ঢাবি ছাত্রলীগ নেতার প্রহারে সঙ্কটাপন্ন ঢাবি ছাত্র

ছাত্র লীগের তাণ্ডব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের ছোট দোকানে এক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে ইসমাইল নামে সাধারণ একছাত্রের হালকা ধাক্কা লাগায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রকে বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ছাত্র লীগের তাণ্ডব

এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কাছে অনেক কাকুতি-মিনতি করলেও রেহাই পায়নি ওই শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে মারধরের ফলে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে ওই ছাত্রকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাবির বিজয় একাত্তর হলে এ নির্মম ঘটনাটি ঘটে। আরিফুল ইসলাম আরিফ (আরিফ মাহমুদ) নামে ওই ছাত্রলীগ নেতা হলেন- ঢাবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ।

আরিফ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের অনুসারী। এর আগেও অপকর্মের কারণে ২০১৫ সালের নভেম্বরে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশ আটক করে বলে হল সূত্র জানায়।

আর ভূক্তভোগী ওই ছাত্র হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং বিজয় একাত্তর হলের আবাসিক ছাত্র ইসমাইল।

আরিফের সঙ্গে হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হল ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির রাসেল আহমেদ’র অনুসারী।

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, হলের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঘটনার সূত্রপাত। সেখানে ছাত্রলীগ নেতা আরিফের সঙ্গে ওই ছাত্রের সামান্য ধাক্কা লাগে।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতা শুরুতে পানিশূন্য ফিল্টারের জার দিয়ে তাকে আঘাত করেন। পরে তাকে টেনে দোকানের বাইরে এনে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

নেতা মারছেন দেখে ছুটে আসেন তার কর্মীরাও। লিফটের সামনে দ্বিতীয় দফায় ৫-৬ মিনিট চলে মারধর। এরপর নেয়া হয় হলের মাঠে।

মাঠটির ক্যান্টিনের সামনের অংশে, ব্যাডমিন্টন কোর্টে ১৫-২০ জন মিলে আবার মারধর করে। এসময় ছেলেটি ছেড়ে দেয়ার জন্য আর্তনাদ করছিল।

এসময় অনেকে জড়ো হয়ে গেলে তাকে নেয়া হয় ক্যান্টিনের ভিতরে। সেখানে ২৫-৩০ জন মিলে আবারও তাকে মারধর করে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়।

পরে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হাওলাদার ঘটনাস্থলে এসে ক্যান্টিনের পেছনের গেইট দিয়ে তাকে বের করে দেন। পরে তাকে একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে ছাত্রলীগের একটি সূত্র।

অপর এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে ওই ছাত্র নিস্তেজ হয়ে যায়। এসময় তিনি অনবরত বমি করতে থাকেন। এতে অনেকে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন।

এসময় তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ওই ছাত্রকে বলেন, তুই শিবির। আরেকজন বলে ওরে শিবির ব্লেইম দে, তাইলেই দেখবি সব ঠাণ্ডা।

প্রত্যক্ষদর্শী হল সূত্র জানা গেছে, আরিফের পাশাপাশি হামলায় অংশ নেয়া ছাত্রলীগের অন্যরা হলেন- মনোবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের আবু ইউনুস, আরবি বিভাগের ফাহিম হাসান, মার্কেটি বিভাগের কায়েস জিয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাব্বির শুভ। এরা সবাই তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

এছাড়া দ্বিতীয় বর্ষ থেকে হামলায় অংশ নেয়- মনোবিজ্ঞান বিভাগের ওয়াহিদ আনোয়ার রনো, হিমু, মো. আরিফুল ইসলাম, কাজী তানভীনসহ (ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ) ও অজ্ঞাতনামা কয়েকজন। হলের সিসিটিভি ফুটেজেও এদের ছবি থাকতে পারে।

এ বিষয়ে হল ছাত্রলীগের সভাপতি ফকির আহমেদ রাসেলকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেন নি। ফোন করে পাওয়া যায় নি ঘটনার মূল হোতা আরিফুল ইসলাম আরিফকেও।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ঘটনার সত্যতা পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ জেড এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাটি শুনে আবাসিক শিক্ষকদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে যারা জড়িত- তাদের অবশ্যই কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব চলবে না। এই ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন- ছাড় দেয়া হবে না। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।


খবরের সূত্র : অনলাইন