আমিও চাইনি এই সুন্দরীদের ছেড়ে যেতে // ড. তাপস ঘোষ

follow-upnews
0 0
তাপস ঘোষ
লেখকের সাথে নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এই সপ্তাহের প্রথম দিকে আমি নাগাল্যান্ডে গিয়েছিলাম একটি DST, Government of India’র sponsored একটি কর্মশালায় কয়েকটি ক্লাস নিতে। আয়োজক ছিল নাগাল্যান্ড ইউনিভার্সিটির advance level biotechnology hub। এখানে বলে রাখা ভালো যে, এর আগেও আমি বেশ কয়েক বার নাগাল্যান্ডে গেছি । এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের সবক’টি রাজ্যেই আমি গেছি এবং বার বার গেছি। বলা হয় উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাত বোন ও এক ভাই । সাত বোন হলো— আসাম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম । আর একটি মাত্র ভাই নতুন যোগ হয়েছে, সে হলো সিকিম । এই আট রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে । আসামে দু’টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আসাম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় । এদের মধ্যে আমার মনে হয়েছে তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশের অন্যতম উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে আমার মনে হয় নাগাল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় । নাগাল্যান্ড ইউনিভার্সিটির তিনটা ক্যাম্পাস রয়েছে । তবে মূল ক্যাম্পাসটি লুমানিতে । এটা সত্যি এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তার মধ্যে নাগাল্যান্ড ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাস সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর থেকে কমকরে ৫ ঘণ্টা দূরে অবস্থিত। দূরত্ব খুব বেশি না হলেও দুর্গম পথ এত সময় লাগার অন্যতম কারণ বলে আমার মনে হয়েছে। এখানে যারা সুনামের সঙ্গে বিজ্ঞান গবেষণা করেন আমি হলফ করে বলতে পারি এনারা প্রত্যেকে বিজ্ঞানের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। যেমন নাগাল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর দেব— আমরা যারা মেট্রোপলিটান শহরগুলোতে বিজ্ঞান গবেষণা করি তারা বুঝি না বা বুঝবার ক্ষমতা রাখি না কী প্রতিকূলতার মধ্যেও এরা বিজ্ঞান চর্চা করে যাচ্ছে । যেমন আমরা অনেকেই বুঝি না উন্নত দেশে বিজ্ঞান গবেষণা করার সঙ্গে আমাদের মতো গরীব দেশগুলোর বিজ্ঞান গবেষণা কতটা প্রতিকূলতার মধ্যে করতে হয়। এমনকি আরো গভীরভাবে যদি দেখা যায় তাহলে দেখব জেএনইউ, বিএইচইউ বা হায়দরাবাদের ইউনিভার্সিটিগুলো যত টাকা পায় সেই তুলনায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক অনেক কম টাকা পায়। যেটা ঠিক উল্টো হওয়া উচিৎ ছিল বলে আমার মনে হয়। যাকগে, এগুলো নিয়ে বিশদ আলোচনা করা এখানে আমার উদ্দেশ্য নয়।

যে প্রসঙ্গে আমি এই লেখাটা লিখছি তা হলো অনেকেরই ধারণা নেই কী উন্নত মানের মানব শক্তি, কী অফুরন্ত নেচারাল বায়ো রিসোর্সেস এই অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে । বায়ো ডাইভারসিটি’র হটস্পট বলা হয় এই অঞ্চলগুলোকে । এই সম্পদগুলোকে উন্মোচিত করে দেশের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেরকমভাবে এই অঞ্চলগুলোতে নজরই দেওয়া হলো না! অথচ পরিকল্পিতভাবে প্রচার করা হয় এই অঞ্চলের মানুষজন খুবই উগ্র ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি অনেক জায়গায় গেছি দেশে বা বিদেশে। কিন্তু এই অঞ্চলগুলোতে বার বার গিয়ে আমার উপলব্ধি হয়েছে— এই অঞ্চলের মানুষজন অনেক বেশি শান্ত, ভদ্র, সৎ, বিনয়ী এবং সর্বোপরি এরা সবসময় নতুন কিছু জানতে বা শিখতে চায় । এরা অতিথিপরায়ণ । মানুষজনকে ভালোবাসে, তাদের বিশ্বাস করে, এদের চাহিদা খুবই কম, এরা শান্তিপ্রিয় । এদের সংস্কৃতি খুবই উচ্চ মানের । একে ওপরের সংস্কৃতিকে সম্মান করে তারা ।
আমার ইচ্ছে ছিলো অবসর জীবনে এই অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়িয়ে বেড়াবো। আগের ইউপিএ সরকার কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল যাতে মূল ভূখণ্ড থেকে ইচ্ছুক বিজ্ঞানী বা অধ্যাপকরা এইসব অঞ্চলে গিয়ে বিজ্ঞান ও অধ্যাপনাতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকার এই কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। আমার মনে হয় শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নের লক্ষ্যে ওই প্রকল্পগুলো আবার চালু করা প্রয়োজন।

