নিকাব-নামা

%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac

ইসলাম এক, আল্লাহ এক, কোরান এক, রসুল এক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা অন্ততঃ ৩ রকমের নারী-পোশাককে দাবী করেছেন ইসলামী বলে।

(ক) শুধু চোখ খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত করা;

(খ) চেহারা ও হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত করা;

(গ) সংযত পোশাক, শুধু নামাজ-আজান ইত্যাদি ও গুরুজনের সামনে মাথায় কাপড় দেয়া।

এটা ভারতবর্ষের ইসলাম প্রচারকেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যা আমরা নানী-দাদী সহ আবহমান বাংলায় ও ভারতবর্ষে দেখেছি।

পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে আয়াত আছে সূরা নূর (৩০, ৩১, ৬০) ও আহযাব (৫৩ ও ৫৯)। আয়াতগুলোতে পোশাকের সাথে জড়িত শব্দ দুটো হলো ‘বাইরের ঢিলেঢালা পোশাক’ ও ‘মাথা ঢাকবার স্কার্ফ’। হিজাব অর্থাৎ ‘আড়াল’ শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে পোশাক নিয়ে নয়, ‘আড়াল’ থেকে কথা বলা ইত্যাদির ওপরে (নবী-পত্নীদের সাথে ইত্যাদি)।

নিকাব-বিরোধী বিশেষজ্ঞরা এই দুই ধরনের আয়াতকে আলাদা রেখে ব্যাখ্যা করেছেন, আর নিকাবপন্থী বিশেষজ্ঞরা সবগুলো আয়াতকে একত্রিত করে ব্যাখ্যা করেছেন। বলাই বাহুল্য, এই দু’ভাবেই আয়াতগুলোর পরস্পরবিরোধী ব্যাখ্যা করা সম্ভব কিন্তু একই বিষয়ে দুই পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রভাব সমাজের জন্য বিপজ্জনক।

এবারে হাদিস। বায়হাকী-কানজুল উম্মাল, দারিমী, বাদিউস সানাই থেকে শুরু করে মানহুল জালীল, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, মাকতাবাতুল হক্কানিয়্যাহ, লামিউদ দারারী, যাদুল মাআদ, ইবনে হিব্বান, উমদাতুল কারী, শরহুল বুখারী, মাকতাবায়ে তাওফীকিয়া, আবু আওয়ানা, হাশীয়া লামিউদ দারারী, মাবসুতে সরখসী ইত্যাদি অসংখ্য বই আছে, মুখে যা-ই বলুন না কেন, অনেকের কাছে এগুলো পবিত্র কোরআনের সমতুল্য হিসেবেই গণ্য। ‘অমুকে বলিয়াছেন’ বললেই ওটা অভ্রান্ত তাদের কাছে!

আমরা তাই সহি বুখারী-মুসলিম-আবু দাউদ থেকে কিছু হাদিস দেখবো।

(ক) নিকাব -এর সমর্থনে

পোশাকের আয়াত নাজিল হলে নারীরা তাদের চেহারা ঢাকা শুরু করলো; তারা নবীজী’র সামনে চেহারা ঢাকতো না, অন্যান্যদের সামনে ঢাকতো। (বুখারী ৫-৩২ ও ৬-২৮২)

(খ) নিকাব -এর বিপক্ষে

  • পুরুষের প্রতি কোরানের “দৃষ্টি নীচে কর” (সূরা নূর, আয়াত ৩০) প্রমাণ করে নিকাব নারীর পোশাক নয়।
  • পোশাকের আয়াত নাজিল হলে নারীরা জানালার পর্দা কেটে মাথা ঢাকার স্কার্ফ তৈরী করলো। (আবু দাউদ ৪০৮৯)
  • এক সুন্দরী নারীর সৌন্দর্য্যে ‘আকৃষ্ট হইয়া’ সাহাবী আল ফাদেল তার দিকে তাকিয়ে থাকলে নবীজী ফাদেলের চিবুক ধরে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন, নারীকে মুখ ঢাকতে বললেন না। (বুখারী ৮-২৪৭)
  • নবীজী বললেন, মেয়েরা বড় হলে চেহারা ও হাত ছাড়া আর কিছু দেখানো উচিৎ নয়। (আবু দাউদ ৪০৯২) [এটা সূরা নূর এর আয়াত ৩১ -এর সাথে যায়, নারীরা যেন সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, “যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তাহা ব্যতীত”]
  • জাবির বিন আব্দুল্লাহ – নবীজী বলেছেন কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিয়ে করতে চায় তবে সে সেই নারীর সেটা দেখতে পারে যা তাকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। “আমি এক নারীকে বিয়ে করতে চাইলাম। আমি গোপনে তাকে দেখলাম…” (আবু দাউদ ২০৭৭)
  • হজ্ব এবং ওমরাতে নারীর চেহারা খোলা থাকলে অন্যত্র থাকবে না কেন?

