জাতিসংঘের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা পেয়েছে বাংলাদেশে নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। বাংলাদেশে এই শোভাযাত্রাটিকে সেক্যুলারিজমের প্রতিক হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।
বুধবার ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘের এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলে সেই আচার বা ঐতিহ্যকে রক্ষার দায় বর্তায় সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ওপর।
মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাকায় বাংলা বর্ষবরণ উৎসবে করা একটি বিশেষ বর্ণাঢ্য আয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই শোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন স্তরের, বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্পকর্ম বহন করা হয়, যার মধ্যে বাংলার ঐতিহ্য-ধারণকারী প্রতিকৃতি অন্যতম। থাকে বিভিন্ন রঙ-এর মুখোশ ও প্রতিবছর আলাদা কোনো প্রাণীর বড় প্রতিকৃতি সামনে নিয়ে হাজারো মানুষের শোভাযাত্রা।
২০১৬ সালের ৩০শে নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রা জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায়।
বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, ঢাকায়। শুরুর দিকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন চিত্রশিল্পী বিপুল শাহ।
ইউনেস্কোর এই সিদ্ধান্তকে তিনি বাংলাদেশ এবং বাঙালির জন্য এক বিরাট অর্জন বলে বর্ণনা করেন।
“১৯৮৯ সালে যখন আমরা এটা শুরু করি, তখন আমরা ভাবিনি কোনদিন এটি এরকম একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে।”
বিপুল শাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিউট থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু। বিগত বছরগুলোতে এটি বাংলাদেশের আরও অনেক জায়গাতেও ছড়িয়েছে। এখন এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করছেন। তিনি বলেন, এটি এখন বাঙালির প্রাণের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
বিপুল শাহ বলেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতির ফলে মঙ্গলশোভাযাত্রা বিশ্বমানবের অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত হলো।
বিপুল শাহ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, কীভাবে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু হয়েছিল। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ছাত্র।
“১৯৮৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান শিল্পী জয়নুল আবেদীনের জন্মবার্ষিকীতে জয়নুল উৎসব নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে চারুকলার একদল ছেলে-মেয়ে বিশাল বিশাল রঙ তুলি, রঙের টিউব, এসব তৈরি করে চমক সৃষ্টি করে। তখনই এই ভাবনাটা আমাদের মাথায় আসে যে বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির মোটিফগুলোকে কিভাবে বৃহৎ আকারে তৈরি করা যায়।”
সেই ভাবনা থেকেই পরের বছরের পহেলা বৈশাখের উৎসবে মঙ্গলশোভাযাত্রা শুরু হয় যেখানে বাংলার লোকজ সংস্কৃতির বিভিন্ন জিনিসের বিরাট বিরাট প্রতিকৃতি নিয়ে আসা হয়েছিল।
সূত্র: বিবিসি বাংলা