২১ মে ১৯৭১, শুক্রবার (৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৮) বাগেরহাটের কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের বাহিনী রামপাল উপজেলার পেড়িখালী ইউনিয়নের ডাকরা গ্রামে ব্যাপক গণহত্যা চালায়।
বক্তার তাদের বক্তব্যে গণহত্যাকে ইতিহাসের বর্বরতম বিষয় উল্লেখ করে বলেন, যাতে কখনো পৃথিবীর কোথাও আর গণহত্যা সংগঠিত না হয় এজন্য গণহত্যা নিয়ে আমাদের গবেষণা, শোকসভা, স্মরণসভা পালন করতে হবে। ঘৃণ্য সেই হত্যার রাজনীতিকে ঘৃণা করতে হবে। প্রতিবাদ প্রতিরোধের মাধ্যমে হত্যার রাজনীতি, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই নিক্ষেপ করতে হব। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, কারণ কুচক্রীরা, হত্যাকারীরা, সম্রাজ্যবাদীরা, ধর্মব্যবসায়ীরা এখনো থেমে নেই। তারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে। তাদেরকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। হত্যাকারীদের বিচার হতে হবে। তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই হবে।
বক্তারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যা বিষয়ক বই পড়ার জন্য উতসাহিত করতে শিক্ষকবৃন্দকে অনুরোধ করেন। দিব্যেন্দু দ্বীপ সঞ্চালনার এক পর্যায়ে শহীদ সন্তানদের ডেকে নিয়ে তাদের কথা শোনেন। আহতদের কথা শোনেন। তিনি বিষয়ের ওপর স্কুলের শিক্ষার্থীদের কথা বলার সুযোগ দেন।
নির্মূল কমিটির খুলনা অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক তার বক্তব্যে বলেন, রাজাকাররা বংশ পরম্পরায় সক্রীয় কিন্তু আমাদের পক্ষে অনেকক্ষেত্রে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। হত্যার রাজনীতি বন্ধ করতে হলে হত্যাকারী এবং তাদের বংশধরদের চিনতে হবে।
বক্তব্য রাখেন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি, বাগেরহাটের আহ্বায়ক আব্দুল জলির সরদার, ডাকরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক শ্রী রবীন্দ্র নাথ মণ্ডল, মুক্তিযোদ্ধা শ্রী অতীন্দ্র নাথ হালদার, ডাকরা বধ্যভূমি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি শ্রী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডাকরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক লেখক বিষ্ণুপদ বাগচী, শহীদ সন্তান প্রান কৃষ্ণ হালদার, শহীদ পরিবারের সদস্য শিশির কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
শোকসভার সভাপতি হিসেবে অ্যাড. আব্দুল জলিল সরদার তার বক্তব্যে বলেন, বাগেরহাটে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কোনো স্থান নেই, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোকে কোনোভাবেই আমরা বাগেরহাটে সহ্য করব না। ওরাই ‘৭১ এ গণহত্যা চালিয়েছিল, তাই তাদেরকে প্রতিহত করা আমাদের দায়িত্ব।
ডাকরা গণহত্যায় কয়েকশো লোক নিহত হয়। এটি বাগেরহাট জেলার সবচে বড় গণহত্যা। ডাকরা গ্রামের ডাকরা কালিবাড়িটি ছিলো তখন ঐ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি ধর্মীয় মিলনকেন্দ্র। মন্দিরের নোয়াকর্তা (বাদল চন্দ্র চক্রবর্তী) ছিলেন ওই কালিবাড়ির প্রধান পূজারী বা সেবাইত। সাধক ও ধর্মগুরু হিসেবে তিনি সকলের নিকট অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন এবং সকলে তাকে নোয়াকর্তা হিসেবে সম্বোধন করতেন। তাকে ঘিরেই ঐ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ জীবন বাঁচাতে পালিয়ে ভারত যাচ্ছিল। নদীপথে নৌকায় করে তারা ভারত রওনা হয়েছিল। হঠাৎ রজ্জব আলীর বাহিনী ভারতগামী নৌকাগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে সকল পুরুষ সদস্যকে হত্যা করে। অনেকে সাথে সাথে মারা যায়। অনেকে দীর্ঘ সময় নিয়ে যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যায়, গুলি খেয়েও যারা মারা যাচ্ছিল না তাদের পুনরায় বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হয়।