কাব্যগ্রন্থঃ গণজাগরণ
প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৪
প্রকাশকঃ জালাল উদ্দিন হীরা
প্রকাশনীঃ বর্ণপ্রকাশ
উৎসর্গঃ শাহবাগ আন্দেোলনে আত্মনিয়োগকারী কর্মী এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে
পৃথিবীতে এমন অনেক কবি রয়েছেন, যারা হয়ত জীবনে অনেক কবিতা লিখেছেন, কিন্তু বই বের করেননি একটিও। আমি নিজেকে এতদিন সেভাবেই দেখে এসেছি। প্রতিদিনই আমি কিছু না কিছু লিখি। গত পাঁচ বছরে এমন কোনো দিন নেই যেদিন অন্তত একটি কবিতা আমি লিখিনি। সে হিসেবে এতদিন আমার অনেকগুলো কবিতার বই থাকার কথা ছিল। একজন সম্মানিত প্রকাশক কয়েকদিন আগে একশোটি কবিতা জমা দিতে বলেছিলেন। দিতে পারিনি। এতদিন যা লিখেছি তার অধিকাংশই অবহেলায় হারিয়ে গেছে। পঞ্চাশটি কবিতা নিয়ে প্রকাশক মহোদয় একটি বই বের করতে রাজি হয়েছিলেন। শর্ত ছিল— আমাকেও কিছু ব্যয়ভার বহন করতে হবে। ব্যয় বহন করতে পারিনি, বইটিও আর বের হয়নি। অবশ্য বইটি বের করার ব্যাপারে আমার খুব বেশি আগ্রহও ছিল না, কারণ, প্রেমের কবিতা দিয়ে প্রথম বই বের করতে চাইনি। শুধু শিল্প সৃষ্টির জন্য আমি লিখি না, তার কোনো প্রয়োজন আছে বলেও মনে করি না। আমি লিখি মানুষের কথা বলার জন্য, বিশেষ করে নিপীড়িত মানুষের কথা বলার জন্য। সে চেষ্টার অংশ হিসেবেই ‘গণজাগরণ’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করা। ‘গণজাগরণ’ কাব্যগ্রন্থটির কবিতাগুলো লেখা হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সংগঠিত শাহবাগ আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে। কবিতাগুলো লেখা হয়েছে ২০১৩ সালের বিভিন্ন সময়ে। দেশের সার্বিক বাস্তবতায়, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগ হতে বিচ্ছুরিত যে আন্দোলনটি আজ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে তার বিষয়বস্তু এবং তাৎপর্যই কাব্যগ্রন্থটির ভাষা এবং মূলভাব ।
তিন মিনিট
তিন মিনিটের জন্য থমকে দাঁড়িয়েছিল এ পৃথিবী,
আজ মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, শাহবাগ হতে
প্রজন্ম চত্বরের ডাকে তিন মিনিটের জন্য থমকে গিয়েছিল এ পৃথিবী।
তিন মিনিটের জন্য থমকে গিয়েছিল উড়ন্ত বিমান, ছুটন্ত পাখি,
থমকে দাঁড়িয়েছিল আমার পোষা বিড়ালের নবীন শিশুটি।
থমকে দাঁড়িয়েছিল বৃষ্টির ফোঁটা, আছড়ে পড়েনি তখন কোনো সাগরের ঢেউ।
আকাশের চমকিত বিজলী নিভতে পারলো না প্রজন্মের ডাকে থমকে গিয়ে।
চারিদিকে আলোর ঝলকানি ঠিকরে বেরুচ্ছে বিক্ষুব্ধ হয়ে।
আজ মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩,
প্রজন্ম চত্বরের ডাকে তিন মিনিটের জন্য থমকে গিয়েছিল এ পৃথিবী,
ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে পথ চলেনি নক্ষত্রগুলো,
তিন মিনিট বেড়ে ওঠেনি মায়ের গর্ভের ভ্রুণটিও,
প্রত্যয়ে এবং প্রতিজ্ঞায় থমকে গিয়েছিল সব।
জেগে আছি বন্ধু
জেগে আছি বন্ধু শাহবাগে, রাতের রোদ্দুরে
জেগে আছি বন্ধু, বাংলা মায়ের প্রহরী হয়ে।
আমরা সময়ের প্রয়োজনে একাত্ম হয়েছি,
আমলা হাল ধরেছি শক্ত হাতে।
যতই উঠুক ঝড়
আমাদের এ তরী ভিড়বে না কোনো ঘাটে।
উঠুক তুফান, আসুক প্রলয়, হও আগুয়ান,
নির্ভয়ে নিঃসংকোচে চলবে জনতার সংগ্রাম।
জেগে আছি বন্ধু শাহবাগে, রাতের রোদ্দুরে,
জেগে আছি বন্ধু, বাংলা মায়ের প্রহরী হয়ে।
গণ রায়
নিরন্ন মানুষেরা জেগে উঠেছে আজ,
তোদের পাপের ভারে জর্জরিত মানুষেরা জেগে উঠেছে আজ,
জেগে উঠেছে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা,
জেগে উঠেছে আমার লাল-সবুজ পতাকা।
স্লোগানে স্লোগানে সংক্ষুব্ধ সারা বাংলা।
পুঞ্জিভূত ক্ষোভের আগুন জ্বলছে এদেশের ঘরে ঘরে,
কে তোরা জানোয়ার? কে তোরা বর্বর?
এ আন্দোলন দুর্বার, আরো দুর্বার,
কে তোরা সরকার, আইনের এত কি দরকার?
প্রয়োজনে জনগণ আজ তোদের করবে বিচার।
আমরা কীসের জন্য
তোরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের সাথে মিলেমিশে একাকার,
জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে হবে ছারখার।
ঐ দ্যাখ্, মায়ের পেট ছিড়ে বেরিয়ে আসছে ভ্রুণগুলো,
ঐ দ্যাখ্, সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুদের একটি দল,
ওরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে তোদের,
তাবেদার তোরা যারা বন্য।
তোদের ভাষায় আমরা কিশোর,
চির কিশোর দেখিয়ে দেব আমরা কীসের জন্য।
নতুন রাজাকার
নতুন রাজাকার জন্মেছে কিছু,
কাকের বাচ্চা কাক হয়েছে।
ওরা বিকৃত-বর্বর-বেহুশ,
ওরা নষ্ট-নিকৃষ্ট-অমানুষ।
নতুন রাজাকার জন্মেছে কিছু,
কাকের বাচ্চা কাক হয়েছে।
ওরা অন্ধকার, ওরা আলেয়া, ওরা হায়েনা,
ওরা পশ্বাধম, ওরা আলবদর, ওরা খুনি।
নতুন রাজাকার জন্মেছে কিছু,
কাকের বাচ্চা কাক হয়েছে।
ওরা আস্ফালন, ওরা দুস্কৃত, ওরা অনাচার,
ওরা নিষ্ঠুর, ওরা নির্দয়, ওরা অপরাধী।
নতুন রাজাকার জন্মেছে কিছু,
কাকের বাচ্চা কাক হয়েছে।
ধর্মের দোহাই দিয়ে,
ছলে, বলে, কৌশলে ওরা কেড়ে নিয়েছে সব।
খুন হয় মানুষ
খুন হয় মানুষ,
খুন হয় মনুষ্যত্ব।
বেঁচে থাকে এদেশে রাজাকার,
আল বদর, আল শামস্, আর অমানুষ যত।
বেঁচে থাকে পাপ, বেঁচে থাকে পাপিষ্ট,
বেঁচে থাকে অত্যাচারীর কালোহাত,
বেঁচে থাকে মিথ্যাচার, বেঁচে থাকে অপপ্রচার,
বেঁচে থাকে ধর্মান্ধতা, বেঁচে থাকে অজ্ঞানতা।
খুন হয় মানুষ,
খুন হয় মনুষ্যত্ব।
বেঁচে থাকে এদেশে রাজাকার,
আল বদর, আল শামস্, আর অমানুষ যত।
সভ্যতার শত্রু
আমাকে ভালোবাসতে বলি না,
আমাকে ভালোবাসতে কেন আসো?
আমার কী এত ভালোবাসা প্রয়োজন?
ভালোবাসতে পারবে একটা ফড়িং?
ভালোবাসতে পারবে একটা পিঁপড়া?
পারবে ভালোবাসতে কুচকুচে একটা কালো কাক?
আমাকে ভালোবাসতে কেন আসো?
আমাকে ঘৃণা করতে কেন আসো?
আমি কী এমন অপরাধ করেছি?
চোরকে কেন ঘৃণা করো?
তোমার গলার অপ্রয়োজনীয় সোনার হারটি দেখে
কেন তার লোভ হবে না
যদি আমি থাকি ক্ষুধার্ত?
ছিচকে ছিনতাইকার কেন পিটিয়ে মারো?
তার ভুখ কি তুমি কেড়ে নাওনি বাণিজ্যের ভণিতায়?
ভিখারিকে কেন ঘৃণা করো?
সেকি তোমাদেরই সৃষ্ট নয়?
তোমরাও যুদ্ধাপরাধী, তোমরাও মানবতাবিরোধী,
জীবন যুদ্ধে তোমরা অপরাধী,
তোমরা নির্দয়, নৃশংস, নিকৃষ্ট।
আমাকে ভালোবাসতে এসো না,
আমার কাছে তোমরা এসো না,
দূর হয়ে যাও,
দূরে বহুদূরে চলে যাও।
শেষ অস্ত্র
ওরা শেষ অস্ত্র বের করেছে,
নির্লজ্জের মতো ওরা অস্ত্রটা বের করেছে।
দুর্বল, ভীরু, দুর্বৃত্তের দল
শেষ পর্যন্ত ওরা এটা করবেই।
ওদের অপকর্মের বর্ম,
ওরা হাতে তুলে নিবেই।
সমর্থন
খুন-ধর্ষণ-হত্যার বিচার করা যাবে না!
ওদের সাজা দেওয়া যাবে না!
এ কোন আজব দেশ?
এরা কোন আজব মানুষ?
ধর্মের নামে দুর্বৃত্তরা এককাট্টা হয়েছে,
তাদের সমর্থনে আছে ঘরমুখো ধর্মান্ধরাও,
সমর্থন আছে বিক্রীত বুদ্ধিজীবীদের,
কী বিকট! কী ভয়ঙ্কর সমর্থন!
পুলিশের গুলিতে মরছে কিছু অজ্ঞতা,
ঘরে, অফিশে, ক্লাসরুমে সুরক্ষিত রয় অসভ্যতা।
তোমরা আমায়
তোমরা আমায় নষ্ট হতে দিতে
চাও না বলে
সবকিছু এমনভাবে নষ্ট হয়।
তোমরা আমায় ধ্বংস হতে দিতে
চাও না বলে
সবকিছু এমনভাবে ধ্বংস হয়।
তোমরা শুধু ভালোবাসতে
শুধাও বলে
ভালোবাসা সৃষ্টি এত কম হয়।
ওদের তাড়াতে হবে
ভুলিনি সে কথা, ভুলব না কখনো।
একুশে ফেব্রুয়ারি, পঁচিশে মার্চ, চৌদ্দই ডিসেম্বর,
ভোলা কি যায় কখনো?
বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান ছিল যারা,
প্রেমে-প্রজ্ঞায় ছিল যারা উদ্ভাসিত,
অন্যায়ের সাথে আপস করেনি যারা কখনো।
আদিমতার ধারক, বর্বর ধর্মব্যবসায়ীরা
নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের,
হত্যা করেছে জাতির বিবেক, বঞ্চিত করেছে আমাদের।
ক্ষমা নেই ওদের!
জাগ্রত জনতা জীবনটাকে বাজি ধরেছে,
কুৎসিত হৃদয়ের নির্দয়-নৃশংস যারা,
ওদের তাড়াতে হবে।
বিচার হবে ওদের
জনগণ, তোমরা পাগল পিটিয়ে মারো!
জনগণ, তোমরা চোর পিটিয়ে মারো!
জনগণ, তোমরা মাদকাসক্ত পিটিয়ে মারো!
পিটিয়ে মারতে পারো না যারা হত্যা করেছিল ত্রিশ লক্ষ মানুষ?
তোমরা পিটিয়ে মারতে পারো না
যারা হত্যা করছে ষোলো কোটি মানুষ?
ওদের জন্য তোমাদের এ কোন দরদ!
ওদের জন্য তোমাদের এ কোন সুপারিশ!
গণজাগরণ চাইছে বিচার তাদেরও
তোমরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের তাবেদার।
রাস্তার পাশে পড়ে আছে ক্ষুধার্ত মানুষ,
অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে
কত শত মাতা-পিতা-ভাই-বোন,
কেউ দেখে না তাদের।
কী ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা?
কী ছিল সে আদর্শ?
সব কেড়ে নিয়েছে ধর্মব্যবসায়ীরা,
সব কেড়ে নিয়েছে রাজনীতি ব্যবসায়ীরা,
সব কেড়ে নিয়েছে চেতনা ব্যবসায়ীরা,
সব কেড়ে নিয়েছে ভণ্ড-প্রতারক-ধাপ্পাবাজেরা।
কেড়ে নিয়েছে ওরা জনগণের সব অধিকার,
কুক্ষিগত করেছে জনগণের সকল সম্পদ।
কিছু নেই, রাষ্ট্রের ঘরে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
কেঁচোর গর্তে কেউটো সাপ
এদেশের মধ্যে এখনো একটি পাকিস্তান আছে,
এদেশের উরু-বক্ষ-উদরে একটি পাকিস্তান আছে,
রাজাকার-আলবদর-আলশামস্ আছে।
পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় ওরা আছে, নর্দমায় ওরা আছে,
আছে ধানমন্ডিতে, আছে গুলসান-বনানী
আর হাজারীবাগ বস্তিতে,
অন্ধকারে ওরা আছে স্বস্তিতে।
এদেশের মধ্যে এখনো একটি পাকিস্তান আছে,
রাজাকার-আলবদর-আলশামস্ আছে।
পাকিস্তান আছে ওদের টাইয়ের নটে
পাকিস্তান আছে ওদের পেটিকোটের গিঁটে।
পাকিস্তান আছে পহেলা বৈশাখে
পাকিস্তান আছে পুলিশের পোশাকে।
পাকিস্তান আছে দাঁড়িপাল্লায়
পাকিস্তান আছে ধানের শীষে
পাকিস্তান আছে ঘুণে ধরা নৌকায়।
পাকিস্তান আছে আমাদের পাওয়া না পাওয়ায়।
এদেশের মধ্যে এখনো একটি পাকিস্তান আছে,
রাজাকার-আলবদর-আলশামস্ আছে।
খবরদার
আমাকে থামতে বলো না,
খবরদার, আমাকে থামতে বলো না।
আমাকে বুঝাতে এসো না,
শেষবারের মতো বলে দিচ্ছি,
আমাকে তোমরা হুমকি-ধমকি দিও না।
তোমাদের বর্বরতার বিচিত্রতা দেখে দেখে
জ্বলছে আগুন শাহবাগে, আগুন জ্বলছে বাংলার ঘরে ঘরে।
এ আগুন নিভে যাবে না,
আগুনের লেলিহান শিখা
পৌঁছে যাবে তোদের সব গোপন আস্তানায়।
এ আগুন পুড়িয়ে দেবে
বাঙালি জাতির পুঞ্জিভূত সব পাপ।
এ আগুন তরবারি হয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে আনবে
রাজাকার-আলবদর-আলশামস্ এবং যত তাবেদার।
ওরাই নাকি করেছে লড়াই
বোমা ফাঁটতে পারে বলে
ওরা শাহবাগে যায় না,
সময় গুণে যদিওবা যায়,
মূল স্রোতে মেশে না,
প্রজন্ম চত্বরে ওরা বসে না।
দেখার লোভে একটু যায়,
মাঝে মাঝে পিছন ফিরে চায়,
পাশ কাটিয়ে উঁকি দেয়।
ওরাই শেষে সময় সাজায়,
বড়াই করে বলে বেড়ায়,
ওরাই নাকি করেছে লড়াই।
বিদ্রোহী এ বসন্তে
বিদ্রোহী এ বসন্তে একটাই শুধু গান,
রাখতে হবে স্বাধীনতার মান।
বিদ্রোহী এ বসন্তে ফুলগুলো আজ ম্লান,
বিকৃত এ বিচারের রায়ে
প্রকৃতিরও কাঁদে প্রাণ।
বিদ্রোহী এ বাংলার পতাকাটা সুউচ্চ,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে সর্বোচ্চ।
আজ আমাদের একটাই শুধু পণ,
রুখতে হবে ওরা যত দুশমন।
বিচার চাই
শাড়ি পরে চলে আয়,
বোরকা পরে আসবি আয়,
স্কার্ট পরে চলে আয়,
যেমন খুশি চলে আয়,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
ভুল করিস না আর, চলে আয়,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
পরজীবী চলে আয়, বুদ্ধিজীবী চলে আয়,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
দিয়ে ঈশ্বরের দোহাই, চলে আয়,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
সত্য বলা যাবে না
মিথ্যা-ঠকবাজি-প্রতারণা-জোচ্চুরিতে
ওদের কোনো অভিযোগ নেই,
সত্য বলেছো কি মরেছো।
মনে তোমার যা থাকে থাক,
সত্য বলেছো কি মরেছো!
ওদের মনে মনে ঘৃণা করলে সমস্যা নেই,
সত্য বলেছো কি মরেছো!
মানুষতো নয়ই
খুন-ধর্ষণ-হত্যা করেও ওরা এতটা উদ্ধত!
মানুষতো নয়ই, ওরা এ কোন প্রাণী?
নিকৃষ্ট-নৃশংস এ এক নতুন প্রজাতি।
বিয়াল্লিশ বছর নয়, বিয়াল্লিশশো কোটি বছর পরেও
ওরা দাঁড়িয়ে থাকবে ঐ একই জায়গায়।
ওরা সংগ্রাম করে বাঁচে না,
ওরা চুরি করে বাঁচে,
ওরা লুট করে বাঁচে,
ওরা রক্ত শুষে বাঁচে।
শোষকের বিবর্তন হয় না।
বর্বর এ প্রজাতির বিবর্তন হয় না।
অপেক্ষার প্রহর শেষ,
বিচার প্রক্রিয়া শেষ,
এবার জনতার রায়,
ঘোষিত হবে আগামীকাল দুপুর বারোটায়।
জীবন মানে
জীবন মানে শুধু তোমার পানে চেয়ে থাকা নয়
জীবন মানে শুধু তোমার পিছে হন্যে হয়ে ঘোরা নয়
জীবন মানে শুধু তোমার সাথে পার্কে বসে গল্প করা নয়
জীবন মানে শুধু তোমায় ভালোবাসা নয়
জীবন মানে বাঁধার মুখে থমকে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নয়
জীবন মানে সত্য মিথ্যার মাঝ বরাবর এগিয়ে চলা নয়
জীবন মানে পক্ষ নেওয়া
জীবন মানে লড়াই করে বাঁচতে চাওয়া
জীবন মানে জীবন দিয়ে বাঁচাতে চাওয়া
জীবন মানে তোমায় নিয়ে মিছিলে যাওয়া
জীবন মানে অপরাধীর বিচার চাওয়া।
তুমি কে? আমি কে?
তোমার জন্য আমার এত ভালোবাসা
মুহূর্তে জ্বলে গেল, বিষবাষ্প হয়ে উড়ে গেল
তোমার জন্য আমার এত ভোলোবাসা ঘৃণায় পরিণত হলো!
একটিমাত্র মতপার্থক্য সব সমীকরণ উল্টে দিল,
একটি পথের বুক চিরে বেরিয়ে আসলো দুটি পথ,
প্রজন্ম চত্বর হয়ে উঠেছে তোমাকে চেনার সহজ উপায়,
প্রজন্ম চত্বর বলে দিল, তুমি কে?
প্রজন্ম চত্বর বলে দিল, আমি কে?
বিশেষ ট্রাইব্যুনাল
নব্য যুদ্ধাপরাধী যারা, ওদের হবে কোন আইনে বিচার?
ওরা তখন মেরেছে, এখনও যারা মারছে?
ওদের হবে কোন আইনে বিচার?
ওদের বিচার হবে জনতার আইনে,
শাহবাগ ট্রাইব্যুনােলে।
ওদের বিচার হবে মানবতার আইনে,
শাহবাগ ট্রাইব্যুনালে।
ধর্মব্যবসায়ী-লুটেরা-রক্তচোষাদের
বিচার জনগণ করবেই।
জনতার আদালত
আমি রাজনীতির মাঠে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি ক্লাসরুমে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি আমলাতন্ত্রে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি হাসপাতালে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি মুদির দোকানে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি বাস কাউন্টারে যে রাজাকার দেখেছি
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি বেশ্যালয়ে যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
আমি মসজিদ-মন্দির-গির্জায় যে রাজাকার দেখেছি,
ধরে আনো তাকে শাহবাগে।
করতে হবে ওদেরও বিচার
আতঙ্কে ওরা তোমার কথায় চলে,
তোমার মতো বলে।
এখন ওদের চিনবে না,
ওদের মেকি সমর্থনে ভুলো না।
ওদের সৃষ্টি হয়েছে কাকের বাসায়,
ওদের বিশ্বাস করো না।
ওরা যুদ্ধাপরাধীদের পাতে খায়,
এখন বাও বুঝে ‘বিচার’ চায়।
ওরা চিহ্নিত নয়, ওরা ছদ্মবেশী রাজাকার,
এদের পরে করতে হবে ওদেরও বিচার।
সাবধান
কাকেও ডিম পাড়ে
ইঁদুরেরও বাচ্চা হয়, বেশি হয়।
আগাছায় ভরে যায় শস্যক্ষেত,
ভয় পেলে ধেয়ে আসে ভূত-প্রেত।
ঘরে খিড়কি দাও,
বউকে পরতে পরতে কাপড় পরাও,
অবশেষে বিচলিত কুকুরের মতো পালাও।
বাঁচার অত্যুগ্র বাসনা তোমাদের,
কেঁচোর মতো, কৃমির মতো তোমাদের জীবন।
দেখেছো ওদের নখর?
কেঁচো, কৃমি সবই ওরা খায়।
ওদের বংশধর, ওরা বিষধর,
ভয়ানক ওরা, ওরাই গণপিটুনি দেয়,
শিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ ওরাই করে,
ওরাই আবার ভয়ে ফেউ ফেউ করে,
সুযোগ পেলে, নিশ্চিত পালাবার পথ পেলে
হিংস্র হয়, নৃশংস হয়।
ওদের ভয় পেও না,
ওদের ঘিরে ধর,
ওদের পালাবার পথ বন্ধ কর।
ভয় পেলে ধেয়ে আসে ভূত-প্রেত,
আগাছায় ভরে যায় শস্যক্ষেত।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই
আজ আমার ধ্বংস হবার নেশা,
নিঃস্ব হতে চাই,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
বাঁচাতে চাই এ দেশটাকে,
বাঁচাতে চাই এ প্রজন্মকে।
আজ আমার কষ্ট পাবার নেশা,
নিরন্তর জ্বলতে চাই,
জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে চাই,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
গাছ-পাখি-মানুষের শত্রু তাড়িয়ে দিতে চাই।
আজ আমার পবিত্র হবার নেশা,
ইতিহাসের দায় মেটাতে চাই, মানুষ হতে চাই,
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই।
হুশিয়ার! সাবধান!
যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার,
আলশামস্-আলবদর-তাবেদার।
সাবধান! হুঁশিয়ার!
নিরন্ন-নিপীড়িত মানুষেরা আজ
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার।
আলশামস্-আলবদর-আলশামস্-তাবেদার
সাবধান! হুশিয়ার!
আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা-যুবসমাজ,
দাঁড়িয়েছে এক কাতারে আজ।
সকল শ্রেণির মানবিক মানুষের সংগ্রাম,
চলবে আজ থেকে অবিরাম।
আলবদর-আলশামস্-তাবেদার
সাবধান! হুঁশিয়ার!
একটাই দেশ
দর্শনহীন জীবন
দৃশ্যত জীবনযাপন
আসলে বিপন্নতা।
মর্তে এখন আসন্ন মৃত্যুর মহোৎসব
ঐ দেখো ধ্বংস
ঐ দেখো হাইতি
এইতো আমি
ঐ তো তুমি।
এ দেশ ও দেশ
এসব শুধুই বিদ্বেষ,
নিপীড়িত-নিষ্পেষিত
আমাদের একটাই দেশ,
কী হাইতি, কী বাংলাদেশ।
স্বপ্নে দেখা বিধ্বস্ত হাইতি,
ওখানে হন্যে হয়ে খুঁজি
তোমার আমার হারানো আত্মা,
শুনেছি ওরা নাকি কখনো মরে না।
মুখোশের আড়ালে
স্বাধীনতার পর প্রতি বছর ওরা একটা করে মুখোশ পরেছে। ওদের মুখে এখন বিয়াল্লিশটা মুখোশ। গুণে-মানে-গঠনে ভিন্ন ভিন্ন মুখোশ। এক চল্লিশটা দেশ থেকে এই মুখোশ ওরা আমদানী করেছে। প্রথমটা শুধু বাংলাদেশী মুখোশ। পাকিস্তানি মুখটা এভাবে ঢাকা পড়েছে অনেক গভীরে। ওদের চেনা যায় না। কখনো মনে হয় দেশপ্রেমিক, কখনো মনে হয় মানবপ্রেমিক, মনে হতে পারে নান্দনিক, মনে হতে পারে ইতিহাসবেত্তা বা সহিত্যিক। বিশ্বাসঘাতক-বেঈমান-বর্বর মানুষরূপী শয়তানেরা নিরাপদে লুকিয়ে রয়েছে একটি মুখোশের আড়ালে।
আমি যাবো
আমি যাবো,
হারব জেনেও আমি যাবো।
আমি যাবো,
তোমরা আসবে না জেনেও আমি যাবো।
আমি যাবো,
তোমরা হাসবে জেনেও আমি যাবো।
আমি যাবো,
মরব জেনেও আমি যাবো।
আমি যাবো,
ওদের বন্দুকের নলটা দুহাতে ধরে
হাঁটুতে চাপ দিয়ে মট করে ভেঙে দেব।
আমি যাবো,
ধেয়ে আসা গ্রেনেডটা
ক্রিকেট বলের মতো দু’হাতে লুফে নেব।
ক্ষুধার্ত সূর্যটা
ক্ষুধার্ত সূর্যটা
উঠবে বলে আজও হামাগুড়ি দেয়।
চারিদিকে ঘনঘোর অন্ধকার,
অহেতুক অহংকার, অসভ্যের হুংকার,
আত্মচিৎকার!
