আমার আমি টুকরো গল্প: সবাই যে যার মতো ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছে

Dibbendu Dwip
ম্যাচে আমি ভালোই ছিলাম। বেশ টাকা পয়শা ইনকাম করি। বাড়িতে পর্যাপ্ত টাকা পাঠাই। মোবাইল কিনলাম, এক মামাকেও একটা মোবাইল কিনে দিলাম। নিজেরটার দাম ছিল সাত হাজার পাঁচশো টাকা। মামারটার দাম ছিল দশ হাজার টাকা। মামাবাড়ীতে আমরা পুরো পরিবার একটানা ছয় বছর থেকেছি, তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার একটা বিষয় আমাদের সব সময় থেকে যায়।
আমার সেই প্রিয় নম্বরটা— ০১১ ১২৩৪৫১। অনেক পছন্দ করে কেনা নম্বর। সিটিসেল কোম্পানি তো শেষ পর্যন্ত বন্ধই হয়ে গেল। আমি আর প্রাণিবিদ্যার ক্লাসমেট রকি একসাথে মোবাইল কিনেছিলাম।
সবাই শুধু বলে, হল-এ ওঠো না কেন? হল-এ না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মজা কী? ইত্যাদি। সত্যি সত্যি দশ চক্রের ভূত ঘাড়ে উঠিয়ে মেস ছেড়ে দিলাম। তখন বিএনপি ক্ষমতায়, ছাত্রদলকে ধরে হল-এ উঠতে হবে। জগন্নাথ হল-এ দাপট একটু বেশিই তাদের। উঠলাম গণরুমে— প্রথম রাত থেকেই মানতে পারছিনে এ গণরুম। আর যাইহোক এতদিন ঢাকায় ঘুমানোর কষ্ট আমি করি নাই। তাছাড়া এতদিনে টাকা পয়শার দিক থেকেও আমি বেশ স্টাবল। অনেকগুলো টিউশনি করি, সেগুলোর বেতনও ভালো। দেখলাম, পরিপাটি থাকলে টিউশনি পেতে সুবিধা হয়, অভিভাবকরা আস্থা রাখে, ছাত্র-ছাত্রীরাও পছন্দ করে। ফলে পোশাক আশাকেও আমি খুব ফরমাল হয়ে গেলাম।
ক্লাসে সাধারণত যেতাম না, মাঝে মাঝে যেতাম। ফরমাল পোশাকে ক্লাসে যেতে একটু লজ্জ্বাই লাগত, কিন্তু দু’ধরনের গেটআপ মেনটেইন করাটাও তখন সম্ভব ছিল না। নিশ্চয়ই ক্লাসের অন্যরা তখন ভাবত— পড়াশুনার নামে নবডঙ্কা, কিন্তু পোশাকে আশাকে আবার পরিপাটি! প্রাণিবিদ্যায় প্রচুর প্রাকটিক্যাল, আঁকাআঁকি, ফলে আমি একটু বিপদেই পড়ে গেলাম। সাত আটটা টিউশনি করি, কোচিং-এও ক্লাস নিই, রাজনীতিতেও একটু আধটু ইতোমধ্যে যোগ দিয়েছি।
রুম নম্বরটা মনে নেই, তিনশো কত যেনো— জগন্নাথ হলএর সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ভবনে উঠেছিলাম। ঐ রুমের লিডার ছিল ভাস্কর। ভাস্করই সবাইকে নিয়ে মিছিলে যেত। ছাত্রদলের মিছিলে না গেলে হল-এ থাকা যাবে না। কিন্তু আমি তো মিছিলে যাবই না, অসম্ভব। আমি যা সমর্থন করি না সেখানে আমি কিছুতেই যাব না। এটা হয় নাকি? ভাস্করকে বললাম, আমি তোগো মিছিলে যাব না। ঐ রুমে মাত্র দুদিন ছিলাম, এর মধ্যেই একদিন সকালে আমার কষ্টে কেনা প্রিয় মোবাইলটা চুরি হয়ে যায়!
[ভাস্করের পিতা মুক্তিযোদ্ধা বলে শুনেছি, এখন ও পুলিশে চাকরি করে। ধারণা করি— ও এখন পুরোদস্তুর আওয়ামী লীগও করে। এতে দোষ নেই ওর, এটাই তো দেশের বাস্তবতা। যে যা করে সবই করে বেঁচে থাকা এবং আয় উন্নতির জন্য।]
তখন হল-এর ছাত্রদলের সেক্রেটারি গৌরাঙ্গ না কী যেনো নাম তার, আমাকে এসে বলল, আমি যেন রুম থেকে বেরিয়ে যাই। তখন হল-এর প্রাধ্যক্ষ নিমচন্দ্র ভৌমিক স্যার। ওনার কাছে গিয়ে বললাম, স্যার, এই অবস্থা। প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাকে বললেন, তোমাকে ওদের সাথে তাল মিলিয়েই থাকতে হবে, কারণ, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল-এ কোনো বরাদ্দকৃত সিট নেই। আমি তখন বেরিয়ে যেতে যেতে বললাম, তাহলে স্যার, আপনি আছেন কী করতে? উনি শুনেছিলেন বোধহয়, জানি না ছাত্রদলের সভাপতি বা সেক্রেটারিকে তিনি কিছু বলেছিলেন কিনা। গৌরাঙ্গ এসে আমাকে পরের দিন বলল, তোকে যেন আর জগন্নাথ হল-এ না দেখি।
তখন আমার আড্ডাসূত্রে অমর একুশে হল-এর অনেকের সাথে পরিচয় হয়েছে। রাত বেরাত আড্ডা দিই, দেশ উল্টায়ে ফেলাই। শুভ্র, শরীফ ভাই, মেজবাহ্ ভাই, সাগর ভাই, আরো অনেকে। ভ্রাম্যমান হয়ে গেলাম— এক একদিন একেক জনের রুমে থাকি। ক্লাসমেট ওসমানের (ওসমান গনি) রুমে কয়েক দিন ছিলাম। না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি অনেক রাত। পাবলিক লাইব্রেরি তখন খোলা থাকতো সারারাত, পাবলিক লাইব্রেরিতেও ঘুমাতে গিয়েছি, সেই ফাঁকে কিছু পড়াশুনাও অবশ্য করতাম।
টিউশনিগুলি ঠিকঠাক মতো করি, কারণ, ওটা দিয়ে তখন শুধু আমি না, আমার পুরো পরিবারটা চলছিল। ক্লাস করতাম না, নানান কিছু পড়ার অভ্যেস থাকলেও ক্লাসের পড়াশুনা একদমই করতাম না।
তবে একটা বিষয় মাথায় ছিল— ইয়ার ড্রপ যেন না যায়, ছিঁটকে যেন না পড়ি। এজন্য ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলেও ফাইনাল পরীক্ষাটা ঠিকই দিতাম। পুরো সময় পরীক্ষার হলে থাকার রেকর্ড আমার নাই। বড় জোর তিন ঘণ্টা (পরীক্ষা ছিল চার ঘণ্টার), হিসেব করে পরীক্ষা দিতাম, হিসেবে ভুল হয় নাই! বিভাগের সবাই আমাকে অ্যালিয়েন ভাবত, মেয়েরা স্বাভাবিকভাবেই খুবই অপছন্দ করত। এতটা কেয়ারলেস কাউকে ওরা পাত্তা দেবে কেন?
