বৃহস্পতিবার শরীয়তপুর পৌরসভার রাজগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন পালং উত্তর বাজার সুরুচি হোটেলে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় তাদের হাতেনাতে আটক করে দুদক। শরীয়তপুরের একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দাবিকৃত টাকা গ্রহণের সময় তাদের আটক করা হয়। মাদারীপুরের ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মজুমদার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন।
দুদকের ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক নাসিম আনোয়ারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বিশেষ দল এই অভিযান চালায়। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপ-পরিচালক ফজলুল হক বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। অভিযানের সময় দুদকের সহকারী পরিচালক এএসএম সাজ্জাদ হোসেন, দুদকের পরিদর্শক বিজন কুমার রায় ও শরীয়তপুর জেলার দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন খানসহ ৭ সদস্যের দল উপস্থিত ছিলেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, গত বছরের ২ ডিসেম্বর শরীয়তপুরের পালংয়ে ছয়টি দোকান পুড়ে যায়। এর মধ্যে তুলি ফার্নিচার অ্যান্ড স্টিল ও আরও ২ দোকানের মালিক ব্যবসার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড শরীয়তপুর শাখা হতে সিসি ঋণ নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে এই ঋণের বিপরীতে সিকদার ইন্স্যুরেন্সে বীমা পলিসি করেছিলেন। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বীমার টাকা দাবি করতে সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস অফিসের প্রতিবেদন প্রয়োজন ছিল। প্রতিবেদনের জন্য ফায়ার সার্ভিস অফিসে গেলে উপ সহকারী পরিচালক মজুমদার মো. মাহফুজুর রহমান জানান ক্ষতিপূরণ বাবদ যত টাকার ফায়ার রিপোর্ট দেওয়া হবে সেই টাকা ৩ শতাংশ তাকে ঘুষ দিতে হবে। যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
ঘুষের টাকা আরও কমানোর দাবি করা হলে, মাহফুজুর অন্তত ২ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে ফায়ার সার্ভিসের রিপোর্ট দেওয়া হবে না বলে দোকান মালিকদের জানিয়ে দেন। একপর্যায়ে তিন দোকানের মালিক এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। সেই অনুযায়ী ঘুষের প্রথম কিস্তি বাবদ পঁচিশ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিল।
তুলি ফার্নিচারের মালিক হাকিম মাতবর, মের্সাস আরিয়ান এন্টারপ্রাইজের মালিক আফজাল হোসেন, মের্সাস খান এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহিন খানের কাছ থেকে খরচ বাবদ ঘটনার দুই সপ্তাহ পর ১৮ হাজার টাকা নেন ফায়ার সার্ভিসের দুই কর্মকর্তা। ১৯ জানুয়ারি ফের তাদের কাছ থেকে ৩ শতাংশ হারে ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ঘুষ নিতে আসেন। তার ভিত্তিতে আজ দুপুরে ব্যবসায়ীরা ২৫ হাজার টাকা দেন।
বিষয়টি দুদককে অবহিত করা হলে সংস্থাটির পক্ষ আগে থেকেই ফাঁদ পাতা হয়। শেষ পর্যন্ত দুদকের ফাঁদে পা দিয়ে ঘুষ নেওয়ার সময় ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের মাদারীপুরের উপ-সহকারী পরিচালক মজুমদার মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ও ভোলার উচ্চমান সহকারী সাজ্জাদুল ইসলাম হাতেনাতে ধরা পড়েন।
দুদকের ঢাকা বিভাগের পরিচালক নাসিম আনোয়ার সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসায়ীদের কাছে ঘুষ নেওয়ার সময় দুজনকে হাতেনাতে আটকের পর দণ্ডবিধির ১৬১ ও ১০৯ ধারার ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি আইনে ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। আসামিদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংবাদ : বাংলা ট্রিবিউন