সৈয়দ শামসুল হকের লেখা বিখ্যাত একটি গান। মৃত্যুর অনিবার্যতা নিয়ে তিনি গানটি লিখেছিলেন-
হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুস
দম ফুরাইলেই ঠুস
তবুতো ভাই কারোরই নাই একটুখানি হুশ
হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুস
রঙ্গীন ফানুস, হায়রে মানুষ।।
পূর্ণিমাতে ভাইসা গেছে নীল দরিয়া
সোনার পিনিশ বানাইছিলা যতন করিয়া
চেলচেলাইয়া চলে পিনিশ, ডুইবা গেলেই ভুস।।
মাটির মানুষ থাকে সোনার মহল গড়িয়া
জ্বালাইয়াছে সোনার পিদিম তীর্থ হরিয়া
ঝলমলায়া জ্বলে পিদিম, নিইভ্যা গেলেই ফুস।।
হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুস
দম ফুরাইলেই ঠুস
তবুতো ভাই কারোরই নাই একটুখানি হুশ
হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুস
রঙ্গীন ফানুস, হায়রে মানুষ
সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক মারা গেছেন। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী আনোয়ারা সৈয়দ হক এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সৈয়দ হক লন্ডনে চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশে ফেরার পর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে চিকিৎসার জন্য চলতি বছরের এপ্রিলে যুক্তরাজ্য গেলে তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। লন্ডনের রয়্যাল মার্সডেন হাসপাতালে কিছু দিন চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা আশা ছেড়ে দিয়ে তাকে বাকি দিনগুলো দেশে ফিরে প্রিয়জনদের সাথে কাটাতে বলে। অতঃপর ১ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন।
সাহিত্যের সর্ববিভাগে তাঁর কাজ থাকায় আমাদের দেশে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন সব্যসাচী লেখক হিসেবে। উপন্যাস, কবিতা, নাটক ও গান লিখে তিনি সুনাম অর্জন করেছেন। স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের অতলস্পর্শী এই লেখক।
তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে অন্তর্গত, বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ, তুমি সেই তরবারি, খেলারাম খেলে যা। কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে পরাণের গহীন ভিতর, বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা। নাটকের মধ্যে রয়েছে নুরলদীনের সারাজীবন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়।
সিনেমার কাহিনী এবং গানও লিখেছেন তিনি। উপস্থাপনা করেছেন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান। সত্তরের দশকে বিবিসি বাংলায় প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন।
সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে আগামীকাল বুধবার সৈয়দ হকের মৃতদেহ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে । পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তারা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কুড়িগ্রামের একটি স্কুলে। ঐ স্কুলেরই একটি গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। সৈয়দ হকের পরিবার জানিয়েছে, তিনি নিজেই সেখানে একটি কবর নির্ধারণ করে গেছেন।
সৈয়দ হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও গৃহিনী হালিমা খাতুনের ঘরে কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ।
এরপর থেকে নিরবিচ্ছিন্ন লিখেছেন সৈয়দ হক সাহিত্যের সব শাখায়। তবে বন্ধুরা তাঁকে কবি হিসেবেই চিনতে চাইতেন।
বৈশাখে রচিত পংক্তিমালা, পরাণের গহীন ভেতর, নাভিমূলে ভস্মাধার, আমার শহর ঢাকা, বেজান শহরের জন্য কেরাম, বৃষ্টি ও জলের কবিতা -কাব্যগ্রন্থগুলোর অনেক কবিতা নীরিক্ষাধর্মী যা তাকে বিশেষভাবে জনপ্রিয় করে তোলে।
কাব্যনাট্য রচনায় ঈর্ষণীয় সফলতা পাওয়া সৈয়দ হক নূরলদীনের সারাজীবন, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, গণনায়ক, ঈর্ষা ইত্যাদি নাটকে রেখেছেন মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ ও ‘নুরলদীনের সারাজীবন’ বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
সূত্র: বিডিনিউজ, বিবিসি ।