পাত্তা না দেওয়ার দিক থেকে আমি তো চিরদিন এক কাঠি বেশি সরেস। ফলে কোনো মেয়ের কাছে ঘেষতে চাওয়ার কোনো রেকর্ডও আমার নাই। একটা মেয়ে ছিল, ওর বাড়ী ছিল উত্তরবঙ্গে, ওর সাথে একদিন চোখে চোখে খুব কথা হয়– ফোন নম্বর নিলাম এবং দিলাম। ও একদিন ফোন দিয়ে ওকে গাবতলী থেকে নিয়ে আসতে বলল। আমি বললাম, আমি তো ঘুমাচ্ছি। রিলেশন ওখানেই শেষ, আর এগোলো না। ও অবশ্য শেষ পর্যন্ত প্রাণিবিদ্যায় পড়ে নাই, পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিভাগে চলে যায়।
আস্তে আস্তে জড়াতে থাকলাম সবকিছুর সঙ্গে, শুধু নিজ বিভাগেই সময় দিই না। [এটা ভুল ছিল। রেজাল্ট একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায় পরে, চাকরি বাকরির ক্ষেত্রে প্রাথমিকভবে ওটা দিয়েই কর্তা ব্যক্তিরা পরিমাপ করে।]
প্রথম বর্ষে, নাকি দ্বিতীয় বর্ষে মনে নেই, আমার এটেনডেন্সে মাত্র ২৭%! গুলসান আরা লতিফা ম্যাডাম তখন চেয়ারম্যান, বললেন, তোরে পরীক্ষা দিতে দেব না। কিন্তু উনি আমাকে পছন্দ করতেন বলে আমার মনে হয়েছিল। আমি যখন ওনার রুম থেকে বেরিয়ে যাই, বললেন, যাহ্! এবার ছেড়ে দিলাম।
এভাবেই ছাড় পেয়ে পেয়ে আমি বের হয়ে আসি। কিন্তু নূরজাহান ম্যাডাম আমার ক্ষতি করেছিলেন, ক্ষতিই যেহেতু, তাই তা আর না বলি। তখনই আমি ভালোভাবে টের পেয়েছিলাম— রাজনৈতিক মতাদর্শ ভেতরে ভেতরে শত্রু মিত্র বানায়। এ বিষয়টা বিস্তারিত আর না বলাটাই সমীচীন।
একুশে হলে যাদের সাথে মিশতাম প্রায় সকলেই ছিল বিএনপি মতাদর্শিক পরিবারের মানুষ, তারপরও তাদের ভব্যতা এবং দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার ভাষণটুকু ভালো লাগত। যদিও দিনশেষে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষাটাকেই প্রাধান্য দিয়েই যে যার মতো ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছে। আসলে যে ধরনের পারিবারিক বাস্তবতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম তাতে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বিষয়টিকেই শুুধু ‌’কারণ’ হিসেবে মেনে নেওয়া কঠিন— যাদের বাস্তবতা কঠিন ছিল না তাদেরকেই বরং বেশি ক্যারিয়ারিস্ট হতে দেখেছি।
প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত মানুষ দিনশেষে একজন ‘আমি’ হয়ে উঠতে চায়, সেজন্য সে সবকিছুই করতে পারে, কেউ একটু সুক্ষ্মভাবে, কেউবা করে তা স্থুলভাবে। পার্থক্য এর বেশি নয়। এই ‘আমি’র মধ্যে সৌন্দর্যের চেয়ে কদর্যতাই যে বেশি সেটি খুব বেশি গবেষণার বিষয় আসলে নয়। উচ্চশিক্ষার মাহাত্ম এবং প্রায়োগিক দিক তাই দাঁড়িয়েছে অন্তরের ‘বিষ’ কে কতটা কার্যকরভাবে ঢেকে রাখতে পারে সেখানে, এর চেয়ে ভিন্ন কিছু খুবই বিরল।
সবাই ‘বাস্তবতা’ মেনে নিয়েছে, আমি হয়ত মানতে পারি নাই বলে ক্যারিয়ারে মনোযোগীও হতে পারিনি। আবার আদর্শিকভাবেও আমাদের মধ্যে ব্যবধান প্রচুর। তারপরেও তাদের সকলের সাথে আমি বন্ধুত্ব অনুভব করি সব সময়। যদিও আমাদের যোগাযোগ বাস্তবিক কারণে খুব বেশি আর হয় না।
