ক্যামেরা ট্রায়ালের শ্রমিক আন্দোলন এবং প্রকৃত বাস্তবতা, প্রেক্ষিত মে দিবস

বাংলাবাজার
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মে দিবসের র‌্যালি। ছবিটি ইন্টারনেট থেকে পাওয়া।

প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হওয়ার জন্য একটি র‌্যালি বাংলাবাজার থেকেও গিয়েছে। তারাই নিচের শিশুটিকে “মহান মে দিবস” খচিত তাজটি পরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু শিশুটি এই দিবস সম্পর্কে এক বিন্দুও জানে না, অধিকার তো অনেক পরের কথা।

উনি কারো বেতনভূক্ত নয়, তাই কাজ না করলে তার চলবে না। মে দিবস তখনই সফল হবে যদি সরকার বা কোনো শ্রমিক সংগঠন তাদের আজকের উপার্জনের ব্যবস্থাটা করতে পারে। সেটি না করলেও সমস্যা ছিলো না যদি মুক্তির বার্তাটাও তার কাছে পৌঁছাত। উনি তো জানেন না আসলে কিছুই।
পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা আলোচনা করছিলাম বিষয়টি নিয়ে। মে দিবস বলে কথা নয়, ঠিক কেমন ব্যবস্থা হলে দিনমজুর বা এরকম যারা নিজস্ব ছোট ছোট পেশায় নিয়োজিত তারা ছুটি কাটাতে পারবে। খোঁজ নিয়ে জানলাম, এসব কাজে উন্নত বিশ্বের দেশে অনেক উপার্জন, তাই তারা স্বেচ্ছায় ছুটি কাটাতে পারে। আবার ছুটি কাটানোর বাধ্যবাধকতাও সেসব দেশে আছে। আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়ায়ে থাকলাম এটা দেখার জন্য যে, যে শ্রমিক দিবসে কোনো সেবা গ্রহণকারী তাকে কিছু বেশি টাকা দেয় কিনা, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটল না।
‘বিক্রি’ হবার প্রত্যাশায় প্যারিদাস রোডে টুকরি রেখে বসে আছে কয়েকজন শ্রমিক।
বাংলাবাজারের আল বারাকা প্রকাশনীতে পরিচারকের কাজ করে রুবেল। কোনো ছুটি নেই তার, আজকেও (মে দিবস) না।
প্রতিষ্ঠানটি সরকার এবং জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহান মে দিবসেও খোলা রয়ছে।

শুধু এই প্রতিষ্ঠানটিই নয়, খোলা রয়েছে বাংলাবাজারের বেশিরভাগ প্রকাশনী অফিশ। এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়— ২০১৩ সালে মানব বন্ধন করেছিলো, বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করে বাংলাবাজারের প্রকাশকগণ (বাপুসের অন্তর্ভুক্ত যারা বিশেষ করে, যেহেতু বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি উপস্থিত থাকেন তাই ধরে নিতে হবে এটা বাপুসের সবার দাবী) গাইড বই প্রকাশ করার স্বাধীনতা চান। এসব বেশিরভাগ প্রকাশনী চলছে লেখক ও সম্পাদক ছাড়া, বই যে মানহীন সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। সবচে’ বড় কথা— গাইড বই যে সর্বাংশে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর সেটি তো উন্নত বিশ্বে গবেষণায় প্রমাণিত।

ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা সবাই বিখ্যাত প্রকাশক। প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক তারা। ওনারা আইনের সংশোধন চাচ্ছেন, এর মানে আইন প্রচলিত থাকলে তারা সেটি মানেন, আসলে কি তাই? নিচের ছবিগুলো দেখলেই বোঝা যে, আসলে তারা আইন মানেন না। [ছবিটি ইন্টারনেট থেকে নেওয়া]
বাইরে বিশ্বপরিচয় লেখা থাকলেও এটি মূলত আল-বারাকা প্রকাশনীর অফিশ। ভেতরে কাজ চলছে পুরোদমে। কোনো দিবসের তোয়াক্কা থাকে না এখানে।
এটি পুঁথিনিলয় প্রকাশনীর অফিশ। মে দিবসে অফিশটি খোলা রয়েছে এবং ভেতরে কাজ চলছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিককে দেখা যাচ্ছে উপরের ছবিটিতে আইন সংশোধনের দাবীতে আন্দোলনরত। তিনি বাপুস-এর সহ-সভাপতিও ছিলেন।
মাদার্স পাবলিকেশন্স-এর অফিশটিও একই ভবনে (গ্রেট ওয়াল শপিং সেন্টার) অবস্থিত। সেটিও যথারীতি খোলা রয়েছে। এটির মালিকও আইনের উপধারা সংশোধনের দাবীতে আন্দোলন করেছেন। এবং বাপুসের একজন পরিচালকও তিনি।
গ্রেট ওয়াল শপিং সেন্টারটি মোট পনেরো তলা। পাঁচ তলা পর্যন্ত শপিং, এরপর বিভিন্ন কারখানা ও অফিশ। প্রকাশনা অফিশ দু’টি দেখে বোঝার উপায় নেই যে, প্রশস্ত এ ভবনটি কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। ভেতর ঘুরে আসলেই দেখা যাবে ভবনটিতে প্রতি পদে পদে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয়েছে। যেহেতু এই ভবনের কোনো আবাসন নেই তাই মে দিবসে লিফটি বন্ধ থাকার কথা ছিলো, কিন্তু বন্ধ নেই, কারণ ভেতরে বিভিন্ন অফিশ খোলা রয়েছে।
কাজ চলছে পুরোন ঢাকার অলিগলিতে অবস্থিত সকল বাঁধাই কারখানায়।

লাগাতার কর্মঘণ্টা, ছুটিগুলো না দেওয়া, নিয়োগপত্র না থাকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন ছাত্র

ব্যবসার নামে এসব কী চলছে? শুধু মে দিবস বলে কথা না, শুধু প্রকাশনী জগতের কথাই যদি বলি তাহলে বলতে হবে সেক্টরটি চলছে অব্যবস্থাপনা, চৌর্যবৃত্তি এবং মারাত্মক শ্রম শোষণ এবং ন্যায়হীনতার মধ্য দিয়ে বলছিলেন প্রকাশনীতে কর্মরত কয়েকজন।

তথ্য, ছবি এবং মন্তব্যধর্মী এই প্রতিবেদনের শুরতে আমরা দেখলাম যে, মে দিবসে বাম দলের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি র‌্যালির ছবি, কিন্তু তাদের ভূমিকা আসলে র‌্যালি পর্যায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মূল জায়গাতে কতটুকু কাজ করতে পারছে তারা? সরকারইবা মালিকদের কতটুকু বাধ্য করতে পারছে?