
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি কোম্পানির নামে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ২২ বছরেও পরিশোধ করেননি তিনি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, এটা ২৫ বছর আগের ঘটনা। আমাকে আমার বন্ধুর কোম্পানি রাইন গার্মেন্টসের এমডি করা হয়েছিল। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করিনি, যোগদানের পর থেকে আমি আর এই কোম্পানির এমডি থাকিনি। আর কোম্পানিটিও অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই কোম্পানির মূল যারা মালিক ছিলো তারা আমেরিকা চলে গেছে। কেউ দেশে নেই।
গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি ঢাবির একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষদের কীভাবে ডিন থাকেন জানতে চাইলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বিবার্তাকে বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। তবে পুরো বিষয়টি জানতে হবে। এর আগে এটা নিয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ২২ বছরেও ঋণের টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগে রাইন গার্মেন্টস (প্রাইভেট) লিমিটেডের এমডি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ কোম্পানির আরও ২ পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ১০ বছর আগে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের করা একটি মামলায় দ্বিতীয় দফায় গত ৯ মার্চ এ আদেশ দেয় ঢাকার অর্থঋণ আদালত-১। এর আগে ২০০৯ সালে একই মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে,১৯৯১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় রাইন গার্মেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের নামে তিনটি হিসাব প্যাকিং ক্রেডিট নং-২৬৯৮, এসওডি (এক্সপোর্ট) নং-৭৮৭ ও এসওডি (এক্সপোর্ট) নং-২১৯৭ খোলা হয়। এরপর কোম্পানির নামে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি (ঋণপত্র) খোলার মাধ্যমে পোশাকপ্রস্তুত ও রফতানির উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে রাইন গার্মেন্টস ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫২ টাকা ঋণ নেয়। এ সময় ঋণ পরিশোধের সময়কাল নির্ধারণ করা হয় ১০ বছর। কিন্তু এ সময় সুদে-আসলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় কোম্পানিটি। বেশ কয়েকবার টাকা পরিশোধের সময় বাড়ানোর দাবিও জানায় কোম্পানিটি। কিন্তু এরপরও টাকা দিতে গড়িমসি করে কোম্পানিটি। ফলে ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে।
এদিকে ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ না করায় ২০০৫ সালের ২৬ অক্টোবর ন্যাশনাল ব্যাংকের আইন উপদেষ্টার মাধ্যমে চূড়ান্ত লিগ্যাল নোটিস দেয়া হয় রাইন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষকে। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর রাইন গার্মেন্টসসহ ৪ পরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (যার মামলা নং-৩২৪/২০০৫)।
মামলায় আসামিরা হলেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলাম, পরিচালক মো. ইকবাল, রঞ্জিত কুমার সাহা ও শেনিন রুবায়েত। মামলাটিতে ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই ব্যাংকের অনুকূলে ডিক্রি হয়। পরবর্তীকালে ব্যাংক ডিক্রি জারি করানোর লক্ষ্যে অর্থজারি মামলা (নং ৪৩৩/২০০৭) রুজু করে। ওই সময় পর্যন্ত ব্যাংকের পাওনা ছিল ২৯ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার ৪৪৬ টাকা।
২০০৯ সালের ২৮ মে শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলামসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত ৬ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশ দেয়। কিন্তু ছয় বছর পার হলেও রাইন গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খেলাপিঋণ আদায় করতে পারেনি ন্যাশনাল ব্যাংক। এদিকে দীর্ঘ ২২ বছরেও ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মার্চ ঢাকার অর্থঋণ আদালত-১ পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। দেওয়ানি আটকাদেশের কপি ইতিমধ্যে রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় পৌঁছানো হয়েছে বলেও আদালত সূত্রে জানা গেছে।
রাইন গার্মেন্টসের এমডি শিবলী রুবায়েত-উল-ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগযোগ করলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমি কিছুই জানি না। সবকিছু গোপনীয়ভাবে করা হয়েছে। কোনো আদালত আমাকে কখনো কোনো নোটিসও পাঠায়নি। গতকাল পত্রিকায় দেখে আজ সোমবার আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। পুরো কাগজপত্র হাতে পেলে বলতে পারবো বিষয়টি কী।
তিনি আরও বলেন, এই কোম্পানির মালিক আমি না। আমার বন্ধু সাবেক ফুটবলার রণজিত এটার মালিক ছিল। তারা আমাকে এমডি বানিয়েছিল। আমার স্ত্রীকে পরিচালকও বানায়। কিন্তু এই কোম্পানি ২০০০ সালের আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তখন ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ করে দেয়া হয়েছে।নতুন করে কীভাবে কি হয়েছে সবকিছু জেনে তারপর বলতে হবে।