ডা. আমিনা আফরোজ অনু
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীর সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে দূষিত ঢাকা শহরে। শিশুসহ যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে, হচ্ছে। অ্যাজমায় সচরাচর মানুষ মারা যায় না, তবে কখনো কখনো রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা সৃষ্টি হয়ে হার্টফেইল পর্যন্ত হয়ে যায়। সুচিকিৎসার অভাবে অ্যাজমা রোগীরা খুব কষ্টে থাকে।
শ্বাসনালির প্রদাহজনিত দীর্ঘস্থায়ী রোগ হলো অ্যাজমা। শ্বাসনালিতে বিভিন্ন কোষ প্রধানত ইওসিনোফিল ও অন্যান্য উপাদান জমা হয়ে শ্বাসনালির ছিদ্র পথ সরু হয়ে যায়। রোগী শ্বাসকষ্টসহ শুকনো কাশি, বুকে কাশি জমে যাওয়া, শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে শোঁ শোঁ আওয়াজ হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে থাকে।
শীতকালে শুষ্ক ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাতাসে উড়ে বেড়ানোয় ধূলিকণার আধিক্যে অ্যাজমার সমস্যা বেড়ে যায়।
কারণ
অ্যাজমার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে গবেষকরা ধারণা করেন, কিছু বংশগত ও পরিবেশগত কারণে অ্যাজমা হয়। সব বয়সের মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত ঝামেলা বেশি হয়।
যাদের রক্তের সম্পর্কে কারো মধ্যে অ্যাজমা থাকে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এছাড়াও ঘরের উপাদানের থাকা ক্ষুদ্র কীট, ধুলাবালি, গাছ-আগাছা, ফুলের পরাগরেণু, পশুপাখির পালক, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি থেকে সংক্রমণ হয়ে থাকে।
লক্ষণসমূহ
শ্বাসকষ্ট।
কাশি (রাতে ঘুমানোর সময় কাশি বেড়ে যায়)।
কফ থাকতে পারে।
শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন হাঁটলে বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
বুক ভার হয়ে থাকে।
শ্বাস নেওয়ার সময় বাঁশির মতো আওয়াজ হয়।
করণীয়
অ্যাজমার ওষুধ বা ইনহেলার সবসময় হাতের কাছে রাখুন।
ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার, কলিজা, গাজরসহ শাক-সবজি ও মধু খাবেন।
নিয়মিত চেকআপ করাবেন।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।
ধূমপান ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলুন।
বালিশ লেপ তোশক —পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা ভালো, কারণ, কার্পেটের ফাঁকে ফাঁকে ধুলো জমে।
ঠাণ্ডা খাবার আইসক্রিম ইত্যাদি না খাওয়া।
বাড়িতে পোষা প্রাণী (কুকুর, বিড়াল) থাকলে নিয়মিত গোসল করাতে হবে বা পরিচ্ছন রাখতে হবে।
মানসিক চাপ, উৎকণ্ঠা এড়িয়ে চলতে হবে।
অ্যাজমা অনেক সময় জটিল ও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যাদের অ্যাজমা স্থায়ী ও পুরনো তাদের হার্টফেল হতে পারে এবং রোগী শয্যাশায়ী হয়ে যেতে পারে। শরীরে সবসময় অক্সিজেন কম থাকতে পারে। অক্সিজেনের অভাবে স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। ফুসফুসের অংশবিশেষ চুপসে যেতে পারে। নিউমোনিয়াও হতে পারে। পায়ে পানি আসতে পারে। মুখ থেকে ছিটেফোঁটা রক্ত বেরিয়ে আসতে পারে।
অ্যাজমার রোগী নিজে যত্নবান হলে এ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ওষুধ খেয়ে রোগের প্রকোপ কমাতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু ইনহেলার জাতীয় ব্রঙ্কোডাইলেটর ব্যবহার করেও কিছু নিয়ম মেনে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রঙ্কোডাইলেটরের পাশাপাশি স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা প্রয়োজন হতে পারে। তবে বারবার ওষুধের মাত্রা বাড়ানোর চেয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখলেই অনেকটা সুস্থ থাকা সম্ভব।
ডা. আমিনা আফ্রজ অনু
এমবিবিএস (ডি.ইউ)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
লেকচারার, ট্রমা আইএমটি অ্যান্ড ম্যাটস।