“আমার মেয়ের ছবি দেখবো, আমার মেয়ের ছবিগুলো বের করে দেন, দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।”

মামা আপনার মোবাইলটা দেন,
-কেন কী করবেন?

“আমার মেয়ের ছবি দেখবো, আমার মেয়ের ছবিগুলো বের করে দেন, দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।”

মোবাইলটা দিয়ে আড় চোখে তাকিয়ে থাকলাম। মোবাইলটা নিয়ে তার মেয়ের ছবির দিকে তাকাতেই দেখলাম আখতারার চোখ থেকে পানি ঝড়ছে, আর বারবার মোবাইল স্ক্রিণে তার মেয়ের ছবিটাকে চুমু খাচ্ছেন,মাঝে মাঝে বুকে জড়িয়ে ধরছেন মোবাইলটাকে।

দেখে মনে হবে যেন মোবাইলের গ্যালারী তে থাকা তার মেয়ের ফটোগ্রাফটা জীবন্ত হয়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এ যেন মা-মেয়ের সাক্ষাত আলিঙ্গন।

হু হু কান্নার শব্দটা বাড়ছে ক্রমশ। এরপর হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি। ছবিটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “কাঁদিস না আম্মু, আমি এই ঈদেই চলে আসবো, আর তো মোটে কয়েকটা দিন।”

এসময় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে, বাইরের মেঘটা ঘন কালো হয়ে বেশ গম্ভীর হয়ে আছে। এক্ষুণি বৃষ্টি শুরু হবে। দেখলাম, ব্যালকনিতে কাঁদছেন আখতারা। একসময় তুমুল বৃ্ষ্টি শুরু হলো। আখতারার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি এক হয়ে আমার মিরপুরের বাসায় এক অন্যরকম বিষাদময় পরিবেশ তখন।

আজ বিকেলে আম্মার সাথে কথা বলছিলাম।
“কেমন আছো, আম্মা”  জানতে চাইলেই আম্মা বলল,

“তোদেরকে ছাড়া আমি ভালো থাকতে পারি বাবু”

আখতারা একজন মা, তিনিও কীভাবে ভালো থাকবেন তার সন্তানকে ছেড়ে?

(কয়দিন হলো আখতারা আমার বাসার কাজে সাহায্য করার জন্য এসেছেন। বাড়ি ঠাঁকুরগাও এলাকায়। কয়েকদিন আগে দু’দিনের ছুটিতে বাড়ীতে গেলে উনার দাবী ছিল তাঁর মেয়েকে কাছে ডেকে আদর করতে হবে আর কয়েকটা ছবি তুলতে আনতে হবে।)


হাফিজুর রহমান রিয়েল    বাংলাদেশ পুলিশ


অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।