ভূত এবং ভগবান // দিব্যেন্দু দ্বীপ

follow-upnews
0 0

কাব্যগ্রন্থঃ ভূত এবং ভগবান

প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৫

প্রকাশকঃ রতন চন্দ্র পাল

প্রকাশনীঃ গ্রন্থকুটির

উৎসর্গঃ যারা মানুষ হয়েছে, যারা মানুষ হতে চাচ্ছে

দুর্বিষহ দুর্বোদ্ধতার মধ্যে ঘুরপাক খায় মানুষ। কাউকে নিশ্চিত হতে দেখলে মানুষ অশান্তি বোধ করে। ঈর্শান্বিত হয়। ব্যক্তির নিশ্চয়তাবোধের ভণিতা মানুষকে আকৃষ্টও করে। জীবনের সাথে সে বোঝাপড়া করতে চায়। পেরে ওঠে না। অবশেষে ঈশ্বর নামক এক কাল্পনিক চরিত্রের খোঁজ পেয়ে স্বস্তি বোধ করে। সুখলোভী মানুষ পরকালের পরিচয় পেয়ে লালায়িত হয়। বেশিরভাগ মানুষ পরকালে অবিশ্বাস করলেও ঈশ্বরকে ঘিরে ইহকালের সিন্ডিকেট সে ভাঙতে পারে না, বরং অবশেষে নিজেকে সে শক্তিশালী এই পালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে বাঁচে। জীবন জিজ্ঞাসার চেয়ে জীবনটাকে সহজ করে বাঁচতে চাওয়াটাই মানুষের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। নগদ ইহলৌকিকতা এবং অনিশ্চিত পারোলৌকিকতার মধ্যে সে পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকে। পার্থিব পরিতৃপ্তির সম্পূর্ণ পাঠ চুকিয়ে সে যেতে চায় ‘স্বর্গ’ নামক ভোগবাদের চূড়ান্ত সীমায়। সহজ সমাধান খুঁজতে চায়। গুরুমুখী হয়, সামাজিক গুঞ্জন মেনে নেয়, পেয়ে যায় জটিল জীবনের সরল পাঠ। অন্বেষণ থেমে যায়, যুক্তিবোধ পরাজিত হয়। 

আম একটা ঐরাবতের পিঠে চড়ে

হাতি দেখতে গিয়েছিলাম,

গিয়ে দেখি ওটা গাধার হাট।

কোথায় যেন একটা কাঠ ঠোকরা

ঠক ঠক করে ঠোকর মারছে দিনরাত। 

আমি নিতে গিয়ে

তোমায় যা দিয়েছি,

তুমি কি তা চাওনি কখনো?

ছোট্ট শিশুকে চকলেট দেবার মতো

আমাকে তোমার শরীরটা দেবে?

আমি পুরুষ,

চিতায় শুয়েও একবার মেপেছি

উর্বশী নারীর উলম্ব নিতম্বের ব্যাসার্ধ।

স্ত্রী ছিল তখন আমার সাথে সহমরণে।

ভালোবাসতে হবে না,

কেনাবেঁচা করে কেটে পড়ো।

পণ্যের হাটে

কেউ ভালোবাসতে যায় না।

‘ভালোবাসা’—

এর চেয়ে সুমধুর

কোনো অজুহাত মানুষ পায় না। 

নীতির ‘নাই’ দিয়ে

কিছুক্ষণ স্বান্তনা দেওয়া যায়,

কিন্তু দুর্নীতির ‘আছে’ দিয়ে

বশে রাখা যায় আজীবন। 

মরুভূমিতে মহাপ্লাবন,

এ শুধু তোমারই দান।

ঈশ্বর কি পারত

পাথর কেটে পানি বের করতে?

তুমি পেরেছো পরমেশ্বর বলে।

১০

শুকনো কাঠ নিংড়ে নিংড়ে

বের করে এনেছি

এক কাপ মন মাতানো মহুয়া।

নাও নারী,

তোমার জন্য এ আমার

ভালোবাসার প্রথম উপহার। 

১১

দেহে কত কথা

কলকল করে,

মন বল বল করে।

বলি না শুনব বলে।

বলো না, শুনবে বলে। 

১২

হয়েছো জননী, তায় কী,

আগে তো তুমি রমণী,

হৃদয়ে বেধেছো যত শিব

সবই তোমার অধিকার। 

১৩

ওরা সীতা নয়, হেলেন,

ভুলালে ভোলে।

ওরা ভালোবাসায় ভোলে,

ভণিতায়ও ভোলে।

শক্তিতে ভোলে, ভক্তিতেও ভোলে। 

১৪

যৌবন হলো ভূত,

জীবন হলো ভগবান।

১৫

শুধু রূপ রহস্যে এসো না,

শুধু জীবন রহস্যেও অবতীর্ণ হইও না।

১৬

গভীরতা মাপতে এসো না,

দরদামে দ্রুত পাওনা বুঝে নাও।

কত নাবিক হাল ধরেছে,

নাগাল পায়নি কেউ।

১৭

ঈশ্বর তুমি নিরাকার,

আমার ভণিতার মাঝে একাকার।

১৮

বোকা হতে হয়,

বোকা হলে মানুষ ভালোবাসে।

ঠকতে হয়,

ঠকলে মানুষ ভালোবাসে। 

১৯

পাঁচ টাকার ঝালমুড়ি কিনে ভাবি,

লোকটা কম দিয়ে আমায় ঠকিয়েছে।

নিশ্চিত জানি,

আমি ঝাল মুড়ি বেঁচলে 

ওর চেয়েও কম দিতাম।

২০

কবির কাব্য কথায় 

কুমারীত্বের হয় কি কোনো ক্ষয়?

তোমার কীসের এত ভয়?

নারী, সবইতো থাকে অব্যয়।

২১

মানুষ বলে চোখ ভরে না,

আমার তো এই জীবনে

চোখটাই শুধু ভরেছে।

২২

তোমাদের ফ্যানায় আসক্তি,

ঘনত্ব মাপতে তোমরা জানো না।

২৩

পাপীকে এতটা ভয় পাই না,

যতটা ভয় পাই তোমার অজ্ঞানতাকে। 

২৪

তোমার কপালের গোল চত্বর,

কালো অথবা সাদা,

বলে দেয়,

তুমি লোভী অথবা দুষ্কৃতিকারী। 

২৫

পাপ-পুণ্যে আমি কাটাকাটি করি না।

২৬

নেড়েচেড়ে আদর করে

জিভটাকে লুকিয়ে রাখি দাঁতের মাঝে,

তবু তোমরা আমায় বলো লোভী!

২৭

সেসবের কোনো দলির নেই,

কিন্তু এই বাড়ীটার দলিল আছে।

দলিলের বদৌলতে বাড়ীটা আমার। 

২৮

সে শুধু আমার সাথে থাকে না,

আমার অস্থিরতার সাথেও থাকে।

নদীটা দুললে যেমন

ভেলাটাও দুলে ওঠে।

২৯

কবি, কৃষক, কাক এবং কবুতর,

ওরা সবাই একই ঘরে বন্দী।

আমি ওদের প্রভু,

নিষিদ্ধ ফল খাইনি কভু।

আমৃত্যু আমি তৃষ্ণার্থ

শতরূপা, আমি নিজেও পরাভৃত। 

৩০

ভালো না বাসলে

কিছু কম পড়ে না,

কাছে না আসলে বেদনা বাড়ে। 

৩১

আকাঙক্ষায় মনের মুকুট পরিয়ে

আমিও রাজা সাজাই,

তুমি কাছে না আসলে বুঝি

এসব ভালোবাসা কতটা মূল্যহীন। 

৩২

বেশ্যাকে ওরা তবু কিছু দেয়,

আমার কবিতাগুলো পড়ে

দিব্যি চলে যায়!

৩৩

ভালো যদি বাসো,

তবে কাছে আসো।

নিয়েছো যত, দেবেও তত,

এইতো সতীত্ব।

৩৪

তুমি কত সুন্দর করে আমায় মিথ্যা বলো,

আমার ভালো লাগে।

রাত দুপুরে পাশ ফিরে তোমায় হারিয়ে

আমার ভালো লাগে।

আমার ভালো লাগে, ঘোর লাগে। 

৩৫

তোমার কাছে আসতে চাই,

এই রাত দুপুরে এসে

কানে কানে বলতে চাই,

সব মিথ্যা, সব ভুল,

শুধু এই রাতটুকু সত্য। 

৩৬

নারী লোভে নষ্ট হয়েছি আমিও কিছু

গিয়েছি অহেতুক তোমারও পিছু। 

৩৭

ধাওয়া করে হরিণ ধরা যায় না,

ফাঁদ পেতে অপেক্ষা করতে হয়।

৩৮

হাতের মুঠে পুরে 

চার দাঁতে কামড় না বসালে 

আমার ক্ষুধা মেটে না। 

৩৯

ভীষণ ক্ষুধার্ত আমি,

তবুও চার পরতের কমলাগুলো

রেখে দিয়েছি ভদ্র দিনের জন্য। 

৪০

মানুষ, তোমাকে চিনি।

তোমাদের চিনি বলেই

মানুষ হতে

আমার এত ভালো লাগে। 

৪১

রাজা সিংহাসনে, সন্ন্যাসী যোগাসনে,

স্বপ্নে দেখি মানুষগুলো সব

যোগ দিয়েছে মিছিলে।

৪২

সতী নারীরা

পছন্দ করে অমাবস্যা রাত।

আমার পছন্দ পূর্ণিমা।

৪৩

মনটা শুধু অজুহাত,

সবই অবশেষে দেহের কারুকাজ। 

৪৪

ভীষণ ইচ্ছে করে

দানব হতে।

ভীষণ ইচ্ছে করে

তোমায় পেতে। 

৪৫

এইসব প্রেমের জন্য

যৌবনটুকুই শুধু খরচ করা যায়,

জীবন বিনিয়োগ করার

কোনো মানে হয় না।

৪৬

স্রোতস্বিনীর পিছে

শুধু জীবন দিয়ে ছুটলে হয় না,

উজানে

নৌকা বাইতেও জানতে হয়।

৪৭

পানিতে পাথরও ঠিক ভাসে,

তলিয়ে, গড়িয়ে গড়িয়ে ভাসে।

৪৮

পোশাক তো আর

জগদ্দল পাথর নয়,

গিট খুলে দিলে

সব পোশাকই গড়িয়ে পড়ে।

৪৯

সবাই চলে গেছে অন্ধকারে,

ওখানে ওদের নিত্য সভা বসে।

আমি স্বেচ্ছায় প্রহারত,

যেখানে সবাই মরে অনাহারে।

৫০

নাস্তিকেরও গোপন এক ঈশ্বর আছে।

৫১

আস্তিকের ঈশ্বর

সর্বস্ব হারানোর ভয়ে

সদা কম্পিত থাকে।

শিশুর ঢিলা রবারের প্যান্টের মতো

শুধু খুলে খুলে পড়ে।

৫২

একবার হাত থেকে ফসকে গেলে

বিলের মাছ

দ্বিতীয়বার আর ধরা যায় না।

৫৩

অন্ধকারে সবই মেলে,

হারাই আমরা শুধু আলোতে।

৫৪

এত দিয়েও আমি তোমার কাছে ঋণী!

গ্রাস করে সমুদ্র আমায় বলে,

এত ক্ষুদ্র কেন তুমি হলে?

৫৫

ভোরের রোদ্দুর 

যাযাবরের মতো

ক্ষণে ক্ষণে স্থান পরিবর্তন করে। 

৫৬

গোপন করতে পারো না!

কেমন নারী হে তুমি?

৫৭

পরকীয়া গোপন থাকলে 

তা বড় প্রেম,

প্রকাশ পেলে অপরাধ হয়।

যেখানে মানুষের মুক্তি

সেখানেই আবার ভীষণ ভয়। 

৫৮

আমি তো জানি না,

জোয়ারের পানির মতো

তুমিও তাই নতুন। 

৫৯

যৌবন তো অবিরাম,

বৃদ্ধ কি বিরাম পায়?

ওরা বেঁচে থাকে তোমাদের কৃপায়। 

৬০

তোমার ছায়া দেখে

সেই বোকা বাঘের মতো

আমি

লাফিয়ে পড়েছি গভীর পাত কুয়ায়।

৬১

আমি যাব,

রক্তাক্ত হব,

মরব জেনেও আমি যাব।

আমি যাবই যাব।

৬২

নিপীড়িত, নিষ্পেষিত মানুষের

একটাই দেশ–

কী ফিলিস্তিনি, কী হাইতি, কী বাংলাদেশ।

৬৩

এ বন্দীশালায় কত বাবর বৈরাগী হলো!

নটবরের যত নাটক

সবই হয়েছে এ বন্দীশালায়।

৬৪

এ হলো সব গল্পের শেষ অঙ্ক,

এখানে রামের চিতাও জ্বলে,

রাবনের চিতাও জ্বলে।

৬৫

অষ্টাদশী আমি

আটাশে এসে কেমন বদলে গেলাম!

জীবনে সবই তো পেলাম।

৬৬

মানুষ গোপনে যা করে

সবই মানবিক।

পশুরা গোপন করে না।

৬৭

দরজার নিচ থেকে

অনবরত বিজলী আলো

পালিয়ে এসে

আমাকে বলে গেলো

‘অপেক্ষা করো’।

৬৮

‘ভালচার ভালগার’,

গালি দেয় সবাই

তবু দূর আকাশে তাকিয়ে

দ্বিধা হয়,

ভুল হলো কি কোথাও?

৬৯

আশ্রয় নিতে গিয়েছো শালবনে!

সেথায় কি আশ্রয় মেলে?

আশ্রয় মেলে ঝোপেঝাড়ে।

৭০

কারো হাতে

দা-সড়কি-ছুরি-বল্লম,

করো হাতে

বই-খাতা-কলম।

পার্থক্য করার কি প্রয়োজন?

৭১

ওদের আছে সরকার,

ওদের আছে কারাগার,

ওদের কিছু করবে সাধ্য কার?

৭২

ক্ষুধার্ত সূর্যটা

উঠবে বলে এখনো হামাগুড়ি দেয়।

৭৩

জন্ম নিও তুমি সিন্দুতীরে,

না হয় জন্মাব আমি কারবালায়।

৭৪

আহারে উহারে করো

পাছে নাও যত পারো।

তুমি সবার।

বাঁচতে চাই বলে এখন আমার!

৭৫

ওখানে যেওনা পথিক,

ওখানে ভগবান কোলে

ফেরারী আসামীর বসবাস।

৭৬

ধর্ম ভাই এমন দাওয়াই,

তোমার নামে আমায় খাওয়াই।

৭৭

খাব খাব সব খাব,

যাব যাব স্বর্গেও যাব।

৭৮

আমার কোনো দোষ নাই,

ধরা শিকার আমি খাই 

হাত ধুয়ে গান গাই। 

৭৯

জোচ্চুরি যা করবি করিস

সময়মতো তারে ডাকিস। 

৮০

বিড়াল আমি ডাকি ঘেউ ঘেউ

ভাবছি আমায় দেখে না কেউ। 

৮১

কথা খাঁটি রিক্সায় হাঁটি

পাইপ দিয়ে মাখন চাটি। 

৮২

রাম দিয়েছে দৌলত,

রাবন দিয়েছে ধন,

গোপন কথা জানে না জনগণ। 

৮৩

রাম রাবণ রাম রাবণ

মজায় মজায় চলছে জীবন। 

৮৪

ভূত পেতনি দৈত্য দানব

সময় হলে সবই মানব। 

৮৫

অবশেষে দেখি একি

জীবনটা এক মস্ত ফাঁকি।

৮৬

কথার খেলায় ফুল ফোটাই

চেনে না কেউ আসল নাটাই।

৮৭

আমি তো রুচিশীল এবং সুশীল

আমাকে হতে হয় বসন্তের কোকিল।

৮৮

শুধু বাঁচলে চলে না,

আমার চাই বিলাসিতা।

আমি উন্নত মানুষ,

আমার আছে আদব-কেতা।

৮৯

চিবিয়ে চিবিয়ে

সাদা মগে কফি খাই।

পিছনে বাঁশ মারি,

সামনে সবাইকে বলি ভাই।

চাঁদপুর

৯০

আরব দেশে যাচ্ছি,

ওখানে গিয়ে

খাবদাব আর ফূর্তি করব।

৯১

বন্যতায় যে বিপন্ন হবে

ভালোবাসা দিয়ে

তাকে কতটুকু ভোলানো যায়?

৯২

হৃদয়ের রাসভারীতে

দিগম্বরীর আরাধনা হয় না।

৯৩

মুণ্ডুপাত ব্যতীত

মৃন্ময়ীর মৃত আত্মার সাথে

আসত্তি হয় কখনো?

৯৪

প্রস্তর হিমালয় গলে গলে

তুমি আজ স্রোতস্বিনী।

সব নদী ঠিকই

পারাবার চেনে,

তোমরা পবর্ত চেনো না!

৯৫

আমি একটা হরিণীকে

ব্যাঘ্র শাবক প্রসব করতে দেখেছি।

শুনেছি দুর্দিনে

বাঘিনীরাও নাকি হরিণ শাবক প্রসব করে।

৯৬

আমি দেখেছি

অন্ধকারে আলোকের অভিসার।

৯৭

সমুদ্র কখনো স্বপ্ন দেখে না,

সমুদ্র স্বপ্ন দেখায়।

৯৮

ফিরে যাই হৃদয়ের তন্ত্রী কেটে বানানো

পূর্ণ কুটিরে,

যেখানে আমার স্বপ্নের বাসরঘর।

৯৯

আমার পূজা সৃষ্টিতে, তোমার স্রষ্টায়।

১০০

চিনেছি প্রিয়তমা তোমাকেও।

এসব চিনি বলে

শুধু প্রেমিক নয়,

আমাকে অনেক বড়

যোদ্ধাও হতে হয়।

১০১

তুমি পছন্দ না করলে

সাগর শুকিয়ে যায় না,

মিসরের পিরামিডগুলো ধ্বসে পড়ে না,

তাজমহলের সৌন্দর্যের

এক চুলও হেরফের হয় না।

তুমি ভালো না বাসলেও

শুক্লপক্ষের আকাশে চাঁদ ওঠে,

বাগানে ঠিকই ফুল ফোটে।

১০২

নব্য অনেক রাজাকারেরা

দাঁড়ি রাখে না, টুপি পরে না,

নব্য কিছু নিজামিরা ধর্ম বিকোয়,

দেশপ্রেমও বিকোয়।

১০৩

রাজাকার, দেশটা এখনো তোমার,

তোমার বিচার করবে সাধ্য কার?

১০৪

জনগণও এখন

তোষামদে পেতে চায়

দুবৃত্তের সম্পদের ভাগ কিছু,

জনগণ চলছে এখন ওদের পিছু পিছু্।

১০৫

জীবনে কিছু ফুল ছায়া হয়ে ফোটে।

তোমরা কি দেখতে পাও

অদৃশ্য সে ফুলগুলো?

১০৬

নিন্দা করতে দিন,

সময়ে ওরাই বেশি প্রশংসা করবে।

ওরা রোজ ভালোমন্দের বৃত্ত বানায়,

নিজেরা পড়ে থাকে একই সীমানায়। 

১০৭

চলে যেতে দিন

একদিন ওরা দর্শক হয়ে আসবে। 

আজকে হাসবে, কালকে কাঁদবে। 

১০৮

এখন ধুয়ো দিচ্ছে,

একদিন হাততালি দেবে।

১০৯

সাগর সুবিশাল,

তীরে দাঁড়িয়ে দেখতে বেশ।

ডুবতে কি সেখানো ভালো?

১১০

একটা নষ্ট নারী সাথে নিয়ে

আজ আমি

অমাবশ্যার দেয়াল টপকাবো।

১১১

এক টুকরো পাউরুটির জন্য

একদিন একটা কাকের সাথে

লড়াই করে আমি হেরে গিয়েছিলাম।

এখন এক পাল শকুন

আমার পিছু নিয়েছে। 

১১২

তবু তমি রাক্ষসী,

দেহটাকে খাও কড়মড় করে,

মনটারে দাও গড়বড় করে। 

১১৩

যারা কবিতার খাতা ছিঁড়ে

কুটি কুটি করে 

বানের জ্বলে ভাসিয়ে দেয় না,

তারা কবি নয়। 

১১৪

যারা কলমটা ছুড়ে ফেলে

মানুষের মাঝে গিয়ে দাঁড়ায় না

তারা কবি নয়। 

১১৫

বিদ্রোহী কবিতার প্রয়োজন নেই আর,

বিদ্রোহ-ই আজকে শ্রেষ্ঠ কবিতা। 

১১৬

ফুল খেলবার দিন শেষ,

সাঙ্গ করো

কবি তোমার প্রেমের কাব্য। 

১১৭

আমি জাহাজ নই,

আমাকে হতে হয় পোতাশ্রয়। 

১১৮

টিকে রয়েছি এখনো,

আমাকে টিকে থাকতে হয়

মরুভূমিতে ছায়া হয়ে। 

১১৯

আদর্শের সাথে আদর্শের সঙ্গম,

 এ পথ বড়ই দুর্গম।

সৃষ্টি হয় অতিকায় অল্পপ্রাণ।

হরণ করেছে তারা মুক্তির গান।

১২০

তোমার কপালে

ওটা কীসের চিহ্ন?

দলবদ্ধতার?

১২১

রামায়ণ, মহাভারত, বেদ, বাইবেল, ত্রিপিটক

শেষের কবিতা, পথের পাঁচালী

সবই আমি লিখি।

শুধু ঐ একটি বই

এখনো লিখতে পারি না।

গোপনে লিখেছি, কিন্তু বলা যাবে না।

১২২

হিন্দু সংখ্যালঘু হলে

মসজিদ পোড়ালে সৃষ্টিকর্তা মরে,

মন্দির পোড়ালে নেচে ওঠে!

মুসলিম সংখ্যালঘু হলে

মন্দির পোড়ালে সৃষ্টিকর্তা মরে,

মসজিদ পোড়ালে নেচে ওঠে!

এই ঈশ্বর একটা বাঞ্চোত না?

১২৩

আমাকে ভালোবাসে তাই সে ভালো,

আমাকে পাত্তা না দিলে সে জঘন্য। 

১২৪

সতীত্বে মোহ নেই আমার,

মধ্যরাতের

হাসনাহেনাও আমায় পোষ মানায় না। 

১২৫

আস্তিকতা

আজীবন-ই বিক্রয়যোগ্য একটি পণ্য।

এখন দেখি নাস্তিকতাও বিকোয়!

১২৬

আমিও এখন মাথা

উপর নীচে নাড়াতে শিখেছি!

আগে নাড়াতাম ডানে বায়ে। 

১২৭

পূর্ণতার পরে প্রেম?

উচ্চতাপে উথলে পড়া

পাতলা দূধের মতো

ওদের ভালোবাসা—

কিছু চেটেপুটে নাও সবাই।

১২৮

পৃথিবীতে ধর্ম দুটি—

নারীর ধর্ম এবং পুরুষের ধর্ম।

১২৯

চমকিত হয়ে পথ হারিয়েছি বহুবার,

লক্ষ্য হারিয়েছি অহেতুক।

আবার

পথ খুঁজে পেয়েছিও বারবার। 

আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যৌবন হাঁসফাঁস করে,

তবু জীবনটা তো জিতুক।

১৩০

কেড়ে নিও না.

দেখবে 

তোমার আর দান করতে হবে না। 

১৩১

নীতি নামক দেয়ালটায়

বাঘের থাবা থমকে দাঁড়ায়।

ইঁদুরগুলো ঠিকই পথ করে নেয়। 

১৩২

এখানে মানুষ,

এখানে যৌবন।

এখানে দুই দুগুণে পাঁচ,

তিন চারে পনেরো। 

১৩৩

দিনে যে বেশ্যা বলে 

গালি দিয়েছিল,

রাতে দেখি

প্রথম খরিদ্দার আজকে সে। 

১৩৪

রঙ্গ করতে জানেলে

নটীর অভাব হয় না। 

১৩৫

কেউ শুরুতে ঠকায়

কেউ শেষে ঠকাতে চায়।

ঠকায় আসলে সবাই। 

১৩৬

আমাদের সবকিছুতেই আড়ম্বর,

অহেতুক অহংকার,

অসভ্যের মতো চিৎকার।

১৩৮

অবশেষে তোমরা তাহলে

স্বীকার করে নিচ্ছ,

ঐ ঘরগুলোতে এখন

অপরাধীদের আনাগোনা?

নইলে ওখানে কেন হবে

সর্বোচ্চ অপরাধীর সৎকারপূর্ব প্রার্থনা?

১৩৯

গল্পে গল্পে, ভ্রমে, ভালোবাসায়

তোমার সাথে রাত কাটাব।

অনিবার্য মিথ্যা কথার

পাট চুকিয়ে

তোমার কাছে সৎ হব।

শাস্তি মেনে কেড়ে নেব। 

১৪০

সত্যি কথা কও,

তুমিও কি আমার মতো নও?

১৪১

অহেতুক হন্যে হই,

কখনো বন্য,

এখনো কাল্পনিক কিছু কষ্ট পাই,

তোমায় পাবার নেশায়। 

১৪২

আমি তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত, ভীষণ ক্লান্ত। 

তোমার কাছে আসব,

অনন্তকাল বিশ্রাম নেব।

ভূত এবং ভগবান

Next Post

গণজাগরণ // দিব্যেন্দু দ্বীপ

কাব্যগ্রন্থঃ গণজাগরণ প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা, ২০১৪ প্রকাশকঃ জালাল উদ্দিন হীরা প্রকাশনীঃ বর্ণপ্রকাশ উৎসর্গঃ শাহবাগ আন্দেোলনে আত্মনিয়োগকারী কর্মী এবং সমর্থকদের উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে এমন অনেক কবি রয়েছেন, যারা হয়ত জীবনে অনেক কবিতা লিখেছেন, কিন্তু বই বের করেননি একটিও। আমি নিজেকে এতদিন সেভাবেই দেখে এসেছি। প্রতিদিনই আমি কিছু না কিছু লিখি। গত পাঁচ […]
Gonojagoron