সফলতার জন্য প্রয়োজন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা

follow-upnews
0 0

ভুল পরিকল্পনার ওপর পরিশ্রম করে সফল হওয়া যায় না। লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সুস্পষ্ট এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। একটি সুন্দর পরিকল্পনা রাতারাতি দাঁড়িয়ে যায় না। ক্রমাগত ভুল এবং ভুল সংশোধনের মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা ধিরে ধিরে নিঁখুত হয়।

পরিকল্পনা হাতে নিয়ে বসে থাকলে হবে না, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যেতে হবে, কাজ করতে গিয়েই ভুল শুদ্ধ বোঝা যাবে। কাজ না করে শুধু খাতা-কলমে পরিকল্পনা যাচাই করা যায় না। দু’একবার ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি নিতে হবে। কোনো কাজে নামার সঙ্গে সঙ্গে সফলতার প্রত্যাশা করা যাবে না, বরং একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ করার অর্থ— প্রথমে পরিকল্পনাটি যাচাই করা।

তাই বলে এই যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি দীর্ঘদিন করা যাবে না। একটি সমন্বিত পরিকল্পনা দ্রুত দাঁড় করিয়ে ফেলতে হবে, এবং সেইমত কাজ করে যেতে হবে। অন্যের কথায় কান দিয়ে যখন তখন পরিকল্পনা পরিবর্তন করা যাবে না। সব সময় ছোট খাট ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সার্বিকভাবে চিন্তা করতে হবে।

কোনো পরিকল্পনাই শতভাগ নিঁখুত হয় না। সে প্রত্যাশা করা যাবে না। একটি চায়ের দোকান হোক আর একটি ফাইভ স্টার হোটেল হোক, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই সুন্দরভাবে চলতে পারে না। আবার অনেক সময় অনেক কিছু পুরোপুরি না বুঝেও করতে হয়, সেটি সময়ে দাবী। 

শুধু পরিশ্রম বা অধ্যবসায় নয়, প্রয়োজন সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং সেইমাফিক কাজ করা। মনে রাখতে হবে— দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছাড়া বড় কোনো কাজ দাঁড়ায় না। পরিকল্পনাটিকে দু’টো ফেজে ভাগ করে নিতে হবে– ১. স্বল্পমেয়াদী; ২. দীর্ঘমেয়াদী।

এক্ষেত্রে আমার নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে যেটা বলতে পারি—

আমি যখন প্রকাশনী ব্যবসা শুরু করি তখন আমি নিশ্চিতভাবে বুঝে গিয়েছিলাম যে, আমি ব্যর্থ হতে যাচ্ছি। তবুও আমি কেন শুরু করলাম? আমার হিসেবটা ছিল এরকম— সফল হলে সেটি একান্তই ভাগ্যের ব্যাপার, আর ব্যর্থতা থেকে আমি শিখতে চাই। কারণ, যতটা বিনিয়োগ এবং পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামলে এরকম একটি ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব, সেটি আমার ছিল না। অর্থাৎ, সচেতনভাবেই আমি ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হয়েছিলাম।

যেহেতু প্রকাশনা ব্যবসায় প্রথম যাত্রায় আমি সফল হব না জানতাম এবং দ্বিতীয় পদক্ষেপে যাওয়ার মতো পুঁজি আমার নেই, ফলে আমি একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছিলাম— আমি যেহেতু লেখালেখি করি, তাই এটাই ছিল আমার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এজন্য আমি একটি ওয়েব পোর্টাল করেছিলাম, একটি ইউটিউব চ্যানেল করেছিলাম, চাচ্ছিলাম আমার দির্ঘমেয়াদী কিছু জিনিসপত্র (প্রধানত লেখালেখি) দাঁড়াক। প্রকাশনীর ব্যবসার পাশাপাশি আমার নিজের পরিবার চালিয়ে নেওয়া ছিল একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ, এজন্য আমার বিভিন্ন প্রকাশনীর সাথে কাজও করতে হচ্ছিল। অথাৎ, আমি তিনটা জিনিস করেছিলাম— ১. ব্যবসাটা ট্রায়াল দিচ্ছিলাম; ২. সংসারটা কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছিলাম; ৩. সৃজনশীল কিছু জিনিস দাঁড় করাচ্ছিল, যেমন: একটি অনলাইন পত্রিকা।

আমি আপনাকে এতটা সফস্টিকেটেড হতে বলছি না, তবে যা করবেন বুঝে করবেন। অনেক সময় বুঝেশুনে ব্যর্থ  হওয়া লাগে, কিন্তু সেই ব্যর্থতার বিপরীতে আপনি কী অর্জন করছেন সেটি পরিষ্কার থাকতে হবে। আমি যেটা অর্জন করেছিলাম— বইপত্রের জগৎটা বাংলাদেশে কীভাবে চলে, আমি বুঝেছি; বইয়ের দোকানদারদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে পেরেছি; লেখকদের যোগ্যতা-অযোগ্যতা এবং সংকট বুঝতে পেরেছি; দেশের প্রায় সব বইয়ের দোকানের সাথে আমি পরিচিত হয়েছি, মানে আমার নামটা তারা জানে। এর বাইরেও অনেক ধরনের অর্জন আছে। যেমন: অর্থনীতির একটা বিষয় দীর্ঘদিন ধরে আমার মাথার মধ্যে ‍ঘুরপাক খাচ্ছে, ব্যবসা করতে গিয়েই এটি আমার মাথায় এসেছে। এগুলো অবশ্যই অর্জন।

আমার কথা হচ্ছে— একটা সময় পর্যন্ত আপনি যখন সচেতনভাবে ব্যর্থতা মেনে নেবেন এবং ব্যর্থ হতে চাইবেন সেটি আপনার জন্য সফলতার পথই তৈরি করবে। কিন্তু ‘কেন কী হচ্ছে’ আপনি যদি তা বুঝতেই না পারেন, তাহলে বুঝেবেন যে, আপনার পরিকল্পনা এবং চিন্তাভাবনায় গলদ আছে।  

Next Post

স্মরণ: রণদাপ্রসাদ সাহা

রণদাপ্রসাদ সাহা (নভেম্বর ১৫, ১৮৯৬ – মে ৭, ১৯৭১) বাংলাদেশের বিখ্যাত সমাজসেবক এবং দানবীর ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আর. পি. সাহা নামেই তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে হাসপাতাল, একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গরীবদের কল্যাণার্থে ট্রাস্ট গঠন করেন। ১৯৭১ সালে এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন। পরবর্তীতে তার আর […]