ঈদের ছুটিতে ঢাকায় ঘুরতে পারেন নির্বিঘ্নে, কোথায় যাবেন?

ঢাকায় ঘোরা খুব কঠিন। স্বাভাবিক সময়ে ট্রাফিক জ্যামের কারণে ঢাকা শহর ঘুরে দেখা দুঃসাধ্য। পরিবার নিয়ে বেরোলে ভীড়ের কারণে আনন্দের চেয়ে যন্ত্রণাই বেশি হয়, তবে ঈদের ছুটিতে ঢাকার চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। ঢাকা হয়ে যায় একেবারে ফাঁকা। এ সময়ে ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখা যেতে পারে।

১। জাতীয় যাদুঘর শাহবাগ: জাতীয় জাদুঘর শাহবাগ এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর পাশে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। যাদুঘর বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে। অক্টোবর থেকে মার্চ শুক্রবার খোলা থাকে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শনিবার–বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর শুক্রবার খোলা থাকে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শনিবার–বুধবার সকাল ১০.৩০ থেকে বিকাল ৫.৩০ পর্যন্ত। প্রবেশ মূল্য: ৩ – ১২ বছর পর্যন্ত ৫ টাকা, ১২ বছর এর উপরে ১০ টাকা, বিদেশী দর্শনার্থী ৭৫ টাকা। জাতীয় দিবসগুলো যেমন – পহেলা বৈশাখ, ২৬শে মার্চ ও ২১শে ফ্রেব্রুয়ারিতে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।

২। জাতীয় চিড়িয়াখানা: বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা (Bangladesh National Zoo) ঢাকার মিরপুরে স্থাপিত। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি নাম পরিবর্তন করে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়। চিড়িয়াখানা সকাল ৯টা থেকে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে (গ্রীষ্মকালে)। সকাল ৮টা থেকে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে (শীতকালে)। প্রবেশ মূল্য ১০টাকা। এতিম ও মানসিক, শারিরীক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০০% পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়। ০ থেকে ২ বৎসরের বাচ্চাদের প্রবেশের ক্ষেত্রে টিকেট সংগ্রহ করতে হয় না। সাপ্তাহিক ছুটি থাকে রবিবার।

৩। লালবাগ কেল্লা: পুরাতন ঢাকার লালবাগে অবস্থিত লালবাগ কেল্লা। মোঘল আমলে স্থাপিত এই দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের টিকিট লাগবে না। সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার। শুক্রবার জুমার নামাজের বিরতি থাকে দুপুর ১২.৩০ থেকে ২ টা পর্যন্ত।

৪। আহসান মঞ্জিল: পুরাতন ঢাকার ইসলামপুরের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল। ঘুরে আসতে পারেন এই আহসান মঞ্জিল থেকে। খোলা থাকবে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫.৩০ পর্যন্ত। তবে শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালে পূর্বের মত সময়ের কিছু হেরফের হয়। প্রবেশ মূল্য: প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশী দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশী শিশু দর্শক (১২ বছরের নিচে) = ২ টাকা জনপ্রতি, সার্কভুক্ত দেশীয় দর্শক = ৫ টাকা জনপ্রতি, অন্যান্য বিদেশী দর্শক = ৭৫ টাকা জনপ্রতি, এছাড়া প্রতিবন্ধী দর্শকদের জন্য কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না ও পূর্ব থেকে আবেদনের ভিত্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে জাদুঘর দেখতে দেয়া হয়।

৫। বোটানিক্যাল গার্ডেন: প্রাকৃতিক পরিবেশে যদি সময় কাটাতে চান তবে ঘুরে আসতে পারেন বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে। চিড়িয়াখানার পাশে বোটানিক্যাল গার্ডেন অবস্থিত। সবুজ গাছপালা ঘেরা বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রতিদিন খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য: ৫ টাকা, ছোটদের ২ টাকা। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষ শিক্ষা সফরে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৩ টাকা।

৬। শিশুপার্ক: শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্ক। স্বল্প খরচে এখানে শিশুদের নিয়ে ভালো সময় কাটানো যায়। প্রবেশ মূল্য: জনপ্রতি ৮ টাকা, প্রতিটি রাইডে চড়ার জন্য মাথাপিছু ৬ টাকার টিকিট দরকার হয়। বেশিরভাগ রাইডে শুধু নির্দিষ্ট বয়সের শিশুরা চড়তে পারে। অক্টোবর থেকে মার্চ খোলা থাকে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যে ৭টা পর্যন্ত। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা থেকে ৮টা পর্যন্ত। সপ্তাহিক ছুটি রবিবার।

৭। ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক: ঢাকা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে জয়দেবপুরে ভাওয়াল ন্যাশনাল পার্ক অবস্থিত। যার বন ভালবাসেন তারা ঘুরে আসতে পারেন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান থেকে। গাছে গাছে ঢাকা এ উদ্যানের প্রতিটি জায়গায় নজরকাড়া। সারি সারি বৃক্ষের মাঝে পায়ে চলা পথ। হাটঁতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য আছে বেঞ্চ কিংবা ছাউনি। বনের মাঝে কোথাও কোথাও চোখে পড়বে ধানক্ষেত। কোথাও আবার পুকুর কিংবা ছোট আকারের লেক।

৮। সোনারগাঁ: ঢাকা থেকে মাত্র ২৯ কিঃমি দুরে অবস্থিত সোনারগাঁ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীন একটি রাজধানী। সোনারগাঁ এর ভিতরেই রয়েছে প্রাচীন পানাম নগর। কারুশিল্প গ্রাম এবং জাদুঘর আছে। গ্রাম্য পরিবেশে ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ রয়েছে সোনারগাঁ গেলে।