ফলোআপ নিউজ ডেস্ক
পার্থক্য বলতে যুগান্তর এক্ষেত্রে প্যারার একটি নাম (যেভাবে স্বপ্ন পূরণ) দিয়েছে। কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করেছে, যেমন, ‘রোজকারের’ জায়গায় ‘প্রতিদিন’ লিখেছে। দু’একটি শব্দ বাদ দিয়েছে। -এরকম।
সংবাদের গুরুত্ব বিবেচনায় অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যমের বরাতে খবর ছাপা লাগতেই পারে। তাতো নিশ্চয়ই মন্দ কিছু নয়। কিন্তু সংবাদটি নিয়ে সূত্র উল্লেখ না করা অবশ্যই নিন্দনীয়, তা হয়ত বে-আইনীও। আমাদের দেশের পাঠকদের ধারণা নামকরা সংবাদ মাধ্যমগুলো নিশ্চয়ই এ কাজ করে না। পাঠকদের ধারণা যে ভুল, তা প্রমাণ হয় এই সংবাদটি দ্বারা। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬, মধ্যাহ্নে (২:৩৬:৩৭), যুগান্তর পত্রিকা খবর ছেপেছে “ভিক্ষুক থেকে ক্যামব্রিজের ইঞ্জিনিয়ার!” শিরোণামে। খবরটির নিচে কোনো সূত্র উল্লেখ করা নেই। ফলোআপ নিউজ এর পক্ষ থেকে বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা যায়, যুগান্তর মূলত কোলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার “ভিক্ষাবৃত্তি করে কাটত জীবন, আজ ইনি কেমব্রিজের ইঞ্জিনিয়ার!” নিউজটি হুবহু ছেপে দিয়েছে। আনন্দবাজার সংবাদটি ছেপেছে একই দিনে অর্থাৎ ১৬ সেপ্টম্বর ১১ টা ১৫ মিনিটে। আনন্দবাজার যেহেতু খবরটি আগে ছেপেছে, তাই ধরে নিতে হবে যুগান্তরই কপি করেছে। তাছাড়া কোলকাতার পত্রিকা আনন্দবাজার সংবাদটি ছেপেছে সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে।
সময়ের স্বল্পতায় বা বিশেষ বাস্তবতায় কোনো পত্রিকার সংবাদ একইরূপ নেওয়া লাগতে পারে, যদিও এ ধরনের সংবাদের ক্ষেত্রে ব্যস্ততার বিষয়টি বোধগম্য নয়। কিন্তু উৎস উল্লেখ করতে দ্বিধা কেন? ভালো হত তারা যদি উৎস থেকে তথ্য নিয়ে আরো কিছু সংবাদ মাধ্যম বা অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে সংবাদটিকে আরো বিস্তৃত করতে পারত। তাতো করেই নেই, উল্টে কপি করেও সূত্রটি পর্যন্ত উল্লেখ করে নেই যুগান্তর। এমনকি ছবিও দিয়েছে একই, যে ছবি আনন্দবাজার নিয়েছে ব্যক্তির ফেসবুক থেকে বলে তারা উল্লেখ করেছে। কিন্তু যুগান্তর ছবির নিচেও কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি।
পত্রিকা দুটির (একই) সংবাদের তুলনা:
আনন্দবাজার: রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন চলত তাঁর। সারা দিন যা আয় হত মায়ের হাতে তুলে দিতেন তিনি। যার প্রায় পুরোটাই নেশা করে উড়িয়ে দিত তাঁর মা। আধপেটা সেই খুদের মাথা গোজার ঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। ফুটপাথেই দিন কাটত তাঁর।
যুগান্তর: রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষাবৃত্তি করে দিন চলত তার। সারা দিন যা আয় হত মায়ের হাতে তুলে দিতেন তিনি। যার প্রায় পুরোটাই নেশা করে উড়িয়ে দিত তার মা। আধপেটা সেই খুদের মাথা গোজার ঠাঁই পর্যন্ত ছিল না। ফুটপাথেই দিন কাটত তার।
#কোনো পার্থক্য নেই, যুগান্তর শুধু ত-এর মাধার উপর থেকে চন্দ্রবিন্দুটা বাদ দিয়েছে ।
আনন্দবাজার: ফসলের বিপুল ক্ষতির পর নেল্লোরের ভিটেবাড়ি ছেড়ে সেই খুদে জয়ভেলা চেন্নাই চলে এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তারপর থেকে এই ফুটপাথই হয়ে উঠেছিল তাঁর ঠিকানা। আর আজ চেন্নাইয়ের ফুটপাথ থেকে সেই খুদেই পৌঁছে গিয়েছে লন্ডনের কেমব্রিজে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন জয়াভেল। আগামী মাসে ইতালি যাওয়ার কথা তাঁর। এখন তাঁর বয়স ২২ বছর।
যুগান্তর: ফসলের বিপুল ক্ষতির পর নেল্লোরের ভিটেবাড়ি ছেড়ে সেই খুদে জয়ভেলা চেন্নাই চলে এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তারপর থেকে এই ফুটপাথই হয়ে উঠেছিল তার ঠিকানা।
আর আজ চেন্নাইয়ের ফুটপাথ থেকে সেই খুদেই পৌঁছে গিয়েছে লন্ডনের ক্যামব্রিজে। বিশ্ববিখ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন ২২ বছর বয়সী জয়াভেল। আগামী মাসে ইতালি যাওয়ার কথা তার।
#কোনো পার্থক্য নেই, শুধু শেষের দুটো লাইন আগপিছ হয়েছে।
এরপরে একটু পার্থক্য তৈরি করেছে যুগান্তর। যেমন:
আনন্দবাজার: তাঁর এই উড়ানের ‘ডানা’ অবশ্য এক দম্পতি। ১৯৯৯ সালে যে ডানার উপরে ভর করেই ওড়া শুরু হয় তাঁর।
রোজকারের মতো সে দিনও পেটের টানে চেন্নাইয়ের রাস্তায় ভিক্ষা করছিল জয়াভেল। পরিচয় হয় উমা মুথুরামন নামে এক মহিলা এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে। তাঁরা দু’জনেই একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। যে সংস্থা পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করে থাকে। জয়াভেলকে ভিক্ষা করতে দেখে যেচে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করতে যান তাঁরা। হঠাত্ এই যেচে পরিচয় ভাল চোখে নেয়নি অনেকেই। জয়াভেলের মা এবং অন্য পথ শিশুদের পরিবার তাঁদের মারধর পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তাঁরা যে তাদের ভালর জন্যই কাজটি করছেন তা বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। শেষমেশ অনেক বুঝিয়ে জয়াভেলকে ভাল খাওয়াদাওয়া এবং শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের সংস্থায় নিয়ে আসেন তাঁরা। জয়াভেলের সঙ্গে আরও বেশ কিছু পথ শিশুকেও নিয়ে এসেছিলেন উমা। তাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে মোটেই এখানে থাকতে ভাল লাগত না জয়াভেলের। সারাদিন শুধু খেলতে ইচ্ছা করত। চলে যেতে ইচ্ছা করত সেই চেনা ফুটপাথে। তারপর আস্তে আস্তে নিজের ফুটপাথের জগত ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করলেন। উমা আর তাঁর স্বামীর চেষ্টায় এডুকেশন লোন জুটে গেল। কঠোর পরিশ্রমে খুব তাড়াতাড়ি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও উর্ত্তীর্ণ হলেন। বর্তমানে পারফরম্যান্স কার এনহ্যান্সমেন্ট টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। সম্প্রতি ইতালিতেও পড়াশোনার জন্য ডাক পেয়েছেন তিনি। আর তাঁর পড়াশোনায় যাতে কোনও ছেদ না পড়ে তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন উমাদেবীর সংস্থা। জয়াভেলের ইতালিতে পড়াশোনার জন্য ৮ লক্ষ টাকা জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা।
যুগান্তর: যেভাবে স্বপ্ন পূরণ: তার এই উঁচু শিখরে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এক দম্পতি। ১৯৯৯ সালে যে ডানার ওপরে ভর করেই স্বপ্নের শুরু হয় তার।
প্রতিদিনের মতো সেদিনও পেটের দায়ে চেন্নাইয়ের রাস্তায় ভিক্ষা করছিল জয়াভেল। পরিচয় হয় উমা মুথুরামন নামে এক মহিলা এবং তার স্বামীর সঙ্গে। তারা দু’জনেই একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। যে সংস্থা পথ শিশুদের নিয়ে কাজ করে।
জয়াভেলকে ভিক্ষা করতে দেখে যেচে তার সঙ্গে পরিচয় করতে যান তারা। হঠাৎ এই যেচে পরিচয় ভাল চোখে নেয়নি অনেকেই। জয়াভেলের মা এবং অন্য পথ শিশুদের পরিবার তাদের মারধর পর্যন্ত করতে উদ্যত হয়েছিলেন। তারা যে তাদের ভালর জন্যই কাজটি করছেন তা বোঝাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।
শেষমেশ অনেক বুঝিয়ে জয়াভেলকে ভাল খাওয়া-দাওয়া এবং শিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের সংস্থায় নিয়ে আসেন তারা। জয়াভেলের সঙ্গে আরও বেশ কিছু পথ শিশুকেও নিয়ে এসেছিলেন উমা। তাদেরকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
প্রথম দিকে মোটেই এখানে থাকতে ভাল লাগত না জয়াভেলের। সারাদিন শুধু খেলতে ইচ্ছা করত। চলে যেতে ইচ্ছা করত সেই চেনা ফুটপাথে। তারপর আস্তে আস্তে নিজের ফুটপাথের জগত ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করলেন।
উমা আর তার স্বামীর চেষ্টায় শিক্ষাঋণ জুটে গেল। কঠোর পরিশ্রমে খুব তাড়াতাড়ি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষাতেও উর্ত্তীর্ণ হলেন।
বর্তমানে পারফরম্যান্স কার এনহ্যান্সমেন্ট টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি।
সম্প্রতি ইতালিতেও পড়াশোনার জন্য অফার পেয়েছেন তিনি। আর তার পড়াশোনায় সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসা উমাদেবীর সংস্থা ইতিমধ্যে জয়াভেলের ইতালিতে পড়াশোনার জন্য ৮ লাখ টাকা জোগাড় করেছে সংস্থাটি।
#পার্থক্য বলতে যুগান্তর এক্ষেত্রে প্যারার একটি নাম (যেভাবে স্বপ্ন পূরণ) দিয়েছে। কয়েকটি শব্দ পরিবর্তন করেছে, যেমন, ‘রোজকারের’ জায়গায় ‘প্রতিদিন’ লিখেছে। দু’একটি শব্দ বাদ দিয়েছে। -এরকম।
শেষ প্যারাটি:
আনন্দবাজার: তবে এত দূর গিয়েও চেন্নাইয়ের সেই ফুটপাথকে কিন্তু ভোলেননি তিনি। ভোলেননি তাঁর ফুটপাথের বন্ধুদেরও। দেশে ফিরলে সময় করে একবার অন্তত সেখানে ঢুঁ মেরে আসেন তিনি। জয়াভেলের মা-ও যে আজও সেই ফুটপাথেরই বাসিন্দা। জয়াভেলের এই উড়ানই আজ অন্য পথশিশুদেরও কাছেও অনুপ্রেরণা।
যুগান্তর: তবে এতদূর গিয়েও চেন্নাইয়ের সেই ফুটপাথকে কিন্তু ভোলেননি তিনি। ভোলেননি তার ফুটপাথের বন্ধুদেরও। দেশে ফিরলে সময় করে একবার অন্তত সেখানে ঢুঁ মেরে আসেন তিনি।
# এক্ষেত্রে যুগান্তর শেষ দুটি লাইন বাদ দিয়েছে শুধু।
অনলাইনের এ যুগে কপি-পেস্ট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে তো হামেশাই তা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানেরও যদি কোনো দায়বদ্ধতা না থাকে, তাহলে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে কী করে? নৈতিকতার বিষয়টিই বা যায় কোথায়?