শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হাওলাদার এখনও কেন সরকারি স্বীকৃতি পেলেন না?

follow-upnews
0 0

শহীদ আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ১৯৭১ সালে মোড়েলগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা এবং থানা আওয়ামী লীগের সংগঠক ছিলেন বলে এলাকায় রাজাকারেরা তাকে হত্যা করার জন্য খুঁজতে ছিল। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হাওলাদার ছিলেন মোড়েলগঞ্জের দু:সাহসী মুক্তিযোদ্ধা স.ম. কবির আহমেদ মধুর বড় ভাই। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আত্মগোপনের করার জন্য তিনি শশুর বাড়িতে আসেন। শশুর বাড়ি ছিল বাগেরহাট জেলা সদরের খাদ্দার গ্রামে খাদ্দার বাড়িতে। শশুর বাড়ির সবাইও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ছিলেন। তার শ্যালক সরদার আব্দুল জলিল ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ফলে এই বাড়িটির উপরও পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের নেক নজর ছিল। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ (১৬ ভাদ্র ১৩৭৭) তারিখে দিবাগত রাতে শশুর বাড়িতে মোতালেব হাওলাদার হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। পাকিস্তানি বাহিনীকে রাজাকারেরা খবর দিয়ে নিয়ে আসলে তিনি এবং তার সাথে ঐ বাড়ির দুই কিশোর দেলোয়ার হোসেন এবং আলতাফ হোসেনকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনী ভেবেছিল ঐ দুই কিশোর মোতালেব হাওলাদারেরই সন্তান। পাকিস্তানি বাহিনী ওনার ওপর এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে, মোতালেব হাওলাদারের সন্তানদেরও মেরে ফেলতে চেয়েছিল।

এই তিন জনকে বাগেরহাটের দড়াটানা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। দড়াটানা নদীর মধ্যে বর্ধিত একটি পুল ছিল যেখানে নোকা ভিড়ত। ঐ পুলের উপর নিয়ে তিন জনকে গুলি করে এবং বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়। বেয়নেট দিয়ে শহীদ আলতাফ হোসেনের হৃদপিণ্ড বের করে ফেলা হয়েছিল, যা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়। সময়টা তখন ভোররাত— ফজরের আজানের সময়।
হত্যাকাণ্ডের এই হৃদয় বিদারক ঘটান সহ্য করতে না পেরে ঐ কিশোরদের দাদী আয়তন বিবি, তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আব্দুল জলিলের মাতা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কয়েকদিনের মধ্যে মারা যান। কিশোরদ্বয়ের একজন দেলোয়ার হোসেন ছিলেন মোতালেব হাওলাদারের শ্যালক ছত্তার সরদারের ছেলে, আরেক কিশোর আলতাফ হোসেন ছিলেন তার শ্যালিকা গোলাপী বেগমের ছেলে— ঐদিন আলতাফ হোসেন তার মায়ের সাথে মামা বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মোতালেব হাওলাদারের পরিবারের প্রশ্ন— তিনি মুক্তিযোদ্ধা এটা সকলেই জানেন। তিনি ঐদিন শশুর বাড়িতে এসেছিলেন বিশেষ পরিস্থিতিতে আত্মগোপন করতে। তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলে পাকিস্তানি বাহিনী খুঁজে খুঁজে তার পিছু নিয়েছিল বুঝুন। তিনি মোড়েলগঞ্জের এবং বাগেরহাট জেলার একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও ছিলেন। আমরা বুঝতে পারি না যে, কেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনও সরকারি স্বীকৃতি পেলেন না।

Next Post

বাগেরহাটের বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায়কে সম্মাননাস্বরূপ সহযোগিতা করেছে নির্মূল কমিটি

১৯ মে (২০২১) তারিখে বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভার মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা মানদা রায়ের হাতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ’৭১-এর খুলনা অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান, বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং অনুষ্ঠানের […]
বাগেরহাট

এগুলো পড়তে পারেন