Headlines

(২) ভালোবাসার গল্প: করোনার কাল ও একজন বৃদ্ধা মায়ের এলিজি // প্লাবন ইমদাদ

ভালোবাসার গল্প

গত ৮ এপ্রিল, ২০২০ খ্রি. তারিখ সকালবেলা ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার শীলবাড়ী গ্রাম থেকে খবর আসে যে, সেখানে ঢাকা থেকে এক মহিলা করোনার লক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন। খবর পেয়ে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করে, উপজেলা চেয়ারম্যান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সহযোগে রওনা দেই সে গ্রামের উদ্দেশ্যে।

গ্রামের ঐ বাড়ীতে পৌছে দেখি চারপাশে শত শত প্রতিবেশী দূর থেকে তামাশা দেখছে আর ফিসফিস করে বলছে— ঐ যে, ঐ বাড়ীতে করোনা রোগী আসছে ঢাকা থেকে। আমরা অসীম সাহসিকতা নিয়ে এগিয়ে গেলাম আর ডেকে বাড়ী থেকে বের করে আনলাম সালেহা বেগম নামের ষাটোর্ধ মহিলাকে। একটি জীর্ণ প্লাস্টিকের ব্যগ আর অনাড়ম্বর পোষাকে দূরে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি— যেন অচ্ছুত, ঊন মানুষ এক। প্রথম দেখাতেই তাকে পুরোপুরি একজন সুস্থ মানুষ মনে হলো। জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেলো তার করোনার কোনো লক্ষণ নেই। আরো জানা গেলো যে, তার বাড়ী পাশের গ্রাম তেলেডাঙ্গীতে।

তিনি এই বয়সেও পেটের দায়ে ঢাকায় অন্যের বাসায় বাসায় ছুটা বুয়ার কাজ করতেন। সেদিনই এলাকায় এসেছেন ঢাকায় কাজ-কর্ম হারিয়ে। কেন তিনি নিজ বাড়ী (যেখানে তার ছেলে থাকেন থাকে) না গিয়ে অন্য গ্রামে আত্নীয়ের বাড়ী আসলেন —এ প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট কিছুই বললেন না। সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ তাকে একটি রিক্সা করে গাড়ীর বহরের সাথে করে নিয়ে যাওয়া হলো তার নিজ বাড়ী তেলেডাঙ্গিতে। গিয়ে তার ছেলে সোহরাবের সাথে কথা বলে জানা গেলো যে, তার মায়ের ঢাকায় থাকতে সামান্য পেটের সমস্যা হয়েছিল। এ কারণে যে বাড়ীগুলোতে তিনি কাজ করতেন তারা করোনা সন্দেহে তাকে বাসায় কাজে যেতে মানা করেন।

এমতাবস্থায় নিজের মাকে গ্রামে আনতে চাইলে এলাকার লোকজন বাধ সাধে। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটডোরে চিকিৎসক দেখিয়ে সবার অগোচরে এলাকায় এনে নিজ বাড়ীতে রাখার সাহস না পেয়ে পাশের গ্রামে খালার বাড়ীতে রেখে আসেন। প্রেসক্রিপশনে দেখা যায় যে, চিকিৎসক তাকে মেট্রানিডাজল, পেট ব্যথার জন্য এলজিন ট্যাবলেট এবং গ্যাসের জন্য ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন, যা পুরোপুরিই সামান্য পেট খারাপেরই মেডিকেশন।

আমাদের টিম বৃদ্ধা মাকে যখন তার সন্তানের কাছে বুঝিয়ে দেই, সন্তান আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠেন, এবং মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন— আমার পৃথিবীতে মা ছাড়া আর কেউ নেই। তখন সকলের মাঝে নেমে আসে এক সুনসান নিরবতা। আমাদের সাহসে ভরসা পেয়ে সেই বৃদ্ধা মা আজ চৌদ্দ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন শেষ করেছেন। এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন।

ধন্যবাদ জানাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব জেসমিন সুলতানা স্যারকে তার সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনার জন্য, ধন্যবাদ জানাই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চরভদ্রাসন থানাকে বয়োবৃদ্ধ এ নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, এবং ধন্যবাদ জানাই গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয়কে বৃদ্ধা মায়ের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য।


ইমদাদুল হক তালুকদার     ভালোবাসার গল্প


সহকারী কমিশনার (ভূমি)
চরভদ্রাসন উপজেলা।