বেলা একটা। দ্রুতগামী একটি ট্রেন ছুটে আসছে। ছোট্ট শিশুকে সঙ্গে নিয়ে তখনো এক মা রেললাইন পার হতে পারেননি। রেললাইনের পাশ থেকে এক ব্যক্তি ওই মাকে টান দিয়ে সরিয়ে নিলেন। রেললাইনের ওপর রয়ে গেল শিশুটি। এটা দেখে ছুটে গেলেন রেললাইনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা রেল কর্মচারী বাদল মিয়া (৫৮)। শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। কিন্তু বাদল আর সরার সময় পেলেন না। ট্রেনের নিচে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন তিনি। মুহূর্তেই নিভে গেল তাঁর প্রাণপ্রদীপ।
রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের রেলগেটে আজ শুক্রবার ঘটে ঘটনাটি। বাদল রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ নিয়োজিত একদল কর্মচারীর সঙ্গে সেখানে কাজ করছিলেন।
বাদলের বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার মুখি গ্রামে। তিনি আট সন্তানের জনক। কাওলা রেলগেট এলাকায় রেলওয়ের জমিতে টিনের ঘর তুলে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকতেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হামিদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বাদলসহ আরও ৮-১০ জন কাজ করছিলেন। ট্রেনটি যখন আসছিল, তখন তাঁরা সার বেঁধে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাচ্চাটি যখন রেললাইনের ওপর রয়ে গেল, তখন ১০-১২ ফুট দূর থেকে বাদল দৌড় দেন। ধাক্কা দিয়ে বাচ্চাটিকে রেললাইন পার করে দেন। কিন্তু এরপর তিনি আর সময় পাননি।
বাদলের ভাই আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ২৯ বছর ধরে তাঁর ভাই রেলওয়েতে কর্মরত রয়েছেন। ৮-১০ বছর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চাকরি করার পর তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। তাঁর আয় দিয়েই পুরো পরিবার চলত।
তিনি বলেন, তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বাদল। বড় ছেলে বিয়ে করলেও বেকার। আরেক ছেলে কয়েক দিন হলো খিলক্ষেত রেলগেটে অস্থায়ী গেটম্যানের কাজ শুরু করেছেন। বাকিরা পড়াশোনা করছে। বাদলের মৃত্যু পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে দিল।
ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলী আকবর প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট থেকে ঢাকাগামী সুরমা এক্সপ্রেসের নিচে কাটা পড়েছেন বাদল। শিশুটিকে বাঁচাতে গিয়েই তিনি মারা গেছেন। ঘটনার পর ওই নারী ও শিশু ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
পুলিশ বাদলের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে সেখানে তাঁর সহকর্মীরা ভিড় করেন। তাঁরা সবাই ছিলেন শোকবিহ্বল। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁরা তাঁর মরদেহ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর গ্রামের বাড়িতে তাঁর দ্বিতীয় জানাজার পর সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে।
সংবাদ : প্রথম আলো