ভালো একটি শর্টফিল্ম বানাতে হলে মাথায় রাখতে হবে যে বিষয়গুলো

follow-upnews
0 0

শর্টফিল্ম বলতে মূলত বুঝায় স্বল্প দৈর্ঘের একটি নাটক বা সিনেমা। শর্টফিল্মগুলো সাধারণত ২ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে হয়ে থাকে। শর্টফিল্মের বিশেষ বৈষিষ্ট হচ্ছে, এগুলো একটি বার্তা বহন করে। যদিও বর্তমানে অনেকে সে বিষয়টি মাথায় রেখে ফিল্ম বানাচ্ছে না, বরং চটকদার একটা কিছু বানিয়ে মার্কেট পেতে চাচ্ছে। তবে আপনি যদি অর্থবহ একটি শর্টফিল্ম বানাতে চান তাহলে আপনাকে নিচের বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। 

প্রথমেই গল্পটা সাজাতে হবে, অর্থাৎ স্ক্রিপ্ট বানাতে হবে: একটি গল্প বা উপন্যাস লেখা এবং একটি স্ক্রিপ্ট লেখার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। স্ক্রিপ্ট লেখা হয় চিত্রায়নের জন্য, তাই এক্ষেত্রে বর্ণনাটা হতে হবে সংলাপ নির্ভর, এবং মাথায় রাখতে হবে বাজেট, স্থান, অভিনেতা, অভিনেত্রী, এবং কী মেসেজ দিতে চাওয়া হচ্ছে সেটি।

১/ যেহেতু শর্টফিল্ম, ফলে গল্প বা কাহিনীটা হতে হবে খুব ছোট। কতটুকু সময়ের মধ্যে ফিল্মটা শেষ হবে, এটা মাথায় রেখে স্ক্রিপ্ট সাজাতে হবে।

২/ ফিল্মটি কোন ক্যাটাগরির মধ্যে পড়বে সেটি অবশ্য ফিল্মটি করে ফেলার পরও ভাবা যায়। হরর, কমেডি, অ্যাডভেঞ্চার, ড্রামা নাকি আর্ট ফিল্ম ইত্যাদি।

৩/ শিক্ষামূলক, অনুপ্রেরণাদায়ক বা বার্তানির্ভর কাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করাটা ভালো!

৪/ সঠিকভাবে সংলাপ লেখা, প্রতিটি আলাদা দৃশ্যের সঠিক বর্ণনা দেওয়া, চরিত্রগুলোর আগমন, প্রস্থান ঠিকমতো যেন স্ক্রিপ্টে উঠে আসে। তাহলে ফিল্ম ডিরেকশন বা পরিচালনার সময় সুবিধা হবে। ফিল্মটি অবশ্য নীরবও হতে পারে, কোনো সংলাপ নাও থাকতে পারে।

৫/  কাহিনীর ধারাবাহিকতা (পরম্পরা) বজায় রাখাটা খুব দরকারি।

৬/ ঠিকমতো স্ক্রিপ্টের কাজ শেষ হয়ে গেলে সেটা টাইপ করে প্রিন্ট বা কপি করে টিম মেম্বারদের সবাইকে দিতে হবে। দলগত কাজের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এটি, স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে কারো ধারণা ভাসা ভাসা হলে কাজটি ভালো হবে না। 

৭/ স্ক্রিপ্ট তৈরি শেষ হলে নিজে নিজে তো বটেই, একইসাথে অভিজ্ঞ কাউকে সাথে নিয়ে বারে বারে পড়তে হবে, এবং খুঁত বের করতে হবে। প্রত্যেকটি দৃশ্যের অবতারণা করার সময় মাথায় রাখতে হবে যে বাস্তবে ক্যামেরায় সেটি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব কিনা। 

উপযুক্ত একটি জায়গা খুঁজে বের করা: ফিল্মটার শুটিং হবে কোথায়? স্ক্রিপ্টের দৃশ্য যদি ঘরোয়া পরিবেশে বা ইনডোরে হয়, তাহলে তো সমস্যা কম, কারো বাসাতেই সুযোগ সুবিধা মতো শুটিং এর কাজটি সেরে ফেলা যেতে পারে।

কিন্তু যদি আউটডোর বা বাইরের পরিবেশের প্রয়োজন পড়ে? সেক্ষেত্রে সুবিধাজনক ও নিরাপদ কোনো স্থানে শুটিং করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে একদিনেই শেষ করে আসা যায় কিনা। জায়গাটার দূরত্ব, নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, খরচ এগুলো মাথায় রাখতে হবে। জায়গাটি কারো মালিকানায় থাকলে প্রথমে মালিকের বা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিতে হবে, পুলিশ, সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সংরক্ষিত কোনো স্থানে শুটিং করতেও অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তবে ছোটো কোনো ফুটেজ অনেক সময় সুবিধা মতো করে ফেলা যায় মৌখিক অনুমতি নিয়ে।