[আমরা যখন কেবল বড় হচ্ছি, বুঝতে শিখছি, তখন আমাদের দেশের রাজনীতিতে গোঁজামিলের রমরমা চলছে। রাষ্ট্রীয় অনেক শিক্ষায়ই পারিবারিক শিক্ষায় পরিণত হয়েছিল, হয়েছে। তাই পারিবারিকভাবে কেউ বিএনপি করতে শিখেছে বলে তাকে খারাপ মানুষ ভাবার যেমন সুযোগ নেই, আবার পারিবারিকভাবে কেউ আওয়ামী লীগ করে বলেও তাকে ভালো মানুষ ভাবার সুযোগ নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর পড়ার পরও যদি গণমুখী কোনো চিন্তা তার মধ্যে তৈরি না হয়, মানবিক চিন্তা তৈরি না হয়, মক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, দেশ সম্পর্কে না জানে এবং না মানে, তাহলে তাকে নিয়ে সন্দেহ এবং আপত্তি থেকে যায়।]
প্রথম বর্ষ না দ্বিতীয় বর্ষ মনে নেই— কিছুদিন ‘প্রথম আলো বন্ধুসভা’ করেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম যে, প্রথম আলো তে বিশেষ ঘাপলা আছে। বড় হয়ে তো দেখছি— প্রথম আলোর আসলে প্রায় পুরোটাই ঘাপলা। বন্ধুসভার মিটিং-এ মেজবাহ্ ভাই এবং সৌমি আপু আসত, আরো অনেকেই আসত। শুভ্রর সাথে তখন আমি বেশ ঘনিষ্ট, শুভ্রকে বললাম, শুভ্র, সৌমি আপুকে তো আমার বেশ ভালো লাগে। শুভ্র আর আমি পরামর্শ করে সৌমি আপুকে একটা মোবাইল মেসেজ পাঠালাম। পরে তো মেসবাহ ভাই শোকজ করলো। তখন বুঝলাম যে, তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে বা হচ্ছে। আমি দোষটা শুভ্রর ঘাড়ে চাপালাম, বললাম, শুভ্র আমাকে ফুসলিয়েছে। বিষয়টা ওখানেই শেষ হয়ে যায়।
তবে সত্যি সত্যিই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম, এবং তাকে আমি একটা টেক্সটও করেছিলাম। আর এগোয়নি। তখন আমি সম্ভবত দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। গত বছর তাকে যখন সেই টেক্সটের কথা তাকে বললাম, সে কিন্তু হুবহু মনে করতে পেরেছে! এবার তার দিক থেকে দুর্বলতা শুরু হলো, কিন্তু সময় এমনই নিষ্ঠুর যে, আমি গিয়েছি বদলে, মনোযোগ অন্যদিকে। ফলে উনি শেষ পর্যন্ত আমাকে আনফ্রেন্ডই করে দিলেন! নারী খুব অভিমানী হয় বোধহয়, কাউকে সে প্রস্তাব করে নেতিবাচক কিছু শুনে আর কিছুতেই তার দৃষ্টিসীমায় থাকতে পারে না।
যাইহোক, নিজেকে ট্রাকে রাখতে তখন আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল, তাই প্রেমে পড়া পর্যন্তই, প্রেম করা সম্ভব ছিল না। এদিকে বাড়ী থেকে যখন তখন ফোন আসতেছে— ছোট ভাই সম্মন্ধে নানান অভিযোগ। একবার তো রাতারাতি বাড়ী যেতে হলো মীমাংসা করতে। পরের দিন আমার পরীক্ষা, রাতে জার্নি করে এসে সকালে পরীক্ষা দিলাম। চিন্তা করে দেখলাম, ওর (ছোট ভাইয়ের) পড়াশুনা আর এগোবে না। ইন্টার সায়েন্স আমি একদিনও প্রাইভেট না পড়ে পাস করে এসেছিলাম, কিন্তু ও যে পারবে না এটা আমি বুঝে গেলাম, কারণ, ওর মধ্যে কনসিসটেন্সি ছিল না। কোনো পরিকল্পনা করে ও এগোতে পারে না।
তাছাড়া আমার ওপর এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি ভর করে, আমি কিছু ভাবলে সেটি কীভাবে যেন হয়ে যায়! সবার ক্ষেত্রে তাই কি হয়? আমি এমন এমন চ্যালেঞ্জ উতরে এসেছি জীবনে, দেখেছি এর দু’একটিতেই অনেকে তছনছ হয়ে যায়!
