অবহেলিত // শেকস্ রাসেল

বাবা বাড়িতে প্রায়ই খাওয়া দাওয়ার  আয়োজন করতেন। ঘরে ঠিকমত ছাদটুকু নেই, কিন্তু মাঝে মাঝে বাড়িতে খাসি বা শুকর মেরে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে না খেলে ওনার ভালো লাগত না। আসলে প্রাচুযর্হীন জীবনে ওনার অন্তরের আভিজাত্যে এবং প্রচুর জীবনীশক্তির প্রকাশ ঘটত আয়োজন করে খাওয়া-দাওয়া এবং খেলাধুলার মাধ্যমে।

অন্যরা আড্ডা দিতেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে। বাবা খুব বাধ্য হলে কাজ করতেন আড্ডা এবং খেলাধুলার ফাঁকে ফাঁকে। সাধারণত তাস-দাবাই বেশি খেলতেন। ফুটবলও খেলতেন। বিভিন্ন বাড়িতে আড্ডা বসত। মাঝে মাঝে খাওয়ার আয়োজন বাড়িতে করলেও, আমাদের বাড়িতে কখনো খেলার আসর বসাতে দেখিনি।

কখনো কখনো গভীর রাতে একটি কড়ে বা স্টিলের প্লেট বা ছাতি নিয়ে হাজির হতেন। এখন বুঝি যে উনি বাজির খেলাও খেলতেন। উনি ওসব নিয়ে বাড়িতে আসলে আমরা আনন্দিত হতাম। পুলক অনুভব করতাম এই ভেবে যে, আমার বাবা জয়ী হয়েছেন। বাড়ির কাছে তাস খেলার এক টুর্নামেন্টে ওনাকে হেরে যেতে দেখে খুব খারাপ লেগেছিল।

জিতেছিল মন্দ খেলোয়ারেরা, কারণ তারা ঝুঁকি নেয়নি। কলব্রিজ খেলায় চেপে চেপে কল দিয়ে জিতে গিয়েছিল। বাবা খেলতেন, আড্ডা দিতেন, স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন করতে যেতেন, পূজো কমিটিতে মাতব্বরি করতে যেতেন, ফুটবল খেলার আয়োজন করতেন ইত্যাদি অনেক কিছু করতেন, শুধু তার পরিবারটা ছিল অবহেলিত। নিজের অজান্তে নিজে থাকতেন আরো বেশি অবহেলিত। সে অবহেলা নিজেই নিজেকে সবচেয়ে বেশি করতেন। সেটি তিনি টের পেয়ে ছিলেন যখন তিনি একেবারে জীবন সায়াহ্নে।  -চলবে