তুলসী পাতা চিবোলে চরিত্র ভালো থাকে

বাংলা নামঃ তুলসি

তুলসী গাছ
হিন্দু স্বচ্ছল বাড়িতে এরকম সযত্নে তুলসী গাছ বাঁধিয়ে রাখা হয়। তবে সব পরিবারেই কোনো না কোনোভাবে তুলসী গাছ থাকে।

বৈজ্ঞানিক নামঃ Ocimum Sanctum, Ocimum tenuiflorum
ইংরেজি নামঃ holy basil, tulasī

তুলসী মূলত একটি ঔষধিগাছ। তবে হিন্দু সম্প্রদায় এটিকে পূজা করে, এবং তুলসী পাতা সকল পূজার অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

সমাজ বিজ্ঞানীরা মনে করেন, তুলসী গাছের গুরুত্ব বিবেচনা করেই তৎকালে তুলসী গাছকে পবিত্র এবং পূজার উপকরণ করে তোলা হয়েছিল যাতে গাছটি সবাই বাড়িতে রাখে।

সে উদ্দেশ্য অবশ্যই ভীষণভাবে সফল হয়েছে বলতে হবে, কারণ, হিন্দু ধর্মের অনুসারী সকলের বাড়িতে তুলসী গাছ অবশ্যই থাকে।

তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি ঝাঁঝালো সুগন্ধযুক্ত উদ্ভিদ। বেদ এবং সহিংতায় তুলসীকে ‘সীতাস্বরূপা’, ‘লক্ষীস্বরূপা’, ‘বিষ্ণুপ্রিয়া’, ‘কল্যাণী’ ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

তুলসী একটি ঘন শাখা প্রশাখা যুক্ত এবং দুই থেকে তিন ফুট উঁচ্চতা বিশিষ্ঠ একটি চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর মূল-কাণ্ড কাষ্ঠল, পাতা দেড় থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা, তবে প্রজাতীভেদে পাতা এবং খাঁজের আকৃতি বদলায়। প্রশাখার অগ্রভাগ হতে পাঁচটি পুষ্পদণ্ড বের হয় এবং প্রতিটি পুষ্পদণ্ডের চারদিকে ছাতার মত দশ থেকে বিশটি স্তরে ফুল থাকে। প্রতিটি স্তরে ছয়টি করে ছোট ফুল ফোটে। তুলসী বীজ হালকা লালচে বর্ণের হয়। তুলসী পাতা বা ফুল চাবালে একটু ঝাল ঝাল লাগে। তবে ঘ্রাণ সুন্দর।

তুলসী গাছে একটু ভেজা মাটিতে ভালো জন্মে। বাংলাদেশ এবং ভারতের সর্বত্র এই গাছ পাওয়া যায়। জুলাই আগষ্ট থেকে নভেম্বর ডিসেম্বর গাছে মঞ্জরী দেখা দেয়। বর্ষাকালে বীজ ছড়িয়ে দিলে সহজেই গাছ জন্মে। ভারতে বাণিজ্যকভাবে চাষ হয়। বাংলাদেশেও এখন বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে।

বাড়িতে তুলসী গাছ থাকার উপকারিতা: তুলসী গাছ দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা অক্সিজেন সরবরাহ করে, তাই বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়। তুলসী গাছ থাকলে ইঁদুর-সাপ ইত্যাদি প্রাণীরা দূরে থাকে।

তুলসী পাতা
পরিপুষ্ঠ পাতা

ঔষধী গুণাগুণ: তুলসী পাতা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষিত কাঁশির ওষুধ। আয়ুর্বেদী ব্যবহারের পাশাপাশি তুলসী পাতার রস দিয়ে এলোপ্যাথি কাঁশির ওষুধও তৈরি করা হয়। এমনিতে তুলসী পাতার রস মধু মিশিয়ে খেলে গলা পরিষ্কার হয়। শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে তুলসী পাতার রস কার্যকারী।

তুলসী পাতার রস জীবাণুনাশক এবং এন্টিসেপটিক গুণসমৃদ্ধ। শরীরের কোনো অংশ কেটে গেলে সাথে সাথে তুলসী পাতা চিবিয়ে রস লাগিয়ে দিলে তা এন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ক্ষত সারাতেও নিয়মিত তুলসী পাতার রস ব্যবহার উপকারী।

তুলসী পাতার রসে ওসিমারিন এবং ওসিমুমসিডেস এ এবং বি থাকে, যা মানুসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা কমায়। বিষয়টি ইঁদুরের উপর পরীক্ষিত, শারীরিক ওজন হিসেবে প্রতি কেজিতে ৪০মিগ্রা. ব্যবহার করে ফলাফল পাওয়া গেছে।

তুলসী পাতার রসে আরসলিক এসিড থাকে যা শরীরে চর্বি কমায়, এবং একইসাথে টেস্টেস্টেরনও কমায়। ফলে তুলসী পাতার রস যৌনেচ্ছা কমাতে সহায়তা করে। খরগোশের শরীরে প্রতিদিন দুই গ্রাম তুলসী পাতার রস প্রয়োগ করে এ ধরনের ফল পাওয়া গেছে। উল্লেখ্য, ফলের খোসায়ও আরসলিক এসিড থাকে।

tulsi-tea
তুলসী চা

প্রতিদিন শরীরের প্রতি কেজি ওজনের অনুপাতে একশো থেকে দুইশো মিগ্রা. তুলসী পাতার রস খেলে তা যকৃতের ক্ষয় রোধ করতে সমর্থ হয়। তুলসী পাতার রসে ফ্লাভোনল নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শুধু দেহের ক্ষয় রোধ করে না, মূত্রনালীতে জন্ম নেওয়া ই-কলাই ব্যাকটেরিয়াদেরও ধ্বংস করে। এ কারণে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করতে তুলসী পাতার রস কার্যকারী।

তুলসী পাতার তেলে ইউজেনল থাকে যা এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সুগন্ধী হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এই তেল কিছুটা বিষাক্ত, তাই খাবার হিসেবে ব্যবহার্য নয়।

জীবাণুনাশক বলে দাঁতের রোগের উপশমকারী হিসেবে টুথপেস্ট তৈরিতে তুলসী ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তুলসীর অনেক ধরনের পরীক্ষিত- অপরীক্ষিত এবং আঞ্চলিক ব্যবহার রয়েছে।

বাণিজ্যিক ব্যবহার: তুলসী পাতা, গাছ, মঞ্জরী এবং বীজের বিভিন্ন আয়ুবের্দীক ওষুধ বাণিজ্যিকভাবে রয়েছে, পাশাপাশি কাঁশির ওষুধ হিসেবে তুলসী পাতার রস বিভিন্ন এলোপ্যাথিক ওষুধ কোম্পানি বাজারজাত করে। বর্তমানে তুলসী পাতার চা বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। রূপচর্চার বিভিন্ন উপাদান তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে।