পিসিপি নেতা রমেল চাকমার হত্যাকারী মেজর তানভীরের ফাঁসির দাবিতে চট্টগ্রামে পিসিপি’র বিক্ষোভ

আদিবাসী

আদিবাসী

সেনাবাহিনী কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে বৃহত্তর পিসিপি’র নান্যাচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্র রমেল চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ির পানছড়ি ও দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

অন্যায়ভাবে ধরাপাকড়, নিপীড়ন-নির্যাতন, হত্যা বন্ধ কর এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে সেনাবাহিনী কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে পিসিপি’র নান্যাচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) দীঘিনালা শাখা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৪৫টায়  দীঘিনালা বাবুপাড়ার শহীদ ভরদ্বাজ মনির স্মৃতিস্তম্ভ হতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্কোয়ার ঘুরে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজ মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে ববৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)দীঘিনালা উপজেলা শাখার সভাপতি নিকেল চাকমা বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ১১দফা নির্দেশনা জারির পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন ও পাহাড়ি জনগণের উপর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বলেন, যার কারণে সেনাবাহিনী একজন ছাত্র নেতা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমাকে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে।

তিনি অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়েরর ১১ নির্দেশনা বাতিল ও নান্যাচরে পিসিপি’র নেতা এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা হত্যাকারী মেজর তানভিরসহ জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।

পাবর্ত্য চট্টগ্রাম

বক্তারা, পিসিপি নেতা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করেছে। গত ৫ এপ্রিল প্রকাশ্যে দিবালোকে একজন ছাত্রনেতা রমেল চাকমাকে ধরে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে, যার কারণে গতকাল ১৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

বক্তারা অবিলম্বে রমেল চাকমার হত্যাকারী সেনা সন্ত্রাসী মেজর তানভীরসহ ঘটনার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

উল্লেখ্য,রাঙামাটির নান্যাচরে গত ৫ এপ্রিল ২০১৭, বুধবার সকালে সেনাবাহিনী কর্তৃক অন্যায়ভাবে আটক ও অমানুষিক নির্যাতনে গুরুতর আহত নান্যাচর কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রমেল চাকমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে মারা গেছেন । সেনাবাহিনীর নজরদারি ও পুলিশের পাহারায় দু’সপ্তাহ ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রমেল চাকমা নান্যাচর উপজেলার পূর্ব হাতিমারা গ্রামের কান্তি চাকমার ছেলে। তিনি আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীও।  ডানচোখে তিনি দেখতে পান না। এ বছর ২ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় তিনি অংশ নিয়েছিলেন এবং নান্যাচর উপজেলা পরিষদ এলাকায় বাসা ভাড়ায় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

আটকের দিন (৫ এপ্রিল) পরীক্ষা না থাকায় রমেল চাকমা তরিতরকারি ও প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে নান্যাচর বাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাসায় ফেরার পথে উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে আনুমানিক সকাল ১০টার সময় সেনাবাহিনীর নান্যাচর জোনের মেজর তানভির-এর নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য তাকে আটক করে টেনে হিঁচড়ে জোনে নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর দিনভর তার উপর অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়।

এতে রমেল চাকমা গুরুতর অসুস্থ ও অজ্ঞান হয়ে পড়লে সেনা সদস্যরা সন্ধ্যায় তাকে থানায় হস্তান্তরের চেষ্টা করে। কিন্তু থানার কর্তৃপক্ষ তার শারীরিক অবস্থা দেখে তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর সেনারা তাকে স্থানীয় উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সেখানে ভর্তি না করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের পরামর্শ দেয়।

সেনারা সেদিনই তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সেনা নজরদারি ও পুলিশী পাহারায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেলেন।