গত বছরের একটি ঘটনা বলে শুরু করি, নটরডেম কলেজের তত্ত্বাবধানে শুরু হলো ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতি মিলনমেলা ২০১৬’। বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় সেখানে। আইডিয়াল স্কুল থেকে বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন ছাত্রকে পাঠালো কর্তৃপক্ষ। ছাত্রদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া বা শর্তগুলো তুলো ধরা হলো-
১| সেরা শাখার ছাত্র হতে হবে। (লেখাপড়ার ফলাফলের দিক থেকে প্রথম শাখা!)
২| শিক্ষদের প্রিয় হতে হবে।
৩| পূর্বে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
প্রতিভা ব্যাপারটা এই প্রক্রিয়ার অধীনে ছিল না। কিন্তু কিছু ছন্নছাড়া আত্মপ্রত্যয়ী ছাত্র স্কুলের নিয়ম উপেক্ষা করে নিজে থেকেই চলে যায় প্রতিযোগিতায়। উল্লেখ্য, তারাই আইডিয়াল স্কুলের নাম উজ্জ্বল করে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় প্রতিভা আর যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে এসেছে।
এখন আসি আজকের ঘটনায়,
শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত ‘দেশব্যাপী মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা’-এর জন্য আইডিয়াল স্কুল থেকে প্রতিযোগী নির্বাচন করা হয়েছে। এবারের নির্বাচনের প্রক্রিয়া উল্লেখ করছি-
১| সেরা শাখার শুরুর দিকের ছাত্র হতে হবে। (আগেই বলেছি, লেখাপড়ার ফলাফলের দিক থেকে সেরা ছাত্র)
২| শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্র হতে হবে।
৩| সকল ডিবেটিং ক্লাব ও সাইন্স ক্লাব মেম্বারদের বাদ ঘোষণা। (এরা বেশি বেশি জানে তো!)
৪| অন্য কোনো শাখার কোনো ছাত্র অংশ নিতে পারবে না।
এই প্রক্রিয়ায় সৃজনশীল মেধা খুঁজে বের করার কোনো ধাপ পাওয়া গেল না!
আজ আইডিয়াল স্কুলের বনশ্রী শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক (দিবা) সকলের সামনে দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বললেন, “শুধু ঘ শাখা (ঘ শাখা পড়ালেখায় সেরা) থেকে ছাত্র নিবেন। বাকি সব বাদ। ঘ শাখাই পারে, বুঝলেন?”
প্রতিবাদ করায় ছাত্রকে হেনস্তা করার নজিরও তিনি রাখেন। দায়িত্বে থাকা শিক্ষকগণও সহকারী প্রধান শিক্ষকের কথায় নেচে উঠলেন। কেননা, তাদের মনে মনে এরকম ইচ্ছাই ছিল। এর পিছনেও কারণ আছে। সকল সিনিয়র শিক্ষকরা ঘ শাখায় ক্লাস নেন। আর সেই শিক্ষকরাই দায়িত্বে থাকেন। উল্লেখ্য, স্বয়ং সহকারী প্রধান শিক্ষকও ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ঘ শাখায় গণিত পড়ান।
ভাল পড়ালেখা করলেই যে সকল দিক থেকে সেই ছাত্র সেরা হবে এমনটা তো নয়। যদি এমনটা হতো, তাহলে তো আলবার্ট আইনস্টাইন, টমাস আলভা এডিসন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম এরকম ব্যক্তিদের কেউ চিনতই না। কিন্তু চেনে তো! তাহলে কি স্কুলের এই যুক্তি খাটে? হতে পারে সেই সেরা পরীক্ষায় ফলাফলকারীরা অনেক গুণে গুণান্বিত। তাই বলে কি অন্য ছাত্ররা কিছু পারে না? ৫০০ জন ছাত্রের মধ্যে ১০ জনকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মানদণ্ড শুধু পরীক্ষার রেজাল্ট! এই বৈষম্য কেন ছাত্ররা মানবে? কিন্তু সবার উপরে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি টিকে থাকছে!
দেখা যাচ্ছে, আইডিয়াল স্কুলে স্বজনপ্রীতি, জাতীয় দুর্নীতি, নিজের সময় ও টাকা বাঁচানোর জন্য যোগ্যকে সুযোগ না দেওয়া, প্রতিবাদ করায় হেনস্তা করা এরকম পলিটিক্স চলছেই! স্কুলটির হাজারও দোষের মধ্যে এগুলো প্রধান। একজন শিক্ষার্থীকে কীভাবে জীবনে সফল হওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেওয়া যায় তা এই স্কুলটি জানেই না!
আমার বিশ্বাস, যদি বঞ্চিত ছাত্রদের মধ্যে যোগ্যরা সেই প্রতিযোগিতায় নিজ উদ্যোগে অংশ নেয়, তাহলে তারাই অর্জন করে আনবে অধিক সফলতা। কিন্তু সেই সুযোগও হয়ত থাকছে না।
স্কুলটিকে বেরিয়ে আসতে হবে তার এই অপ্রীতিকর ও অনৈতিক পলিটিক্স থেকে। শুধু আইডিয়াল স্কুল নয়, সমাজের অধিকাংশ মানুষের ধারণা অনেকটা এমনই। এই ভুল ধারণা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। তাহলেই যোগ্যরা পাবে সুযোগ এবং পারবে জীবনে সফল হতে।
লেখক : শিক্ষার্থী, বিতার্কিক, আইডিয়াল স্কুল, বনশ্রী শাখা।