আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থাকবে না। অষ্টম শ্রেণি শেষে হবে এই পরীক্ষা। তখন এই পরীক্ষার নাম হবে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষা। এখন অষ্টম শ্রেণি শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা হয়।
২০০৯ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণি শেষে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। এ পরীক্ষা নিয়ে কয়েক বছর ধরেই সমালোচনা চলছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব হুমায়ূন খালিদ গতকাল সোমবার বলেন, এ সিদ্ধান্ত এখন আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে। হাতে সময় কম থাকায় শেষবারের মতো এ বছর পঞ্চম শ্রেণি ও অষ্টম শ্রেণি শেষে এখনকার মতো পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছিলেন, যেহেতু প্রাথমিক স্তর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হয়েছে, সুতরাং সমাপনী পরীক্ষা অষ্টম শ্রেণি শেষে হবে। সমাপনী পরীক্ষার সিদ্ধান্ত যেহেতু মন্ত্রিসভায় হয়েছিল, তাই এ বিষয়ে শিগগিরই সেখানে সিদ্ধান্ত হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের জন্য গতকাল এক সভায় আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমান ধারায় চলবে। অর্থাৎ যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি আছে, তা অব্যাহত থাকবে। শুধু পরীক্ষাসহ শিক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু বাধ্যতামূলক, তাই এখন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক। এ জন্য প্রয়োজনে আইন সংশোধন করা হবে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রমও শিগগিরই নতুনভাবে প্রণয়ন করা হবে।
জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে সরকার ১৮ মে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করে। এ সিদ্ধান্ত কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হলেও আপাতত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি এখনকার মতোই চলবে। তবে যে ৭৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু করা হয়েছে, সেগুলোর শিক্ষকদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোনো পরিবর্তন হবে না। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে জটিলতা হবে না। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে প্রাথমিক স্তর আছে। এসব বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কোনো এলাকায় যদি নতুন করে অষ্টম শ্রেণি পড়ানোর মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয়, তখন ওই এলাকার কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু করা হবে। বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এত দিন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হলেও আগামী বছর থেকে অষ্টম শ্রেণি শেষে যে পরীক্ষাটি হবে, সেটি নেওয়া হবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে।
পঞ্চম শ্রেণি শেষে সমাপনী পরীক্ষা না হলে প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া হবে কিসের ভিত্তিতে—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, পঞ্চম শ্রেণি শেষে নয়, অষ্টম শ্রেণি শেষেই মেধার ভিত্তিতে প্রাথমিক বৃত্তি দেওয়া হবে। আর শিক্ষানীতির আলোকে মাধ্যমিক শিক্ষা যেহেতু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হবে, তখন প্রাথমিক বৃত্তির সময়কাল দশম শ্রেণি পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া উপবৃত্তি দিয়ে এ সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা করার উদ্দেশ্য হলো, এই শিক্ষা হবে মৌলিক। এই শিক্ষা এমন হতে হবে, যাতে কেউ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর আর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও যেন জীবন চালাতে তার বেগ পেতে না হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষাক্রম তৈরি করতে হবে। কোথায় পড়ানো হলো, সেটা বড় কথা নয়; কী পড়ছে, সেটাই বড় বিষয়।
সূত্র: প্রথম আলো।