(গ) নিকাব কী নবীজীর স্ত্রীদের জন্য?

আরেকটা তত্ত্ব দেন অনেকে – তা হলো নিকাব শুধু নবীজীর স্ত্রীদের জন্য। এটা সূরা আহযাব (আয়াত ৫৩) ও হাদিস দ্বারা সমর্থিত।

  • সাফিয়ার সাথে নবীজীর সাথে এক ভ্রমণে সাহাবী বলছেন, যদি নবীজী সফিয়াকে নিকাব পড়ান তাহলেই বোঝা যাবে সাফিয়া তাঁর বিয়ে করা স্ত্রী, নাহলে নয়। (বুখারী ৭-২২, মুসলিম ৮-৩৩২৮)
  • হজরত ওমর (রা.) রাসুল (সা.) -কে বলিলেন, ভালো-মন্দ সব ধরণের লোক তাঁহার বাড়ীতে আসে, তাই নবী-পত্নীদের উচিৎ নিকাব (আড়াল অর্থেও ধরা যেতে পারে) ব্যবহার করা। তখন আল্লাহ এইসব আয়াত নাজিল করিলেন। (বুখারী ১-১৪৮, ৬-১০ ও ৩১৩, ৮-২৫৭ ও মুসলিম ২৬-৫৩৯৭)
  • নবীজীর সময় অনেক যুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ, নবীজীর অনেক পরে জামাল যুদ্ধে বিবি আয়েশার (রা.) সেনাপতিত্ব ইত্যাদি প্রমাণ করে নারীরা কখনোই নিকাব পরেননি ও গৃহবন্দী ছিলেন না।

নিকাবের পক্ষের আলেম যারা, তাদের কথা তো আমরা হামেশাই শুনছি। এবারে দেখা যাক বিপক্ষের বিশেষজ্ঞদের।

মধ্যপ্রাচ্য, ইরান, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া সহ প্রায় সব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের প্রথিতযশা ইমামেরা নারীর ওপরে নিকাব চাপিয়ে দেননি। তাঁরাও তো ইমাম, তাঁরা কেন দেননি সেটা আমাদের নিকাব-পন্থীদের উচিৎ তাঁদের জিজ্ঞাসা করে খুঁজে বের করা। পাঠকের জ্ঞাতার্থে তাঁদের কিছু কথা তুলে ধরছি।

  • “এটা কি? খুলে ফেলো, খুলে ফেলো এখনি!! ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই, এটা সামাজিক প্রথা মাত্র”। একটি বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে এক ছাত্রীকে নিকাব পরা দেখে বকা দিয়েছিলেন মিসরের প্রাক্তন গ্র্যান্ড মুফতি ও আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন গ্র্যান্ড ইমাম ড. তানতাওয়াঈ। (সূত্র: হারেটয, সূত্র: বিবিসি)
  • পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ইসলামী সংগঠন কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিওলজি নিকাবকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ ঘোষণা করেছে। (সূত্র: Tribune)
  • আরবের সর্বোচ্চ সূরা কাউন্সিলে ১৫০ জন সদস্যের মধ্যে নারী ৩০ জন। টিভির খবরে দেখা গেছে, তাঁদের প্রায় কেউই চেহারা ঢাকেননি। (সূত্র: Islamic Pluralism)
  • সৌদি আরবের কমিশন ফর দি প্রমোশন অফ ভার্চু (হাইয়া অর্থাৎ শারিয়া-পুলিশ) বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আহমেদ বিন কাসিম আল ঘামিদী ঘোষণা করেছেন, মেয়েদের নিকাব/হিজাব পরার কোন দরকার নেই এবং তারা প্রসাধনীও ব্যবহার করতে পারবে। (সূত্র: মরক্কো ওয়ার্ল্ড নিউজ)
  • ডা. জাকির নায়েকও একথা সমর্থন করেছেন। (দেখুন ইউটিউব)
  • ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নেতা, মিসরের হাসান আল বান্নার নাতি ড: তারিক রামাদান। (দেখুন তার বক্তব্য)
  • আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডীন ড. আতিফ আল আওয়ামী (সূত্র: আল-শরফা)
  • শেখ আহমদ কুট্টি, সিনিয়র শিক্ষক ও ইসলামী বিশেষজ্ঞ। (সূত্র)

এ তো গেল দলিলের কচকচি। বাস্তবে নিকাব/হিজাব নারীর মুখের সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশার কপাট বন্ধ করে দেয়, যেমন- রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক উচ্চপদ, বিমান চালনা, ডাক্তার, সার্জন, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি ইত্যাদি। সার্ফিং, পর্বতারোহণ ইত্যাদি অনেক খেলাধুলাও বন্ধ করে দেয়। নারীর কি ওসব পেশা বা স্পোর্টস -এর ইচ্ছে করে না? নিশ্চয়ই করে। নারীর কি ওসব পেশা বা স্পোর্টস -এর অধিকার নেই? অবশ্যই আছে। যেখানে এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যেই প্রচণ্ড মতভেদ আছে সেখানে তাঁদের ওপরে নিকাব/হিজাবের ডান্ডাবাজী তাঁরা মানবেন কেন? দেশ-জাতির অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করা অপরিহার্য।

নিকাবের ইতিহাস

প্রাচীন বেশ কিছু রাজ্যে ওটা ছিল সম্ভ্রান্ত নারীর পোশাক। এমনকি অনেক রাজ্যে আইন করে সাধারণ নারীর ফেস-মাস্ক পরা নিষিদ্ধ ছিলো। অনেকে বলেন, ওটা থেকেই মুসলিম সাম্রাজ্যে প্রথমে সম্ভ্রান্ত নারীর নিকাব পরা শুরু হয়, পরে তা সাধারণ নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। উপনিবেশ থেকে মুক্ত হবার পরে এবং আজকাল পশ্চিমা দেশে ইমিগ্রেশন নেয়ার পরে ‘মুসলিম পরিচিতি’র একটা ঝোঁক দেখা দেয় অনেক মুসলিমের মধ্যে। নারীর ইচ্ছেতে হোক বা বাপ-ভাইদের চাপিয়ে দেয়া হোক, নিকাব সেই ঝোঁক পূরণ করে।

মুসলিম দেশ সহ অনেক দেশে/শহরে/অঞ্চলে নিকাব বা হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে

  • পুরো ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ চাদ রিপাবলিক -এ নিকাব বেআইনী।
  • ২০০৪ সালের নভেম্বরে পেশোয়ার হাই কোর্টের প্রধান বিচারক তারিক পারভেজ খান বিধান জারী করেন, নারী-আইনজীবিরা নিকাব পরে আসতে পাবেন না, কারণ তাতে তাঁকে চেনা যায় না।
  • এসব দেশের কিছু শহরে/প্রদেশে ফেস্ক-মাস্ক বেআইনী— (ক) হজ্ব ও ওমরার সময় সৌদি আরবে, (খ) চায়না’র উরুমকি শহর, (গ) স্পেনের বার্সিলোনা, রিউস ও ক্যাটালোনিয়া’র কয়েকটি শহর, (ঘ) সুইজারল্যান্ডের তিসিন’র ক্যান্টন শহর, (ঙ) রাশিয়ার স্যাভর্পুল শহরের সরকারী স্কুলে, (চ) ইতালীর নোভারা ও ভারালো সেশিয়া শহর।
  • কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের জন্যও নিকাব/হিজাব নিষিদ্ধ। (সূত্র)

নিকাবের উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে যৌন উশৃঙ্খলতা বন্ধ করা। উদ্দেশ্যটা ভালো, কারণ সারা দুনিয়াতেই যৌন উশৃঙ্খলতা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কিভাবে তা বন্ধ করা বা কমানো যায় তা নিয়ে সমাজ-বিশেষজ্ঞরা মাথা ঘামাচ্ছেন, উপায় এখনো বের করতে পারেননি। এখন অবাধ যৌনাচারে দুনিয়া সয়লাব। নিকাব বা স্কুল-কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিভক্তিই কি এর সমাধান? বাস্তব কি বলে? নারী-পুরুষের বিভক্তির কেন্দ্রভূমি সৌদি আরবের টিভিতে প্রচারিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৩% সৌদিরা শিশুকালে আত্মীয়, ভাই, শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত/ধর্ষিতা, রিয়াদ শহরে ৪৬% তরুণ-তরুণী সমকামী। অনেক খুঁজেও এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের কোনো প্রতিবাদ আমি পাইনি। (সূত্র)

আমরা ওদের চেয়ে লক্ষগুণ ভালো আছি। বরং সৌদি শারিয়া আইন এ ব্যাপারে ভয়াবহ জঘন্য। টিভিতে ইসলাম প্রচারকারী ইমাম তার ৫ বছরের কন্যাকে ধর্ষণ করে মেরেই ফেলেছে, ধরা পড়ে তা স্বীকারও করেছে। কিন্তু শারিয়া কোর্ট তাকে ছেড়ে দিয়েছে কিছুদিন জেল দিয়ে আর পঞ্চাশ হাজার ডলার জরিমানা করে, যে ডলার সে দেবে নিহতের মা অর্থাৎ তার স্ত্রীকে। এই হলো ইসলামের নামে শারিয়া আইনের তামাশা। (সূত্র)

যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতি ইত্যাদি দিয়ে এ দানবকে এতোদিন মোটামুটি বশে রেখেছিল দুনিয়ার মানুষ। কিন্তু এখন মহাপরাক্রান্ত প্রযুক্তি এসে ঐসব ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতিকে ভেঙ্গেচুরে ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ছেলে আর আফ্রিকার ট্যাংগানিকা’য় মেয়ে, অথবা ঢাকায় মেয়ে আর আমেরিকার ডাকার-এ ছেলে দু’জন বেডরুমে ঢুকে দরজা লক করে স্কাইপ ক্যামেরা চালিয়ে দিলেই হলো। মুখ ঢেকে, নারী-পুরুষের দূরত্ব বাড়িয়ে বা ফেসবুকে ওয়াজ মহফিলে লক্ষ হুংকার দিয়ে এটা ঠেকানো তো দূরের কথা কমানোও যাবে না। সুতরাং অন্য পথ ধরতে হবে। সেটা সমাজগুরু আর ধর্মগুরুদের দায়িত্ব।

ইচ্ছেমতো ধর্ম পালন করার অধিকার সবার আছে -এটা খোঁড়া যুক্তি। কোন হিন্দু যদি সতীদাহ করার উদ্যোগ নেয় কারণ ওটা ওদের ধর্মে আছে, তবে এই আপনিই তাকে বাধা দেবেন। কেন দেবেন? কারণ ধর্মীয় সংস্কৃতির বাহানায় কারো ওপর অত্যাচার করা যায় না, কারো অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় না। সেজন্যই অনার কিলিং, নারীর মুসলমানীর মতো ভয়ংকর প্রথাও চলতে পারে না, যতোই এর পেছনে ধর্ম বা সংস্কৃতির সমর্থন থাকুক।

পোশাক নির্ধারণ করা নারীর অধিকার। এই কথাটায় যুক্তি আছে। বছর বারো আগে আমিও এ দাবী করতাম ‘নিকাব নারীর অধিকার’। কিন্তু এখন অন্য চিন্তা করতে হচ্ছে, কারণ কোন অধিকারই শর্তহীন নয়। একজনের অধিকারের সীমা অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করা পর্যন্ত। ‘ফলেন পরিচিয়তে’ অর্থাৎ গাছের পরিচয় তার ফলে।

নিকাব ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে ক্রিমিন্যালদের রক্ষাকবচ। কিভাবে, চলুন দেখি কয়েকটা নমুনা।

  • শাদ -এর রাজধানী দেজামেনার এক মার্কেটে (বোরকা পরিহিত) নারীর ছদ্মবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইসলামপন্থী সশস্ত্র সংগঠন বোকো হারামের এক সদস্য ১৫ জনকে নিহত ও ৮০ জনকে আহত করে। কাউকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখলেই গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। (দৈনিক সংগ্রাম, ১৫ জুলাই ২০১৫)
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে চোর আটক করা হয়েছে, নিকাব থাকলে সে আটক হত না। (সূত্র: দৈনিক আমার দেশ)
  • সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ভারতের আজমগড়ে বোরখা পরে মন্দিরে গরুর মাংস ছুঁড়ে পালানোর সময় ধরা পড়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কর্মী (সূত্র: দৈনিক সংগ্রাম, ৩ অক্টোবর ২০১৫)
  • লণ্ডন বম্বিং (জুলাই ২১, ২০০৫) -এর নিকাবী বোমাবাজ পালিয়ে গেছে।
  • নিকাবী ডাকাতেরা লণ্ডনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ‘সেলফ্রিজ’ -এ ডাকাতি করে পালিয়ে গেছে জুন ২০১৩ সালে।
  • ইংল্যান্ডে পুরুষ খুনীরা নিকাবী-নারীর ছদ্মবেশে ফ্লোরেন্স ডিক্সি নামের এক মহিলাকে হত্যার চেষ্টা করে।
  • ইংল্যাণ্ডে নারী-পুলিশ শ্যারন বেশেনিভিস্কি’র হত্যাকারী মুস্তাফ জুমা নিকাব পরে পালিয়ে গেছে মনে করা হয়।
  • পাকিস্তানের রেড-মস্ক -এর কুখ্যাত মোল্লা ফয়জুল্লা শারিয়া প্রতিষ্ঠার দাবীতে তার বাহিনী নিয়ে মহা তুলকালাম করেছিল, আত্মঘাতী বোমা দিয়ে সরকার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিল। সেনাবাহিনীর গুঁতো খেয়ে সে নিকাব-বোরখা পরে পালাবার সময় ধরা পরে।

ক্রিমিন্যালদের রক্ষাকবচ সব হিসেবেই ধ্বংস করা দরকার।

এর পরেই কথা আসে, ইসলামে এক সময়ের হালাল কি অন্য সময় হারাম হতে পারে? জামাতের নারী-নেতৃত্ব মেনে নেয়া চরম ঠকবাজী, ওটা বাদ। কিন্তু “পরিস্থিতির পরিবর্তনে” নবীজীর সময়েই পবিত্র কোরআন ও নবীজীর নির্দেশ বদলের অনেক উদাহরণ দেয়া আছে আমার বই “শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি”-তে।

আমার কথা বাদ দিয়ে দেখে নিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়া-সমর্থক ও বিশেষজ্ঞ ড. হাশিম কামালী’র ‘প্রিন্সিপলস অব ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স’, অনেক উদাহরণ পেয়ে যাবেন।

আজ আপনি যদি রাষ্ট্র প্রধান হন, ফিরিয়ে আনবেন বন্দিনী ধর্ষণ? অমুসলিমদের ওপরে জিজিয়া ট্যাক্স? চালু করবেন দাসপ্রথা যেখানে হাট-বাজারে আলু-পটলের মতো মানুষ বিক্রি হবে, কেনা যাবে? করবেন না। কারণ পরিস্থিতি পালটে গেছে। নিকাব এখন অপরাধীকে রক্ষা করার হাতিয়ার। অপরাধ দমনের জন্য, মানব কল্যাণের জন্যই ওটা নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ। কথাটা মানতে বাধ্য হবেন যখন নিকাবধারীরা আপনারই দোকানে চুরি করবে, আপনারই বাড়ীতে ডাকাতি করবে, আপনারই প্রিয়জনকে হত্যা করবে। এটা ঠেকাতে চান না আপনারা?


হাসান মাহমুদ ।।  আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী আইন (শরীয়াহ) বিশেষজ্ঞ। ওয়ার্ল্ড মুসলিম কংগ্রেস, মুসলিম কানাডিয়ান কংগ্রেস, এ্যামেরিকান ইসলামিক লিডারশীপ কোয়ালিশন, মুসলিম ফেসিং টুমরো, ফ্রি মুসলিম কোয়ালিশন সহ বহু সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত বই ‘শরীয়া কী বলে আমরা কী করি‘।