রাখেন, ‘সামনে দলের কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগ হবে কি না? সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম আর সংবিধানের মাথার ওপর বিসমিল্লাহ। এতে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই বিসমিল্লাহ সংযোজন করেন। আর এরশাদ সরকার এসে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংযোজন করেন।

রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকলে সেখানে সংখ্যালঘুরা সমান অধিকার ও তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না জানিয়ে শাহরিয়ার কবির দেশে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন এবং সংখ্যালঘু কমিশন করার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য যদি ভিন্ন মন্ত্রণালয় হতে পারে, তাহলে সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় হবে না কেন।’

শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০০৮ সালে সরকারে তিনজন হিন্দু মন্ত্রী ছিলেন, ২০১৪ সালের এই সরকারে মাত্র একজন হিন্দু প্রতিমন্ত্রী কেন? কেন একজন হিন্দুকে পূর্ণমন্ত্রী করা হলো না।’

বিচারপতি সামছুদ্দিন চৌধুরী মানিক জামাতকে রাজনীতির মাঠে জায়গা দেওয়া এবং রাজাকারদের বাংলাদেশে পুর্নবাসন করার ক্ষেত্রে জিয়া এবং এরশাদকে সমানভাবে দায়ী করেন। সংবিধান কাঁটাছেড়া করে তারা সংখ্যালঘু তত্ত্ব হাজির করেছে বলেও তিনি মত দেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের সময় কেন ধর্মীয় উগ্রবাদ, ধর্মীয় মৌলবাদ থাকবে? জামাত ইসলাম থেকে এসে নব্য আওয়ামী লীগ সেজে সাম্প্রদায়ীক হামলা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ২০০১ এ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যা ঘটেছে, এখন আবার তা কেন ঘটবে?

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, সংবিধানে বিসমিল্লাহ রেখে ধর্মনিরাপে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা অলীক মাত্র। দেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করতে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। পঁচাত্তর পরবর্তী পাকিস্তানপন্থি সরকারগুলো এখনো বাংলাদেশকে পকিস্তানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘঠিত চার টি হত্যার মধ্যে তিনটি হত্যা সংখালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে হয়েছে। এই দুষ্ক্রতিকারীদের অবিলম্বে শাস্তি দিতে না পারলে বাংলাদেশ তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

আলোচনা সভার শুরুতে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আজকের বাংলাদেশ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের খুলনাব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী।