ক্লাসের সময় প্রাইভেট পড়ানোর প্রতিবাদ করায় জকিগঞ্জ সরকারি কলেজের ব্যবসা শাখার এক ছাত্রীকে বুধবার সাময়িক বহিস্কার করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কলেজের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করবেন আজকে।
বহিস্কৃত ছাত্রী একাদশ শ্রেণীর রেজওয়ানা রশিদ তালুকদার জানায়, কলেজে ক্লাস না নিয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রফেসার এহসানুল হক কলেজ ক্যাম্পাসে ব্যাচ গঠন করে ১ হাজার টাকা ফি নিয়ে সকাল ১১ টা থেকে প্রাইভেট পড়ান। আমিও স্যারের প্রাইভেটের ছাত্রী। আমি স্যারকে ক্লাসের সময় প্রাইভেট না পড়ানোর অনুরোধ করে ক্লাস নেয়ার কথা বলায় স্যার আমাকে খারাপ ভাষায় গালি দিয়ে লাঞ্চিত করেন। কিছুক্ষণ পরে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মল্লিকা দেবী ম্যাডাম অফিসে ডেকে নিয়ে আমাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে জানিয়ে নোটিশ বোর্ডে নোটিশ জারি করেন।
কলেজ ক্যাম্পাসের নোটিশ বোর্ডে গিয়ে দেখা যায় ঔদ্ধত্য এবং অমার্জিত আচরণের জন্য ব্যবসা শাখার ছাত্রী রেজওয়ানা রশিদ তালুকদারের সাময়িক বহিস্কার নোটিশ টানানো রয়েছে।
ছাত্রীর বাবা রশিদ আহমদ তালুকদার জানান, তার মেয়ে ক্লাস টাইমে প্রাইভেট না পড়ানোর জন্য স্যারকে অনুরোধ করায় স্যার ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লীল কথা বলে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সামনে তার মেয়েকে লাঞ্চিত করেছেন। পরে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বহিস্কার করেন। বিষয়টি শুনে তিনি তাৎক্ষণিক কলেজে গিয়ে অধ্যক্ষ মল্লিকা দেবী ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের স্যারকে বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে বারবার অনুরোধ করলেও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান তার মেয়ে অনিয়মিত ছাত্রী। তিনি তার মেয়ে কলেজের নিয়মিত ছাত্রী জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করার পর হাজিরা খাতায় দেখা যায় সে নিয়মিত ছাত্রী। ক্লাস টেস্ট পরিক্ষায়ও সে নিয়মিতভাবে পাশ করেছে। কিন্তু ঔদ্ধত্য এবং অমার্জিত আচরণ কী করেছে তার মেয়ে তাও বলেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মল্লিকা দেবী। বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে তিনি অনুরোধ করলেও কলেজের অধ্যক্ষ কর্ণপাত না করে বহিস্কার আদেশ চূড়ান্ত বলে জানান।
ছাত্রীর বাবা জানান, তার মেয়ে অষ্টম শ্রেণী থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের শিক্ষা বৃত্তিসহ একাধিক বৃত্তি পেয়েছে। বুধবার সরকারি কলেজ থেকে বহিস্কার করার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তিনি বলেছেন, শনিবার থেকে কলেজে অর্ধ বার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হবে। তার মেয়ের পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত। তিনি তার মেয়েকে কলেজে ভর্তি বহাল রাখার দাবী জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোবাশশেরুল ইসলাম ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং ক্লাসের সময়ে প্রাইভেট পড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহবানও জানিয়েছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, জকিগঞ্জ সরকারি কলেজে ক্লাস বলেতে কিছুই নেই। ক্লাসের সময় এক হাজার টাকা ফি দিয়ে প্রাইভেট পড়তে হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী কলেজে নিয়মিত আসতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। কলেজে নিয়মিত কোন ক্লাস হয় না। বহিস্কারের ভয়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা কথা বলেন না বলেও তারা জানায়। রেজওয়ানা রশিদের সহপাঠীরা কলেজে টাকা ছাড়া ক্লাস নিতে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাবোর্ডের উর্ধতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে রেজওয়ানার ভর্তি বহাল ও প্রফেসার এহসানুল হকের অপসারণ দাবী করেছে।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রফেসার এহসানুল হক বলেন, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের কারণেই এই ছাত্রীকে বহিস্কার করা হয়েছে। বহিস্কারের বিষয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ভালো জানেন।
বহিস্কার বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মল্লিকা দেবীর সাথে তার মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, কলেজে ছাত্রী বহিস্কারের ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। বহিস্কৃত শিক্ষার্থী লিখিতভাবে বিষয়টি তাকে অবগত করলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কোন আলোচনা ছাড়াই একা সিদ্ধান্ত নেন বলেও তিনি জানান।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার বলেন, ক্লাসের সময় ক্লাস না নিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর কোনো নিয়ম নেই। সরকারি কলেজে ক্লাসের সময় যদি সত্যি প্রাইভেট পড়ানো হয় তাহলে খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
খবর : জাকিগঞ্জটুডে