খাওয়ার পানি বিশুদ্ধ করার জন্য বাজারে রয়েছে নানান রকম ‘ওয়াটার ফিল্টার’। কোনটি কিনবেন আপনি?
এছাড়া এক ধরনের ফিল্টার বাজারে রয়েছে, যেটি সাধারণ ফিলট্রেশনের পাশাপাশি কেমিকেলও ব্যবহার করে। যেমন, পিওর ইট।
‘পিওর ইট’ শুধু যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ফিল্টার করে না, এটাতে রয়েছে একটি হ্যালোজেন ট্যাবলেট দেওয়া, যেটি মূলত পানির জীবানু মারে। এটির কল্যাণেই বিজ্ঞাপনে তারা বলে থাকে যে ‘পিওর ইট’ ফুটানো পানির চেয়েও নিরাপদ।
বিষয়টি নতুন কিছু নয়, হ্যালোজেন গ্রুপের (ক্লোরিন, ফ্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন) যেকোনো মৌল পানিতে যোগ করলে পানি বিশুদ্ধ হয়। বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণের সাথে এজন্য হ্যালোজেন ট্যাবলেট নিয়ে যাওয়া হয়।
‘পিওর ইট’ এই জিনিসটাকেই বলছে ‘জার্মকিল প্রসেসর’। এটি যেহেতু একটি কেমিকেল উপাদান এবং তা ক্রমাগতভাবে পানির সাথে মিশে জীবানু হত্যা করছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি ফুরিয়ে যাবে। এটি ফুরিয়ে গেলে ফিল্টারটি অটো ফিল্টার করা বন্ধ করে দেবে।
ফুরিয়ে গেছে কিনা সেটি বোঝা যাবে ছবিতে চিহ্নিত বড় ফুটোটি দেখে। সেটি পুরোপুরি লাল হয়ে যাওয়ার মানে হচ্ছে ভেতরের ক্লোরিন ট্যাবলেটটি শেষ হয়ে গিয়েছে।
তবে জিনিসটি আবার কিনতে পাওয়া যায়। এটি আছে দুই প্রকার– ছোটটি ১৫০০লিটার পানি ফিল্টার করতে পারে, এবং বড়টি ফিল্টার করতে পারে ৩০০০লিটার পানি।
পুনরায় কিনতে গেলে ছোটটি কিনতে লাগবে ৭০০টাকা এবং বড়টি কিনতে লাগে ১২০০ টাকা। সাথে কার্বন ট্রাপটিও নিতে হয়, অর্থাৎ শুধু এটি কেনা যায় না।
ফিল্টারটিও মূলত আসে ভারত থেকে। অর্থাৎ পিওর ইট ফিল্টারের কারখানা বাংলাদেশে নেই। ঐ নকল পণ্যটিও ভারত থেকে এসেছে বলে জানা গিয়েছে।
এবার আসা যাক পিওর ইটের পানি ফিল্টার করার পদ্ধতি বিষয়ে। কোম্পানি বলছে চার ধাপে তাদের ফিল্টারটি পানি বিশুদ্ধ করে থাকে।
জেনে নেয়া যাক, কীভাবে সেটি আসলে যন্ত্রটি করে। শুরুতে যে ছাঁকনিটি রয়েছে সেটিকে তারা বলছে ‘মাইক্রোফাইবার ফিল্টার’ যেটি দৃশ্যমান ময়লাগুলো ছেকে রেখে দেয়।
এরপর পানি পৌঁছায় এক্টিভেটেড কার্বন ফিল্টারে, যেটি সকল ক্ষতিকর জীবানু মেরে ফেলে বলে বলা হয়ে থাকে। এরপর পানি যেতে হয় জার্মকিল প্রসেসরের মধ্য দিয়ে, যেখানে ক্রমাগতভাবে কেমিকেলটি নিঃসরিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই চেম্বারে সকল ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস মারা পড়ে।
এরপর এটি পৌঁছায় ‘ক্যালারিফায়ার’ নামক একটি ডিভাইসের গায়, যেটি ক্লোরিন হজম করে রাখে এবং পানিতে কোনো গন্ধ থাকলে সেটিও এটির মাধ্যমে মুক্ত হয় বলে দাবি করে থাকে ইউনিলিভার। সবশেষে স্বচ্ছ পানি এসে জমা হয় নিচের সংগ্রহশালায়, যেখান থেকে ট্যাপের মাধ্যমে পানি ঢেলে খাওয়া হয়।
আসা যাক খরচখরচা বিষয়ে। ইউনিলিভারের ফিল্টারের মাধ্যমে যদি আপনি পানি বিশুদ্ধ করে খেতে চান, তাহলে আপনার প্রাথমিক বিনিয়োগ করতে হবে ২৯৯০টাকা। তবে কিছুদিন পরপর খরচ আছে।
ধরা যাক, আপনার পরিবারে প্রতিদিন পানি লাগে ১০লিটার। তাহলে ১৫০০লিটার পানিতে আপনার যাবে ১৫০দিন। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে বছরে অন্তত দুইবার আপনাকে জার্মকিল কিটটি কিনতে হবে, যে বাবদ খরচ হবে ১৪০০টাকা।
উপরের মাইক্রো ফাইবার ছাঁকনিটিও কিছুদিন পরপর পরিবর্তন করতে হয়, ওটির দাম ২০০টাকা। বছরের ৪বার পরিবর্তন করলে ছাঁকনি বাবদ খরচ হবে আরও ৮০০টাকা। তাহলে মোট খরচ হবে ২২০০টাকা। তাই ফিল্টারটি কেনার সময় খরচের এই হিসেবটিও মাথায় রাখতে হবে।
কেন্ট
বাজারে পানির ফিল্টারের একটি জনপ্রিয় নাম হচ্ছে ‘কেন্ট’। কেন্ট কয়েক ধরনের পানির ফিল্টার বাজারজাত করে থাকে। এর মধ্যে কেন্ট গোল্ড দামে সাশ্রয়ী বলে এটিই সাধারণ বাসাবাড়িতে মানুষ ব্যবহার করে থাকে। অন্যগুলো হচ্ছে, কেন্ট সুপ্রিম, কেন্ট পার্ক, কেন্ট পার্ল এরকম। কেন্ট গোল্ড UF (ultra filtration) পদ্ধতিতে পানি ফিল্টার করে থাকে। এটি তিন ধাপে পানি ফিল্টার করে থাকে।
প্রথমে পানি যায় সেডিমেন্ট ফিল্টারের মধ্য দিয়ে যেখানে অদ্রবণীয় উপাদানগুলো আটকা পড়ে। এরপর পানি যায় কার্বন ব্লক ফিল্টারের মধ্য দিয়ে, এখানে আরো সক্রিয়ভাবে পানি ছাঁকন হয়, এমনকি পানিতে কোনো কেমিকেল (যেমন, ক্লোরিন) থাকলে তাও আটকা পড়ে। এবং এ ধাপে পানি দুর্গন্ধমুক্ত হয়। ফিল্টারটির শেষ ধাপটি হচ্ছে ইউএফ মেমব্রেন। এখানে পানি জীবানুমুক্ত হয় বলে বলা হচ্ছে।