আমি শেষ করবো নাগাল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে দু’একটি কথা বলে । আমি ‘হুইসপারিং উইন্ড’ বলে একটি হোটেলে ছিলাম । সেটি মককছুং বলে একটি শহরে অবস্থিত। এখান থেকে লুমানি যেতে, যেখানে নাগাল্যান্ড ইউনিভার্সিটিটি অবস্থিত, সময় লাগে কম বেশি এক ঘণ্টার মতো। খুব সুন্দর একটি ছোট্ট শহর । শান্ত শহর । শহরের গাছপালাগুলোও একই রকম শান্ত, নির্বিবাদী বলে আমার মনে হয়েছে। বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া, তবে একটু শীতের দিকেই বেশি ঝুঁকে ছিলো। হঠাৎ হঠাৎ করেই মেঘ বালিকা এসে তার প্রেম নিবেদন করে চলে যাচ্ছে । মাঝে মধ্যেই তার এসেই চলে যাওয়া আমার মনকে উদাসীন করে তুলতো । হোটেলের লনে তার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতাম । আমি চার রাত ওখানে ছিলাম । প্রায় প্রতি রাতেই বৃষ্টি হত । বৃষ্টি ভেজা সকাল দেখে আবার নতুন উদ্যমে কাজে নেমে পড়তাম । ২৮ এপ্রিল আমি খুব ভোরে রওনা হলাম ‘জোরহাট বিমানবন্দর’র উদ্দেশ্যে । সকালের পাহাড় ও গাছপালা দেখে আমার মনে হয়েছে আগের রাতে বৃষ্টিস্নাত হয়ে যেনো সুন্দরী যুবতীরা ভরা যৌবন ও সৌন্দর্য নিয়ে তাদের প্রেমিককে বারণ করছে তাদেরকে ছেড়ে না যেতে । বিশ্বাস করুন— আমিও চাইনি এই সুন্দরীদের ছেড়ে যেতে ।


লেখক:

প্রাক্তন বরিষ্ঠ অধ্যাপক, বসু বিজ্ঞান মন্দির (বোস ইনস্টিটিউট), কলকাতা, ভারত । বর্তমানে ভিজিটিং প্রফেসর, রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি, পশ্চিম বাংলা ।

বসু বিজ্ঞান মন্দির (বোস ইনস্টিটিউট) ভারতের প্রাচীনতম এবং অন্যতম প্রধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি। ইনস্টিটিউটটি ১৯১৭ সালে ভারত-এ আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রাণপুরুষ আচার্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
 
Next Post

’৭১-এর গল্প // বীর মুক্তিযোদ্ধা চৌধুরী এমদাদুল হক

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিই। প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য কোলকাতা যাই। কোলকাতায় যাওয়ার পর কোথায় ট্রেনিং নেব চিন্তাভাবনা করছিলাম। সেখানে তৎকালীন এমপি মোল্লা জালাল উদ্দিন সাহেবের সাথে দেখা করলাম। আমার সঙ্গে তখন আরও অনেকে ছিলো। উনি আমাদেরকে বললেন, তোমাদের জন্য স্পেশাল একটা ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোল্লা […]
গোপালগঞ্জ জেলা পরিষদ