যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং শীর্ষনেতাদের ফাঁসিতে চাপের মুখে থাকা জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল পর্যায়ের কিছু কর্মী আইএসে যোগ দিয়েছেন বলে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এ জঙ্গি গোষ্ঠী দাবি করেছে।
আইএসের সাময়িকী দাবিক-এর চতুর্দশ সংখ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন বাংলাদেশ শাখার কথিত প্রধান শেখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ।
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ইসলামী দল জামায়াতের নেতাকর্মীরা জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল। তবে দলটি তা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এর মধ্যেই আইএসের বাংলাদেশ শাখার কথিত প্রধানের মুখ থেকে এ বক্তব্য এল।
বাংলাদেশে বিদেশিসহ শিয়া, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর হামলায় আইএসের দায় স্বীকারের বার্তা এলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ গোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকার খবর নাকচ করা হচ্ছে।
জামায়াতের বিরোধিতাকারী আইএসের নেতা আল-হানিফের কাছে দাবিক প্রশ্ন রাখে- সরকার তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজনকে ফাঁসি দেওয়ার পর তার দলের অনুসারীরা কী শিক্ষা নিয়েছে?
উত্তরে আল-হানিফ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ‘একই রকম’ ঘটনা ঘটেছে মিশর ও ইরাকে। যারা ধর্মচ্যুত এবং যারা কাফেরদের সঙ্গে মিত্রতা করে, আল্লাহ এ পৃথিবীতেই তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মী শিরক ছেড়ে বাংলার খিলাফতের সৈনিক হিসেবে যোগ দিচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলিমরা ইসলামকে ভালোবাসলেও মুরতাদদের প্রভাবে তারা কুরআন-সুন্নাহ মেনে চলেন না।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলা নিজেদের বলে দাবি করে আল-হানিফ বলেন, কাফের, দলচ্যুত, কাদিয়ানি, হিন্দুদের বিরুদ্ধে এসব অভিযানে চালানো হয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থি এবং বিএনপিকে পাকিস্তানপন্থি বলেও আখ্যায়িত করেন আইএস নেতা।
মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের প্রশিক্ষণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু জান্দাল নামের ২৩ বছরের এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছে দাবিক-এর এই সংখ্যায়।
আবু জান্দালের পরিচয়ে বলা হয়েছে, তার বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, যিনি ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে নিহত হন।
নয় পৃষ্ঠার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে আল-হানিফ বলেন, ভূ-অবস্থানগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ঘাঁটি বানাতে বাংলাদেশকে পছন্দ করছে আইএস; আর এখান থেকেই ভারত ও মিয়ানমারে হামলা চালাতে চান তারা।
ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে হামলা চালালেও ভারতে এখনও কোনো হামলা চালায়নি আইএস।
জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা দুর্বল হওয়ার প্রেক্ষাপটে কয়েক বছর আগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে আইএস। ইরাক-সিরিয়ার কিছু এলাকাজুড়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় তারা।
তবে বহুজাতিক হামলার মুখে অনেকটা কোনঠাসা হওয়ার পর বর্হিবিশ্বে হামলা চালাতে দেখা যাচ্ছে আইএসকে। কয়েক মাস আগে প্যারিসে ব্যাপক হামলা চালিয়ে শতাধিক মানুষকে হত্যার ঘটনাটি বিশ্বজুড়ে ছিল আলোচিত।
সূত্র : নতুনসময়