নিপিড়ীতের ক্রন্দনের প্রতিধ্বনি,
আকাশে-বাতাশে-সবখানে।
পূব আকাশে
সূর্যটা এখনো হামাগুড়ি দেয়,
উঠি উঠি করে আজও সে ওঠে না।
কালো কালো ছোপ ছোপ অন্ধকার,
এখানে ওখানে তোমারও চারপাশে
আলো গিলে খায়।
সূর্যটা উঠি উঠি করে আজও এখানে ওঠে না,
উঠবে না, তুমি না আসলে কোনোদিন উঠবে না।
অন্ধকারে ছেয়ে যাবে চারপাশ,
হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে
মৃত্যুকূপে পড়ব আমরা সবাই।
ওদের মানব বন্ধন
এ দেশে ধর্ষণের পক্ষে মানব বন্ধন হয়,
এ দেশে খুনের পক্ষে মানব বন্ধন হয়,
এ দেশে যুদ্ধাপরাধের পক্ষে মানব বন্ধন হয়,
এ দেশে লুটেরাদের পক্ষে মানব বন্ধন হয়।
ওরা উস্কানির পক্ষে বিবৃতি দেয়,
ওরা মিথ্যা-বানোয়াট-গুজবের পক্ষে বিবৃতি দেয়,
ওরা আক্রমণকারীর পক্ষে বিবৃতি দেয়।
ওরা মানব বন্ধন করে না
গার্মেন্টস্ শ্রমিকরা পুড়ে মরলে।
ওরা মানব বন্ধন করে না
গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারলে।
ওরা মানব বন্ধন করে না
ধর্মের নামে মানুষ খুন করলে।
ওরা মানব বন্ধন করে না
সংখ্যালধুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে।
ওরা নাকি অসভ্য বর্বর নয়,
ওরা তাহলে কী? বিএনপি? জামায়াত ইসলামী?
এ সকাল ফুল ফোঁটাবার
কারো কিছু হারাবার নেই,
শুধু দিতে পারি, আর নিতে পারি।
হৃদয়ের রোদন নেই,
আমাদের দৈত শক্তি প্রয়োজনে পাশাপাশি,
নেই অর্থহীন ভালোবাসাবাসি।
এ এক অব্যক্ত প্রেম,
এ সকাল ফুল হবার নয়, ফুল ফোঁটাবার।
দানব বন্ধন
সব বন্ধন মানবের নয়,
সব ভালোবাসা মানবতা নয়,
ওদের জোটবদ্ধতা সভ্যতার নিমিত্তে নয়।
স্বার্থান্বেষী মহল,
হতে পারে সে শিক্ষক, বুদ্ধিবিক্রেতা বা অন্যকিছু,
ওদের চিৎকার যুদ্ধাপরাধের বর্বরতার মতোই বর্বর।
ওদের বন্ধন মানবের নয়,
ওদের বন্ধন সভ্যতার নিমিত্তে নয়।
দুর্বৃত্তের সর্দার ধরতে
আমি একটা মানব বোমা বানিয়েছি।
এই বাংলায়, পেট্রোল বোমায়
আর যদি কেউ মরে বেঘোরে, পথে প্রান্তরে;
এই বোমাটা মেরে দেব তোদের দরবারে।
আমিও মরব দরকার হলে।
তবু মারব সত্য সুন্দরের শত্রু যারা,
আজ রাত এগারোটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে
বোমা হাতে গণজাগরণ মঞ্চ হতে
দুর্বৃত্তের সর্দার ধরতে
একলা আমি করলাম যাত্রা।
লড়াই
বিদ্রোহ নয়, এ লড়াই বাঁচবার
বিক্ষোভ নয়, এ লড়াই বাঁচাবার
বিদ্বেষ নয়, এ লড়াই ভালোবাসবার।
বিপন্নতা নয়, এ লড়াই জেগে উঠবার
ক্রোধ নয়, এ লড়াই শান্ত হবার।
হারাবার নয়, এ লড়াই স্বপ্ন বাঁচাবার।
লুব্ধ হৃদয়ে লক্ষ্য স্থির নয়,
এ লড়াই জীবনের গান গাইবার।