মাসে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা বাঁচাবেন যেভাবে

বেশি আয়, বেশি খরচ। এটাই বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু এ ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ত্রুটি হচ্ছে— ব্যক্তি শুধু আয় ব্যয়ের মধ্যেই ডুবে থাকছে, জীবন উপভোগ করতে পারছে না। অন্যেকেও ইগনোর করছে। কারণ, খরচের ক্ষেত্র এত বেশি যে, কোনো ইনকামেই তার আর কুলাচ্ছে না। আয় করতে কষ্ট হয়, ব্যয় করারও কিছু কষ্ট আছে, সে কষ্ট শুধু মানসিক নয়, শারীরিকও। হঠাৎ টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে মনে হলে অমুক জিনিসটা হলে ভালো হয়, দৌঁড়ালেন কিনতে, এতে আপনার শ্রম, সময়, অর্থ সবই ব্যয় হলো। খরচ কম করা মানে কৃপণতা নয়, বরং টাকা বাঁচিয়ে রেখে জায়গামত খরচ করা। যারে যতটুকু দেওয়া সম্ভব, দেওয়া। নিজের বিলাসী এবং অপ্রয়োজনীয় খরচগুলো বাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে বাঁচা। খরচ কমানো খুব কঠিন নয়, নিম্নোক্ত কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো, দেখুন আপনার সাথে মেলে কিনা–

১. কয়েকটি জিনিসের তালিকা দিই, এগুলো কেনা থেকে বিরত থাকা খুব কঠিন নয়, তাতে আপনার খরচ বাঁচবে নিশ্চিত। যেমন,

ক. সিগারেট: খাওয়া না খাওয়া পরের কথা, শুধু অর্থ বাঁচানোর জন্য জিনিসটা কেনাই যাবে না। না কিনলে খাবেন কোত্থেকে? আমি শুধু খরচের চিন্তা থেকে সিগারেট খাওয়া বাদ দিয়েছি।

খ. চিপস-কোলড্রিংকস-আইচক্রিম: কিনবেন না, না পারতে খাবেনও না। মাসে কয়েক শো টাকা বাঁচবে।

গ. ব্যাগে পানি রাখুন। এতে কিছু খরচ বাঁচবে। বর্তমানে আ্মাদের মধ্যে পানি কিনে খাওয়ার একটা ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। শুধু একটা অভ্যেস— ব্যাগে এক বোতল পানি নিয়ে বের হওয়া, বাঁচিয়ে দেবে মাসে আপনার পাঁচশো টাকা।

ঘ. কেনাকাট: হিসেব করে কেনাকাটা করতে পারলে এবং যেকোনো জায়গা থেকে না কিনে জিনিসটির সোর্স খুঁজে কিনতে পারলে অনেক সুলভে কেনা যায়।

ঙ. যত কম কিনে পারা যায়: দেখলেন, ইচ্ছে করলো আর কিনলেন! এই নীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। ভাবুন, জিনিসটি আসলেই আপনার দরকার আছে কিনা, দরকার না হলে কেনার দরকার নেই। শুধু শুধু ওটি ঘরের জায়গা দখল করবে। এক সময় আপনার বেদনা বাড়াবে।

চ. স্বল্প দূরত্ব হেঁটে চলাচল করুন। এতে খরচও বাঁচবে শরীরও ভালো থাকবে।

ছ. ফোনে কথা বলা কমান, এতে খরচ বাঁচবে। মোবাইলে নেট ইউজ কমান, এতেও খরচ বাঁচবে।

জ. বাইরে খাওয়া বন্ধ করুর, মানে না পারতে বাইরে খাবেন না, এতে অর্থ ও সময় দুটোই বাঁচবে। স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। এর মানে এই নয় যে, মাঝে মাঝে আপনি পরিবার নিয়ে বাইরে খেতে যাবেন না। বলা হচ্ছে, রুটিন খাওয়াগুলো বাসায় খান, প্রয়োজনে বাসা থেকে খাবার নিয়ে যান।

২. ভাব নেওয়ার জন্য কাউকে কিছু দিতে যাবেন না, বরং যাকে দিচ্ছেন তার প্রয়োজনটা মাথায় রাখুন। এতে খরচও বাঁচবে এবং যাকে দিচ্ছেন সেও খুশি থাকবে।

৩. বিলাসিতায় খরচ বাড়ে, কিন্তু খুব আরাম যে হয়, তা নয়। কোথাও গেলেন, সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না— মধ্যম সারির হোটেলে থাকবেন, নাকি বিলাসবহুল হোটেলে থাকবেন। আসলে মধ্যম সারির হোটেলেই সকল সুযোগ-সুবিধা থাকে, বিলাসবহুল হোটেলে থাকে কিছু বাড়তি উপকরণ, যা শুধু আপনার পকেট কাটে। এভাবে খরচ বাঁচে অনেক।

৪. শরীর একটু গড়বড় হলেই ডাক্তারের কাছে ছোটা এবং একগাদা ওষুধ খাওয়া এক ধরনের বদভ্যাস। এর মানে এই না যে, শরীর খারাপ হলে ডাক্তারের কাছে যাবেন না, বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রিত হওয়া যায়।

৫. প্রয়োজন নেই, কিন্তু নিজের দাম বাড়বে (সম্মান বাড়বে বলে ভাবছেন) ভেবে কিছু করতে যাবেন না। যেখানে প্রয়োজন বা ভালোলাগা কোনোটিই নেই, সেসব কিছু শুধু গর্বের জন্য করতে যাবেন না। এতে খরচও বাঁচবে, ঝামেলামুক্তও থাকতে পারবেন। যেমন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, ভাবুন আপনি বা আপনার সন্তান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাচ্ছে কি ভালো পড়াশুনার জন্য, নাকি শুধু ‘জাতে’ ওঠার জন্য। শুধু জাতে ওঠার জন্য হলে বাদ দিন।

এরকম আরও অনেক ক্ষেত্র আপনি খুঁজে পাবেন, যেখান থেকে আপনি অনায়াশে খরচ বাঁচাতে পারেন। মানুষের সাথে ছ্যাঁচরামো না করে, নিজের জীবনধারায় পরিবর্তন এনে অনেক খরচ বাঁচানো যায়, এবং কিছু টাকা আশপাশের মানুষের জন্য খরচ করে ভালো থাকা যায়।


দিব্যেন্দু দ্বীপ