মধ্যবিত্ত শব্দটি দ্বারা শুধু বিত্ত বৈভবের অবস্থা বুঝায় না, বরং এর চেয়ে মানসিক দিকটাই বেশি করে তুলে ধরে। মধ্যবিত্ত সব সময় প্রাণান্ত হয় উচ্চবিত্ত হওয়ার আশায়, এবং মধ্যবিত্তের এই তৃষ্ণা শুধু অর্থের জন্য নয়, একইসাথে সম্মান এবং খ্যাতির জন্যও।
সবসময় তার প্রতিযোগিতার মনোভাব, এবং প্রতিযোগীর সংখ্যা যেহেতু অসংখ্য, তাই সবসময় তাকে তঠস্থ থাকতে হয়। কৌশলে সে নিতে চায়, সে চুরি করে নিতে চায়। সে গোপনে হাত পাতে, এবং সাহায্য প্রাপ্তির বিষয়টি দ্রুতই এড়িয়ে যেতে চায়, কারও কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে সে রাজি নয়, তাতে তার মধ্যবিত্ত মানসিকতায় ঘা লাগে।
অন্যদিকে নিম্নবিত্তরা পরিশ্রমী এবং অজ্ঞতা অথবা অভ্যেসবশত উগ্র ঈশ্বরবাদী হয়, তাদের মধ্যে স্ট্যাটাস মেইনটেইনের ব্যাপার থাকে না, ফলে তারা হাত পাততে পারে অকপটে, লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে তাকে নিতে হয় না। কিন্তু মধ্যবিত্ত তা নয়, সম্মান হারানোর ভয়ে তার সব সময় ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সবচেয়ে কাছের মানুষটিকেও সে আঘাত করতে ছাড়ে না নিজের গরিমার প্রয়োজনে। দুঃখ-কষ্ট, সুখ-তৃষ্ণা, অতৃপ্তি, মিথ্যা-ছল-চাতুরী তার নিত্য সঙ্গী।
নিম্নবিত্তের হিংস্রতা প্রকাশ্য, প্রতারণা প্রকাশ্য, বরং তাদের ভালোবাসাটা চাপা পড়ে থাকে অভাবঅনাটনের নিচে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত প্রকাশ্যে হিংস্র হয় না, প্রতারক সাজতেও তারা রাজি নয়, সবকিছু তাদের আড়াল করা চাই। দরদ দেখানো এবং ভালোবাসার ভাণ করা এদের মজ্জাগত।
এর মানে কি আপনি মধ্যবিত্তকে এড়িয়ে চলবেন? তা নয়, কারণ, আপনি নিজেও তো একজন মধ্যবিত্ত। এক্ষেত্রে আপনার বলয়টাও মধ্যবিত্ত বলয়। তাই আপনাকে ডিল করতে হবে বুঝেশুনে। মধ্যবিত্তকে হেল্প করলে তা খুব একটা কাজে আসে না, কারণ, তার চাহিদা অসীম, সে জানে ভোগ্য সামগ্রীর সকল খোঁজ খবর, তাই খুব বিপদগ্রস্থ না দেখলে মধ্যবিত্তকে হেল্প করতে যেতে নেই।
খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো ভালো —সভ্যতার কাজে লাগে তা। আপনার বাসা থেকে যে রোজ ময়লা নিয়ে যায় খুব যত্ন করে তাকে একদিন দুটো মিস্টি খাইয়ে দেখবেন কেমন সে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে। মধ্যবিত্তের কাছ থেকে এমন রেসপন্স আপনি পাবেন না, বরং সে আপনাকে হতাশ করবে।