ওকে এনে তেজগাঁও পলিটেকনিকে ভর্তি করলাম। প্রথম বর্ষে পড়ি, সব অভিজ্ঞতা হয়ে পারেনি, তারপরও ধারণার ওপর ভর করে হলেও পরিবারের জন্য সব সময় আমি সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছি। ও মেধা তালিকায় চান্স পেল না। চলে গিয়েছে ওয়েটিং লিস্টে। কেরানির সাথে কথা বললাম। কেরানি বলল, নেতা ধরেন, ঘুষ ছাড়া ওয়েটিং-এর কোনো মূল্য নেই এখানে। অর্থাৎ ওয়েটিং থেকে সিরিয়াল মেনে ভর্তি করা হয় না, ঘুষ দিয়ে ভর্তি হতে হয়।
নেতা একজন পাইলাম। তার সাথে দরদাম করে দশ হাজার টাকায় রফা হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, এবং আমি খুব উচ্চকণ্ঠ বলেই হয়ত সে আর আমরা সাথে ধানাই পানাই করতে সাহস করেনি। ছোট ভাই ভর্তি হতে চায় কম্পিউটারে। বললাম, কম্পিউটারে সবাই পড়বে, এর চেয়ে তুই অখ্যাত এবং নতুন একটা বিষয়ে ভর্তি হ। শেষ পর্যন্ত ও ভর্তি হয়েছিল ফুড এন্ড কেমিকেলে। ওটাই কাজে লেগেছিল।
আমি ততদিনে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে দেড় বছর পড়ে ফেলেছি। আমি বুঝে গিয়েছি— আসলে আমার পড়া দরকার ছিল সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস বা সাংবাদিকতার মতো বিষয়ে। আমার পরীক্ষা দেওয়া লাগত ‘ঘ’ ইউনিটে, কিন্তু ‘ঘ’ ইউনিট বলে যে কিছু আছে সেটিই আমি তখন জানতামই না। আমি কিন্তু ভর্তির জন্য কোনো কোচিং টোচিংও করি নাই কখনো।
যেটা বললাম— ওর জন্য নেওয়া সিদ্ধান্তটা ভালোই কাজে লেগে গিয়েছিল। কিন্তু ও গেল বিগড়ে। আজ পুলিশে ধরে তো কাল র‌্যাবে ধরে, এভাবে চলছে। তারপরও অবশেষে পলিটেকনিকের পড়াশুনা শেষ করলো, টিচারও হলো, কিন্তু চাকরি আর করতে পারলো না। অতএব, আমার একটা সফলতার গল্প এভাবেই ভস্ম হলো। পরিবারটাও আবার কাত হতে থাকলো। ও পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমার সাথে থাকলেও আমার বড় বোনের বাসায়ই থেকেছিল বেশি, তাই ওর পড়াশুনায় তাদের অবদানও কম নয়। দু:খটাও বড় বোনেরই বেশি, কারণ জীবনটাকে আমি যেভাবে দেখতে শিখেছি গৃহে থেকে ওর ক্ষেত্রে সে সুযোগ নেই, ফলে দু:খবোধ পাশ কাটানো ওর জন্য খুবই কঠিন।