বুধবার মধ্যরাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে তার ছেলে তাহসিনুর রহমান নিকো জানিয়েছেন।
শিরিন বানুর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
তাহসিন বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার মা গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট নিয়ে যাওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়েছে। এই মহিয়সী নারীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার সকাল ১০টায় তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তারপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কুমিল্লায়; বাদ আছর সেখানে জানাজার নামাজের পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
তিনি স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
১৯৫০ সালের ২ সেপ্টেম্বর পাবনায় খোন্দকার শাহজাহান মোহাম্মদ ও মা সেলিনা বানু দম্পতির ঘরে জন্ম নেন শিরিন বানু।
মা পাবনা জেলার ন্যাপ সভানেত্রী এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের এমপি ছিলেন; বাবাও ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত।
রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম নেওয়ায় ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন শিরিন স্কুলজীবনেই ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৯৭০-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী এবং কিছু সময়ের জন্য পাবনা জেলা মহিলা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদিকাও ছিলেন।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদারদের আক্রমণ শুরু হলে ২৭ মার্চ পাবনা পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেয়। সেই যুদ্ধে তিনি বীরকন্যা প্রীতিলতাকে অনুসরণ করে পুরুষ বেশে অংশ নেন।
পরদিন পাবনা টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ৩৬ জন পাকসেনার সঙ্গে জনতার তুমুল যুদ্ধ হয়, যাতে তিনিই ছিলেন একমাত্র নারী যোদ্ধা। এই যুদ্ধে ৩৬ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।
৯ এপ্রিল নগরবাড়িতে যুদ্ধের সময় পাবনার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধের কন্ট্রোল রুমের পুরো দায়িত্বে ছিলেন তিনি।