১৯ মে (২০২১) তারিখে বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভার মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায়ের হাতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ’৭১-এর খুলনা অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শেখ কামরুজ্জামান টুকু বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায়ের হাতে এ সহযোগিতা অর্থ তুলে দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাগেরহাট-৪ আসনের সাংসদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বাগেরহাটের সভাপতি, অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা অ্যাড. শেখ আমিরুল আলম মিলন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি খুলনার সভাপতি এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম, খুলনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সাংবাদিক মহেন্দ্র নাথ সেন, বাগেরহাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী ফকরুল হাসান জুয়েল, বাগেরহাট কমিটির সহ-সভাপতি আনসারউদ্দিন সরদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার সভাপতি হুমায়ুন কবির ববি, সাবেক ছাত্রনেতা মীর জায়েসী আশরাফী জেমস্, সাংবাদিক বাবুল সরদার, শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি বাগেরহাটের আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া নিপু, শহীদস্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব গবেষক ও শিক্ষক আবিদা সুলতানা।
এছাড়াও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার অনেক গণমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক সমাজকর্মী কাজী মুকুল।
কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদজায়া এবং শহীদ সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল। সবসময় আমরা আপনাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকি। আপনারা আমাদেরকে জানাবেন, আমরা মানদা রায়ের মতো একাত্তরে নির্যাতীত বীর মাতাদের অবশ্যই যথাযোগ্য মর্যাদায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একজন বিরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্বরূপ সহযোগিতা করার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটি আমাদের আরও আগে করা উচিত ছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমরা এতদিন তার সম্পর্কে জানতে পারিনি। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা দিব্যেন্দু দ্বীপ-এর গবেষণা থেকে আমরা বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায়ের কথা জানতে পেরেছি। দ্রুতই আমরা তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করব, যাতে সরকারি গেজেটভুক্ত হতে তার কোনো সমস্যা না হয়। এ ধরনের মহত কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য আমি লেখক ও গবেষক দিব্যেন্দু দ্বীপ-কে ধন্যবাদ জানাই।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির খুলনার সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম বলেন, দেশ এখনও আমলা নির্ভরতা থেকে বের হতে পারেনি। আমলাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তারা সেটি যথাযথভাবে পালন করছে না। বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা কর্ণপাত করে না বলে গবেষক ও সাংবাদিক দিব্যেন্দু দ্বীপ আমাকে জানিয়েছে। বিষয়টি দু:খজনক। এরকম কারও সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের উচিত বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকি করা এবং একাত্তরের নির্যাতিত নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, নির্মূল কমিটির কাজটি ঠিক কাউকে সহযোগিতা করা নয়। আমরা গত ত্রিশ বছর ধরে ’৭১-এর ঘাতক দালালদের নির্মূলে রাজপথে আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবেই সহযোগিতার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। কিছু ক্ষেত্রে আমরা বাধ্যবাধকতা অনুভব করি। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা দিব্যেন্দু দ্বীপ-গবেষণা থেকে ফরিদপুরের বীরাঙ্গনা চারু বালা এবং বাগেরহাটের বীরাঙ্গনা মানদা রায়ের কথা জানতে পারি। তাদের জীবনের এ করুণ কাহিনী আমাদেরকে বিশেষভাবে স্পর্শ করে। নির্মূল কমিটি থেকে আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের এ দুই বীর মাতার পাশে দাঁড়াতে।
অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে দিব্যেন্দু দ্বীপ-কে পুত্র সম্মোধন করে বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায় বলেন, “এতদিন পরে আমাকে দিয়ে তোরা এসব বলালি! আমার জীবন কি আর কিছু বাকী আছে? আমি আর কিছু চাই না। আজকে তোরা যে সম্মান দিয়েছিস আমি তাতেই সন্তুষ্ট।”