অভিনেতা এবং অভিনেত্রী: স্ক্রিপ্ট, লোকেশন হলো, এবার প্রয়োজন চরিত্র মোতাবেক অভিনেতা অভিনেত্রী। কে কোন চরিত্রে অভিনয় করবে?  স্ক্রিপ্ট দেখে বুঝে শুনে আরো দুয়েকজনের সাথে আলাপ করে নিজেদের মধ্য থেকেও অভিনেতা অভিনেত্রী বানিয়ে ফেলা যায়, আবার ক্ষেত্র বিশেষ হায়ার করাও যায়। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে:

১/ রিহার্সেল করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে কার সাথে কোন চরিত্র খাপ খাচ্ছে। চরিত্রগুলো নিয়ে এভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে চরিত্র মোতাবেক কাঙ্ক্ষিত অভিনেতা এবং অভিনেত্রী সিলেক্ট করাটা সহজ হবে। ধরা যাক, একটা নির্দিষ্ট চরিত্রে অভিনয় করতে চাচ্ছে চারজন। ইচ্ছুক এই চারজন কে এক এক করে সুযোগ দিয়ে দেখতে হবে কে বেস্ট। 

২/ বাজেটের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে অবশ্যই! অভিনেতা অভিনেত্রীদের পারিশ্রমিক দেবার বিষয় থাকলে সেটি শুরু থেকে পরিষ্কার আলোচনা করে নিতে হবে।  তবে যদি বন্ধুরা মিলে নিজেরা শর্টফিল্ম বানানোর পরিকল্পনা থাকে, তাহলে অনেক কম খরচে একটি শর্টফিল্ম করা সম্ভব। 

৩/ পরিচিত বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনকে দলে নিয়ে প্রথমদিকে কাজ করা যেতে পারে। ফিল্মের অংশ হবার সুযোগ কেউ নিশ্চয়ই মিস করতে চাইবে না!

৪/ চরিত্রগুলো ভাগ করা হয়ে গেলে স্ক্রিপ্টের দিকে আবার চোখ বোলাতে হবে। একজন অভিনেতার স্ক্রিপ্টের ওপর যত ভালো দখল থাকবে, তার কাছ থেকে ভালো আউটপুট পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে!

বাজেট ও টিম ম্যানেজমেন্ট: প্রয়োজনীয় খরচের টাকাটা আসবে কোথা থেকে? পাত্রপাত্রীর সম্মানী না হয় লাগলো না, কিন্তু যন্ত্রপাতিসহ টেকনিক্যাল দিকগুলোর খরচ তো করতে হবে, নাকি? খরচের টাকাটা বন্ধুরা নিজেরা মিলেই ভাগাভাগি করে তুলে ফেলা যায়, আবার সামার্থ থাকলে কেউ নিজেও খরচটা করতে পারে। যন্ত্রপাতির জোগাড়টাও সবাই মিলে ভাগ করে করা যায়। নিজেদের মধ্যে ক্যামেরাম্যান থাকলে খুব ভালো, তবে এই জায়গাটিতে দক্ষ কাউকে নেওয়াটাই ভালো।

একটা পরিপূর্ণ শর্টফিল্ম বানাতে টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। দলনেতার কথা মেনে সবাই যার যার কাজ বুঝে নিতে হবে। শুটিং স্পটে গিয়ে ওজোড় আপত্তির কোনো সুযোগ নেই, সেখানে দলনেতার কথা শুনতেই হবে। আলোচনা সব আগে সেরে নিতে হবে।

যন্ত্রপাতি: প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ছাড়া কাজ করা সম্ভব নয়। এগুলো নির্ধারিত দিনের কমপক্ষে আগের দিন সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। ক্যামেরা থেকে শুরু করে লাইটিং, রেকর্ডিং, অডিও, ভিডিও টুলস বা এডিটিং এর উপকরণ, যেখানে যেটি প্রয়োজন সংগ্রহ করে রাখতে হবে। কার কী দায়িত্ব সেটি তো আগে থেকে ঠিক করা আছেই। 

১/ ক্যামেরা: বাজেটের দিকে নজর রেখে ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে ফেলা যেতে পারে, অথবা ক্যামেরাসহ ক্যামেরাম্যান ভাড়া করতে হবে।

২/ ট্রাইপড: স্লো মোশন বা ফাস্ট মোশন নিয়ন্ত্রণ করে শুট করতে চাইলে দরকার হবে একটি ভালো মানের ট্রাইপড।

৩/ লাইটিং: লাইটিং এর কাজে ইনডোর বা আউটডোর বুঝে সুবিধামতো ক্ল্যাম্প, স্ট্যান্ড বা ফ্লাডলাইটের প্রয়োজন হতে পারে।

৪/ রেকর্ডিং: অডিও রেকর্ডিং এর জন্য অনেক দামী মাইক্রোফোন থেকে শুরু করে কম দামী ছোট তারবিহীন মাইক বা এক্সটার্নাল অডিও রেকর্ডার বাজারে খোঁজ করলে বর্তমানে সহজে পাওয়া যাবে।

এছাড়া শুটিং এর পরে বা একটু সফস্টিকেটেডলি কাজ করতে চাইলে একইসাথে প্রয়োজনীয় এডিটিং সফটওয়্যার, কম্পিউটার ও সাউন্ডবক্স দরকার হবে।

কস্টিউম এবং প্রপস: চরিত্রগুলো যে পোশাক ও মেকাপ পরিধান দাবী করে সেভাবে কস্টিউম সিলেক্ট করতে হবে। শুরুতে সবাই মিলে আলোচনা করে যার যার কস্টিউম, মেকাপ ও প্রপসের ব্যাপারগুলো ঠিক করে নিতে হবে। এগুলোর পেছনে আলাদা খরচ থাকলে সেটিও আলোচনা করে রাখতে হবে। নিজেরা নিজেদের মধ্য থেকে বা ধার করে চালিয়ে নিলে এক্ষেত্রে কোনো খরচ এড়িয়ে যাওয়া যায়।  

শুটিং: দৃশ্যগুলো যে স্ক্রিপ্টের মতো পরপর শুটিং করতে হবে এমন কোনো কথা নেই, বরং সুবিধা মতো শ্যুট করে পরে এডিটিং এর সময় সাজিয়ে নেওয়া যায়। এটি ঠিক করবে ডিরেক্টর, কারণ, পুরো স্প্রিপ্ট এবং পরিকল্পনা শুধু তার মাথাতেই আছে। তবে ডিরেক্টরকে সহযোগিতা করার জন্য একজন এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর থাকতে পারে। 

এডিটিং: শুটিং শেষে এডিট করে শর্টফিল্মটাকে এখন দেখার প্রমোশনের উপযোগী করে তুলতে হবে। এডিটিং সফটওয়্যারের প্রয়োজন হবে এ ধাপে এসে। Windows Movie Maker, Final Cut Pro, Avid এরকম বহুল প্রচলিত সফটওয়্যারগুলো থেকে যেটা সহজ মনে হয় ব্যবহার করা যেতে পারে।

সাবধানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবগুলো ভিডিও, অডিও দেখে নাম্বারিং করে ফেলতে হবে। সফটওয়্যারের সাহায্যে কাটছাঁট করে, জোড়াতালি দেওয়ার কাজ সেরে ফেলতে হবে। অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিতে হবে, কিছু কিছু জায়গায় দরকার হলে ছোট পরিসরে আবার শুটিং এর প্রয়োজন হতে পারে। ভিডিও অংশের সাথে অডিও অংশ ঠিকমতো খাপ খাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। কাজ শেষ হলে সবাই মিলে বসে সমালোচনার দৃষ্টিতে কয়েকবার দেখতে হবে। 

হয়ে গেল ফিল্মটা, এখন আনন্দ, আড্ডা আর কীভাবে সবাইকে ফিল্মটা দেখানো যায়, সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হলো কাজ। 

একটা ভালো শর্টফিল্ম বানাতে হলে মোটা দাগে যা মনে রাখতে হবে: 

১/ চিন্তাভাবনা করা এবং সুক্ষ্মভাবে দেখার অভ্যেস রপ্ত করতে হবে। প্রচুর ফিল্ম দেখা ও তা নিয়ে সবাই মিলে চিন্তাভাবনা, আলোচনা করা;

২/ শর্টফিল্ম বানানোর নিয়মগুলো জেনে নেওয়া, এবং শুধু দেশের নয়, বিদেশের বিখ্যাত শর্টফিল্মগুলো দেখে নেওয়া;

৩/ দলগতভাবে পরিশ্রম করে কাজ সমাধা করার মানসিকতা গড়ে তোলা।

৪। বাজেট এবং বিনিয়োগের বিষয়টি মাথায় রাখা। 

তথ্যসূত্র: www.wikihow.com

 

Next Post

পথে পথে ছিন্নমূল নারী, মা ও শিশু; সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন

ঢাকার যে কোনো পথ দিয়ে এক কিলোমিটার হেঁটে গেলে আপনার চোখে পড়বে ছিন্নমূল মা ও শিশু। বিভিন্ন কারণে তারা ছিন্নমূল, প্রধানত স্বামী ছেড়ে যাওয়া বা স্বামী আরেকটা বিয়ে করে চলে যাওয়াই মূল কারণ। ‘স্বামী’ নামের এই পাষণ্ডরা যে শুধু চলে গিয়েছে তাতো না, যাওয়ার আগে একট দুটো বাচ্চা বানিয়ে রেখে […]
ছিন্নমূল নারী