Meradia Genocide (2o Nobvember 1971):
The place of genocide has not been preserved though it is in the Dhaka city
মেরাদিয়া গণহত্যাটি ঘটেছিল ১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর, ঈদের দিন সেদিন ছিল শনিবার। মেরাদিয়া গ্রাম সংলগ্ন মেরাদিয়া হাট— যেটি তখন ঢাকার পুরাতন এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি হাট। মেরাদিয়া গ্রাম থেকে ১১ জনকে ধরে নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে এই হাটে। লক্ষ্মী রাণী মিস্ত্রির স্বামী ফণীন্দ্র সরকারও মেরাদিয়া গণহত্যার একজন শিকার। মেরাদিয়া গ্রামে বাস করত তখন শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। তাই লুটপাটের উদ্দেশ্যে গণহত্যাটি ঘটেছিল এমন কিছু নয়। জাতিগত ঘৃণা এবং হিন্দুরা পালিয়ে গেলে তাদের জায়গা সম্পত্তি দখলে নেওয়া যাবে— এরকম মনোভাব তখন এদেশীয় কিছু রাজাকারের মনে ছিল। অনেকে তারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করলেও তারাই ছিল গণহত্যার প্রধান ইন্ধনদাতা। তাদের কখনো চিহ্নিত করা যায়নি, সে চেষ্টাও করা হয়নি। শহীদ জায়া এবং সন্তানদের ইচ্ছা— অন্তত গণহত্যার স্থানটি চিহ্নিত হোক, সবাই জানুক যে, পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের দোসরদের হাতে এরকম একটি বর্বর হত্যাকাণ্ডের শিকার আমাদের স্বজনেরা হয়েছিল।
শহীদ জায়া লক্ষ্মী রাণী মিস্ত্রি
Martyr’s wife Lakshmi Rani Mistry
আমি আর কতদিন বাঁচব, কিন্তু ছেলেমেয়ে নাতি নাতনিদের জন্য খুব চিন্তা হয়
How long will I live, but I feel worried about my children and grandchildren
নামঃ লক্ষ্মী রাণী মিস্ত্রী
বয়সঃ ৮২
পিতাঃ পঞ্চানন মিস্ত্রী
মাতাঃ কণকা রাণী মিস্ত্রী
স্বামীঃ শহীদ ফণীন্দ্র সরকার
ঠিকানাঃ ৯৮, মেরাদিয়া হিন্দুপাড়া, বনশ্রী, ঢাকা-১২১৯
তখন এখানে আমাদের সবার ঘরবাড়ি ছিল কাঁচা— উপরে টিন, চারপাশে মাটির দেয়াল। রাস্তাঘাটও ভালো ছিল না। বাড়ীর আশেপাশে ক্ষেতখামার ছিল। আমাদের গরু ছিল। সাত ছেলে মেয়ে তখন আমাদের। ওদের নিয়ে কোনোমতে চলত। আমার স্বামী টিকাটুলীতে একটা গ্লাস ফ্যাক্টরিতে কাজ করত। কাঁচের জিনিসপত্র, যেমন, হারিকেনের চিমনি তৈরি করতেন তিনি। আমি দুএকবার স্বামীর কারখানায় গিয়েছি। পরিবারটি চালাতে খুব পরিশ্রম করতে হত তাকে। ঘটনার দিন দক্ষিণের মাঠে গরু আনতে গিয়েছিলেন তিনি। গরু নিয়ে বাড়ীতে আসার একটু পরেই পাকিস্তানি বাহিনী আসে। আমাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। ভয়ে আমরা কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। ওরা বন্দুকের বাট দিয়ে ওনাকে খুব মারধর করে। আমি তাদের হাত-পা ধরে খুব কান্নাকাটি করি। ছেলেমেয়েরাও কান্নাকাটি করছিল। মারধর করে ওরা চলে যায়। এরপর একটু পরেই ছয় সাত জনের আরেক দল পাকিস্তানি সেনা আসে। ওরা আমার স্বামীকে ঘাড় ধরে নিয়ে যায়। আমি পিছন পিছন যাচ্ছিলাম, তখন সবাই আমাকে যেতে নিষেধ করলো। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারি যে, ওনাকে এবং আরো যাদের ধরে নিয়ে গিয়েছিল সবাইকে পাকিস্তানি সেনারা মেরাদিয়া হাটে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে। লাশ আমরা আনতে পারিনি। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি নৌকায় করে কাঁঠালদিয়া গ্রামে চলে যাই। আমার তো তখন দুধের বাচ্চাও ছিল। অনেক কষ্ট হয়েছিল। মুক্তিবাহিনী থেকে আমাকে খাবার দিয়ে তখন সহযোগিতা করা হয়েছিল। রামপুরার মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী আমার খোঁজখবর নিতেন। দেশ স্বাধীনের পরে বাড়ীতে আসি। এরপর আমার কী যে কষ্ট করতে হয়েছে! খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়েছে। আমার স্বামী একাই তো শুধু আয় করতেন, ওনার আয় ছাড়া আমাদের চলা সম্ভব ছিল না। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা কাজ করা শুরু করে, আমি কাজ করতাম। তখন তো এদিকে কোনো শহর ছিল না, পরে শহর এসে আমাদের গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। আমাদের তো কোনো উন্নতি হয়নি। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারিনি। বনশ্রী আবাসিক এলাকায় আমরা জমি হারিয়েছি। সেসব চিন্তা করে আর লাভই বা কী! আমি আর কতদিন বাঁচব! কিন্তু ছেলেমেয়ে নাতি নাতনিদের জন্য খুব চিন্তা হয়।